ভয়ঙ্করভাবে আশা পূরণ হয়নি। ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা প্রত্যেকে চারপাশে যে বলয় নিয়ে ঘুরছি তারা আমরা পরস্পরের প্রতি কতটা সহমর্মী অাসলে, দূরের মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী না হয় এক্ষেত্রে বাদই দিলাম?
আশে পাশে আমাদের কত বন্ধু বর্তমানে, তাই না? আত্মীয়-স্বজন তো জন্মসূত্রে পাওয়া, বন্ধু আমরা পাই জীবনসূত্রে, তাই কোনোটার মূল্য কম নয়। কিন্তু বর্তমানে মাঝে মাঝে সন্দেহ জাগে, আসলে আমরা কতটা বন্ধু বা আত্মীয় হতে পারছি পরস্পরের? নাকি শুধু হিংসা আর প্রতিযোগিতা করছি মনে মনে, কখনো কখনো কারো কারো ক্ষেত্রে সেটি প্রকাশ পেয়ে স্থুলও হচ্ছে। শিক্ষিত বলে বেশিরভাগ আমরা তা চেপে রাখতে পারছি মাত্র।
ফলোআপ নিউজ বিষয়টির উপর গত এক মাসে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। পত্রিকা সংশ্লিষ্ট তিনজন সিদ্ধান্ত নেয়, তারা বন্ধু বা শুভাখাঙ্কী বলে বিবেচিত দশ জনের কাছে এক হাজার করে টাকা চাইবে। যেহেতু এক হাজার টাকা দেবার সামার্থ তাদের খুব ভালোভাবে আছে, এবং একইসাথে তারা বন্ধুও, তাই এক্ষেত্রে নিঃসংকোচে তারা টাকাটা দেবে। কোনো কৈফিয়ত চাইবে না। তিনজনে তাদের বলয় থেকে মোট ত্রিশ জনের কাছে টাকা চেয়েছে।
পাশাপাশি তারা বন্ধু নয়, এবং স্বল্প পরিচিত এরকম সমসংখ্যাক মানুষের কাছেও একই পরিমাণ টাকা চেয়েছে।
পাঠক ধারণা করতে পারছেন, কী হয়েছে? ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটেছে। এই এক হাজার টাকার জন্য ফোন ধরছে না -এমন ব্যাপার আছে, কেউ পরে দেবে বলেছে, কেউ বিষয়টিকে খুব হালকা চালে নিয়েছে। টাকা দিয়েছে প্রথম ত্রিশ জনের মধ্যে মাত্র সাতজনে। এর মধ্যে দুইজনে আবার ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, কেন সে টাকাটা দিচ্ছে, টাকাটা দিয়ে কী হবে, ইত্যাদি।
আমরা বলতে চাই, টাকাটা দিয়ে আমরা ফূর্তি করব, তাও কি বন্ধু হিসেবে আপনার পূরণ করার কথা নয়? রোজ তো চাই না, তাই না? যদিও সিদ্ধান্ত ছিল, টাকাটা আমরা আবার ফেরৎ দিয়ে দেব। এবং আমাদের আশা ছিল ত্রিশ জনই টাকাটা দিবে। ভয়ঙ্করভাবে আশা পূরণ হয়নি। ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা প্রত্যেকে চারপাশে যে বলয় নিয়ে ঘুরছি তারা আমরা পরস্পরের প্রতি কতটা সহমর্মী অাসলে, দূরের মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী না হয় এক্ষেত্রে বাদই দিলাম?
তবে দ্বিতীয় ত্রিশজনের ক্ষেত্রে আশাতীত ফল এসেছে। বন্ধু হিসেবে বিবেচিত নয়, এবং কম পরিচিত হলেও এই ত্রিশজনের মধ্যে বাইশ জনেই টাকাটা দিয়েছে! পাঠক, কেন এমন হল? বন্ধু এবং স্বজনরা টাকাটা সামার্থ থাকা সত্ত্বেও দিল না, কিন্তু স্বল্প পরিচিতরা দিল যাদের কাছে টাকা চাওয়াই যায় না আসলে।
এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের একটি ব্যাখ্যা আছে। আশেপাশে যাদেরকে আমরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করি, তারা সাধারণত সমপর্যায়ের বা কাছাকাছি পর্যায়ের হয়, এদের মধ্যে সহযোগিতা করার চেয়ে প্রতিযোগিতার মনোভাব বেশি থাকার সম্ভাবনা থাকে। বিপদে পড়লে এরা এগিয়ে আসবে -এটা যেমন সত্য, এবং তার চেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, আপনার উপরে ওঠার সিঁড়িটা গড়ে দেওয়ার চেয়ে তারা ভাঙতেই বেশি পছন্দ করে।
যদি এমন হত যে টাকা চাওয়া হয়েছে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে গিয়ে, সেক্ষত্রে হয়ত সবাই টাকাটা দিত। কারণ, বন্ধু এবং স্বজনরা চায় অাপনি বেঁচে-বর্তে থাকেন, তবে আপনাকে তাদের চেয়ে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত দেখতে বা আপনাকে বড় কিছু করতে দিতে তারা চায় না। বরং স্বল্প পরিচিতরা অতটা এখনো ভেবে উঠতে পারেনি, তারা আপনার সম্পর্কে খুব বেশি জানেও না, তাই মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট থেকে তারা টাকাটা দিয়েছে। কিন্তু বন্ধুরা টাকাটা দেয়নি সচেতনতা থেকে। তবে এটা সত্য যে, সচেতনতার মাত্রা নিয়ে এক্ষেত্রে কথা আছে, পুরোপুরি সচেতন হলে ওরা টাকাটা দিত, কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিবেচনার চেয়ে ওরা শুধু প্রতিযোগিতা, হিংসা এবং কর্তৃত্বের জায়গাটিতে গিয়ে সচেতন হয়েছে।