অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারঃ আপনার শিশুটির মধ্যে হয়ত লুকিয়ে আছে অসাধারণ কোনো প্রতিভা

Aeshop

অটিজম প্রকৃতপক্ষে কোনো রোগ নয়, এটি মস্তিষ্কের স্নায়বিক বিকাশের একটি অজানা সমস্যা। এই প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে এখনও কোনো সুস্পষ্ট গবেষণা নেই। চিকিৎসা পদ্ধতিও শতভাগ নিশ্চিত কিছু নয়।
অটিস্টিক শিশু অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। নিজের কাজ নিজে করতে পারে না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারে না।

অটিজমের সূচনা মস্তিষ্কের প্রাথমিক বিকাশকালীন সময় থেকে হতে পারে, আবার স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে থাকা একটি শিশুও দুই থেকে তিন বছর বয়সে গিয়ে রিটার্ডেড অবস্থায় চলে যেতে পারে । অর্থাৎ তার বিকাশ থেমে যেতে পারে। তবে সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে শিশুদের মাঝে অটিজমের লক্ষণ স্পষ্ট হয়।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার
শুধু অটিজম না বলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অটিজম স্পেকট্রাম টার্মটি বেশি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, কতগুলো সমন্নিত মেধাবিকাশজনিত সমস্যার সমন্নিত রূপ হচ্ছে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার। আবার স্নায়ুতন্ত্রের ত্রুটির কারণেও এ ধরনের শিশুর জন্ম হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকে, বা ডাউন সিনড্রোম থাকে, অনেক সময় এ ধরনের শিশুদের মুখ থেকে লালা পড়তে দেখা যায়। মস্তিষ্কের আকার স্বাভাবিক আকারের চেয়ে অনেক ছোট বা বড় হয়। হাতে পায়ে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার মূলত একটি মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা। এ ধরনের শিশুদের মধ্যে সাধারণত কোনো শারিরীক সমস্যা থাকে না। একজন অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার শিশুর মধ্যে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো বেশি পরিলক্ষিত হয়।

১. কথা বলায় সমস্যা। অনেক শিশু একেবারেই কথা বলতে পারে না। দুএকটি শব্দ বলতে পারলেও বাক্য গঠন করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে কথা শেখার পরও থেমে যেতে পারে। রিটার্ডেড শিশুদের মধ্যে এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। আবার অনেক শিশু কথা বলতে পারলেও তাদের মধ্যে অন্য সমস্যাগুলো দেখা যায়। কারও কারও মধ্যে মৃদু অটিজম থাকে, তাদের মধ্যে সকল সমস্যা না থাকলেও দুএকটি সমস্যা থাকে।
২. যোগাযোগের অক্ষমতা: এ ধরনের শিশুরা সামাজিক যোগাযোগগুলো করতে পারে না। শ্রবণশক্তি থাকা সত্ত্বেও এবং কথা শুনতে পেলেও সে অনুযায়ী সাড়া দিতে পারে না।
৩. নিজের কাজ নিজে করতে না পারা: এরা নিজের কাজ নিজে করতে পারে না। জুতো জামা পরার মতো সাধারণ কাজগুলোও এ ধরনের শিশুরা নিজে করতে পারে না। এজন্যও তাদের ট্রেনিং দেওয়া লাগে।
৪. হাইপারঅ্যাকটিভ: অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশুই খুব হাইপারঅ্যাকটিভ হয়। তাদের শান্ত করতে বিভিন্ন উপায় কাজে লাগানো হয়। অনেকের ক্ষেত্রে মিউজিক কাজে লাগে। মিউজিক শুনে শান্ত হয়।
৫. অনেক শিশুর মধ্যে এগ্রেসন থাকে। তারা হঠাৎ রেগে গিয়ে ভাংচুর করে। তাদের জন্য বিভিন্ন থেরাপিউটিক চিকিৎসা রয়েছে।

অনেক নেতিবাচক বিষয়ের পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে কোনো বিশেষ গুণ থাকতে পারে। ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে সে গুণটি এমন লেবেলে চলে যেতে পারে যেটি স্বাভাবিক শিশুদের ক্ষেত্রে অকল্পনিয়। যেমনঃ

১. কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞানের বা গুণের অধিকারী। বিজ্ঞানী, লেখক, শিল্পী, খেলোয়াড় —এ ধরনের মানুষের মধ্যে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার থাকতে পারে। অন্যভাবে বললে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুরা এ ধরনের গুণের অধিকারী হতে পারে।
২. খুব সতেজ স্মৃতিশক্তিঃ অনেক অটিস্টিক শিশুদের স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর হয়। একবার কোথাও গেলে বা কারও সাথে পরিচিত হলে মনে রাখতে পারে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাদের এ গুণটি বিশেষ কাজে লাগে।
৩. খুব পদ্ধতি মেনে চলে এবং গোছানোঃ অনেক অটিস্টিক শিশু যেমন খুব অগোছালো এবং এলোমেলো হয়, বিপরীতে অনেক অটিস্টিক শিশু রয়েছে যারা খুব গোছানো হয়। তবে সাধারণত অটিস্টিক শিশুরা গুছিয়ে কাজ করতে পারে না। বিশেষভাবে ট্রেনিং দিয়ে এদের একটি রুটিনের মধ্যে আনতে হয়। এরা রুটিন কাজে অভ্যস্ত হয়।

৪. বিমূর্ত বিষয় বোঝার ক্ষমতাঃ সাধারণ মানুষ যা সহজে বুঝতে পারে না এ ধরনের শিশুরা বা যখন বয়স বাড়ে এদের পারসেপশন পাওয়ার খুব বেশি হয়।

৫. যুক্তিবাদী হয়ে সমস্যার সমাধানঃ অনেক অটিস্টিক শিশু গণিতে বা যুক্তিবুদ্ধিতে খুব ভালো হয়। অনেক শিশুর মধ্যে খুব ছোটবেলা থেকে ম্যাথম্যাটিক্যাল স্কিল দেখা যায়।

চিকিৎসাঃ অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার শিশুদের জন্য ধারবাঁধা কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। ট্রেনিং এবং বিভিন্ন থেরাপিউটিক চিকিৎসাই এক্ষেত্রে কার্যকরী। অটিজম বুঝতে পারার পর থেকে এদের একটি রুটিনের মধ্যে রেখে স্কিল বেসড্ ট্রেনিং এবং স্পিচ থেরাপি সহ বিভিন্ন ধরনের থেরাপি দিতে পারলে উন্নতি হয়। তবে এজন্য পিতা-মাতার অনৈক ধৈর্য থাকতে হয় এবং সচেতন হতে হয়।

অটিস্টিক শিশুদের খাবার দাবারে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দুধ এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার, লাল মাংস, এবং গ্লুটসমৃদ্ধ খাবার এ ধরনের শিশুদের না দেওয়া ভালো। আটা ময়দায় গ্লুটন থাকে, তাই চালের খাবার খাওয়াতে হবে। অটিজম বুঝতে পারার পরে তিন বছর বয়স থেকে ডাক্তারের পরামর্শ মতো খাবারের নিয়ম মেনে চলতে হবে।