নিচের বৈশিষ্টগুলি আপনার মধ্যে আছে কি?

follow-upnews
0 0

জীবনে সফল হওয়ার কোনো মূলমন্ত্র নেই। এবং সফলতাই শেষ কথা নয়ও। মূল্যবোধ ঠিক রেখে সমাজে নিজের একটা অবস্থান খুঁজে নেয়াটাই হচ্ছে মূল কথা। এর জন্য নিজের মাঝে কিছু জিনিস ধারণ করতে হয় এবং সেগুলো জীবনে চলার পথে চর্চা করতে হয়। ফলোআপ নিউজ এমন কিছু গুণের সন্ধান করেছে যা আপনার মধ্যে থাকলে আদর্শ মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।

১. শোনার ক্ষমতা: আপনাকে শুনতে হবে। যেকোনো পর্যায়ের লোকের কথা আপনাকে শুনতে হবে।

২. থামানোর ক্ষমতা: শুধু শুনলে হবে না, যৌক্তিকভাবে আপনাকে থামাতেও জানতে হবে। অল্প কথায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আপনার কথাটিও বলতে হবে। ভুল বললেও কাউকে আক্রমণ করে কথা বলার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

৩. ক্ষুদ্র বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা: সবকিছু ধরা যাবে না, অনেক কিছু এড়িয়ে যেতে হবে। সবসময় মানুষকে হারিয়ে দেয়ার মানসিকতা আপনাকে ভোগাবে। যেমন, বন্ধুকে আড্ডায় হারানো, ঘরে বউ বা স্বামীকে তর্কে হারানো -এরকম।

৪. আত্মবিশ্বাসী: গ্রহণ করার মানসিকতা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে। তাই বলে সবকিছু গ্রহণ করলেও হবে না। তবে বাস্তবতা মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। হা-হুতাশ করা যাবে না।

৫. স্বচ্ছতা: কথায় কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। ব্যর্থতা শুধু লুকানোর চেয়ে, প্রয়োজনে তা বলতেও হবে, ভুল হলে স্বীকার করতে হবে। এটা ঘরে-বাইরে সবখানে সত্য। স্ত্রী-সন্তান সবার কাছে স্বচ্ছ থাকার প্রশ্ন আছে।

৬. সততা: সততা বিরল জিনিস বলেই এই জিনিসের দাম খুব বেশি। লোকে যখন আপনাকে একজন সৎ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করবে, তখন আপনার সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এমনকি একজন অসৎ মানুষের কাছেও আপনাকে সৎ থাকতে হবে। কারণ, সে অবাক হবে এবং আপনার প্রশংসা করবে অন্যের কাছে, যা সে হতে পারেনি তা আপনি হতে পেরেছেন বলে। খারাপ মানুষ কিন্তু ভালো মানুষের প্রশংসা করে, ভালো মানুষ ভালো মানুষের প্রশংসা না করলেও।

৭. শিখতে হবে: শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। নিচুতলা থেকে উপরতলা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার কাছ থেকে শিখতে হবে। মনটা খোলা রাখতে হবে যাতে আবর্জনা বের হয়ে যেতে পারে এবং সারবস্তু ঢুকতে পারে। একেই বলে মুক্তমনা।

৮. আবেগ থাকতে হবে: রোবট হলে হবে না। তাহলে কার জন্য আপনি কাজ করছেন? মানুষের অনুভূতির মূল্য দিতে হবে। তাই বলে সবকিছুতে আবেগ দেখাতে যাওয়া বোকামী। নিজের কথা হর-হামেশা বলাও বোকামী। নিজের দুঃখ হুট করে কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না। আবেগ বলতে, অন্যের জন্য আবেগী হতে হবে। নিজের বেলায় একটু শক্ত থাকাই ভালো।

৯. সৃষ্টিশীল: সৃষ্টিশীলতা শুধু জন্মগত বিষয় -এটা অনেকের ভুল ধারণা। সৃষ্টিশীলতা জন্য আপনাকে গভীরভাবে দেখতে হবে, ভাবতে হবে। নকল করার মানসিকতার কারণে মানুষ প্রধানত সৃষ্টিশীল হতে পারে না। নতুন কিছু করার আগ্রহ আপনার থাকতে হবে।

১০. ধৈর্য: এটা তো সবখানে সব সময় শুনতে হয়, বাসের মধ্যেও লেখা থাকে। সমস্যা হচ্ছে এই ধৈর্যটাই মানুষের থাকে না। হঠাৎ রেগে যাওয়া যাবে না, আসলে কখনই রাগা উচিৎ নয়। সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখান থেকে সরে যাওয়া ভালো। রাতারাতি সফল হওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে। পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। ব্যর্থতা মেনে নিয়ে আবার শুরু করার মানসিকতা থাকতে হবে। বুঝতে হবে, এভাবেই জীবনে অগ্রসর হওয়া যায়। এটাই বাস্তবতা।

১১. সহনশীলতা: ইংরেজিতে এটাকে বলে Stoicism। অর্থাৎ, কাতর হওয়া যাবে না।

১২. স্থিরতা: সিদ্ধান্ত বারে বারে বদল করতে হলে তার নেতিবাচক প্রভাব নিজের এবং আশেপাশের মানুষের ওপর পরে। তাই একটু ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

১৩. অকপটতা: জড়তা এবং অস্পষ্টতা, সন্দেহ উদ্রেককারী আচরণ মানুষ পছন্দ করে না। তাই কথায় এবং কাজে অকপট থাকতে হবে। যেমন, কারো সাথে দেখা হলে অকপটে এগিয়ে যেতে হবে। যে আগে যাবে তার গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু বেড়ে যাবে।

১৪. খোলামন: ভাবলেন, দারোয়ানের সাথে কথা বলার কী আছে। এটা না করে আপনি মালিক হলেও গেট থেকে ঢোকার সময় দারোয়ানের সাথে কুশল বিনিময় করার মানসিকতা থাকতে হবে। কেউ কিছু বললেই মাইন্ড করা যাবে না। মানুষকে সব সময় সাহায্য-সহযোগিতা করতে না পারলেও মানুষের কথা শোনার মানসিকতা থাকতে হবে।

১৫. কথা রাখতে হবে: কথা রাখতে না পারলে কারণ জানাতে হবে। ফোন বন্ধ করে বসে থাকা বা ফোন না ধরা খুবই খারাপ। এই অভ্যাস আপনাকে পিছিয়ে দেবে। সমস্যার কথা খুলে বলতে হবে। আপনার সমস্যার জন্য অন্যে বিপদে পড়লে বা কাউকে বিপদে ফেললে দুঃখ প্রকাশ করার মানসিকতা থাকতে হবে। পালিয়ে বেড়ানো বা মিথ্যা কিছু বলে বিভ্রান্ত করা ভালো না। মানুষ এগুলো বুঝতে পারে।

১৬. ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে হবে: বাতাসেরও কান আছে। তাই গোপনেও আপনি এমন কিছু করতে পারেন না, যা মানুষের সামনে আপনি করতে চান না। মানুষ তা জেনে যাবেই।

১৭. ইতিবাচক মানসিকতা থাকতে হবে: শোনার এবং বোঝার আগেই ‘না না’ করার অভ্যেস পরিহার করতে হবে।

১৮. দয়ালু হতে হবে: মানুষের জন্য, শুধু মানুষের জন্য নয়, পশু-পাখি গাছ-পালার জন্যও আপনার দরদ থাকতে হবে। কাজে-কর্মে তার পরিচয় থাকতে হবে। তাহলে মানুষ আপনাকে ধরে উপরে তুলে দেবে।

১৯. সাহসী হতে হবে: কারো সাথে কথা বলতে, দেখা করতে ভয় পাওয়া যাবে না। বুঝতে হবে, মানুষ চায় তার কাছে মানুষ যাক। সত্য কথা সাহস করে বলতে হবে। তবে স্থান-কাল বুঝতেও হবে। নতুন কিছুর সম্মুখিন হতে ভয় পাওয়া যাবে না।

২০. বিরামহীন হতে হবে: অবিরাম ভাবনা এবং কাজের মধ্যে থাকতে হবে। বিরামহীন কাজ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তাই বলে কাজের অজুহাতে পারিবারিক এবং সামাজিক দায়িত্বগুলি ভুলে যাওয়া চলবে না। একটা সমন্বয় করতে হবে। কাজের মাঝখানে একটু কথা বলতে হলে বিরক্ত হওয়ার মানসিকতা ভালো নয়। সেরকম কাজ হলে ফোন বন্ধ করে, ঘরে দরজা দিয়েই তা করা উচিৎ।

আশা করি উপরের বিষয়গুলি মাথায় রাখলে আপনি সহজে অগ্রসর হতে পারবেন। এবং সমাজে শুধু একজন সফল মানুষ নয়, একজন মূল্যবান মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হবেন। সমাজের সফল মানুষ অনেক আছে, কিন্তু আমরা মূল্য দিই আসলে কয় জনকে? একটু মূল্য পাবার আশায় মানুষ কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে এ দ্বারে ও দ্বারে ঘোরে, দেখেছেন না? শুরুতে জীবন-চর্চা সঠিক হলে ওরকম করতে হবে না।


দিব্যেন্দু দ্বীপ

Next Post

বন্ধুরা হেরে গিয়েছে, জিতেছে দূরের মানুষ

ভয়ঙ্করভাবে আশা পূরণ হয়নি। ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, আমরা প্রত্যেকে চারপাশে যে বলয় নিয়ে ঘুরছি তারা আমরা পরস্পরের প্রতি কতটা সহমর্মী অাসলে, দূরের মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী না হয় এক্ষেত্রে বাদই দিলাম? আশে পাশে আমাদের কত বন্ধু বর্তমানে, তাই না? আত্মীয়-স্বজন তো জন্মসূত্রে পাওয়া, বন্ধু আমরা পাই জীবনসূত্রে, তাই কোনোটার মূল্য কম […]