বেশী আম খেলে কি কোনো সমস্যা হয়?

আম

যেকোনো কিছুই বেশি খাওয়া খারাপ। একই ধরনের খাবার এক নাগাড়ে বেশি খাওয়ার অর্থ হচ্ছে— আপনার শরীর বারে বারে একই ধরনের খাদ্য উপাদান পাচ্ছে এবং একইসাথে অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান পাচ্ছে না। এজন্য খাবার খেতে হবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। একই ধরনের ফল বেশি খাওয়া যাবে না, একবারে বেশি খাওয়া যাবে না।

আমের সিজনে অনেকের বেশি আম খাওয়া পড়ে, অনেকের আবার বাড়িতেই আম গাছ থাকে তাদেরও বেশি আম খাওয়া পড়ে। আম এমন একটি ফল যেটিতে অনেক ধরনের ভিটামিনের (বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি এবং কে) পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ কার্বহাইড্রেট এবং ফ্রুকটোজ রয়েছে। ফলে যাদের ডায়েবেটিক এবং স্থুলতা রয়েছে তাদের আম খাওয়ার বিষয়ে সাবধান হতে হবে। তবে আমের গ্লাইসমিক ইনডেক্স কম (৫১), অনেক বেশি ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, ফলে আমে থাকা ফ্রুকটোজ এবং কার্বহাইড্রেট যেমন ডায়েবেটিক বাড়ায় আবার কিছু উপাদান ডায়েবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহযোগিতা করে। এ কারণে আপনার ডায়েবেটিক থাকা সত্ত্বেও খুব ইচ্ছে করলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে আম খেতেই পারেন।

বেশি আম খাওয়ার আরও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন— আমে থাকা ইউরোসিল নামক একটি উপাদান অনেকের জন্যে চর্মে র‌্যাশ তৈরি করতে পারে। যাদের ফাইবার হজমে সমস্যা রয়েছে, তাদের বেশি আম খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে, যদিও আম সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়। পাকা আম একটু বেশি কখনও খেলেও কাঁচা আম কখনই বেশি খাওয়া যাবে না। তবে ডায়েবেটিক রোগীরা পাকা আম খুব কম খেলেও, বা না খেতে চাইলেও কাঁচা আম কিছুটা খেতে পারেন।

এছাড়া আমে বেশি রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ফোলেট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কোলিন; রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্টের আধিক্য। এজন্য আম নি:সন্দেহে একটি অসাধারণ ফল। যাদের শরীর হালকা-পাতলা এবং দুর্বলতা রয়েছে, তারা আম একটু বেশি খেলেও ক্ষতি নেই। আম থেকে প্রচুর শক্তি পাওয়া যাবে।

প্রচুর ভিটামিন এ থাকায় আম দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আমে থাকা বিশেষ এনজাইম শরীরের প্রোটিন গ্রহণ সহজ করে, ফলে যাদের প্রোটিন গ্রহণে সমস্যা রয়েছে, আম তাদের জন্য একটি উপকারী ফল। আমে প্রচুর সুক্ষ্ম তন্তু রয়েছে, ফলে আম পাকস্থলির কার্যকারিতা বাড়িয়ে হজমে সাহায্য করে।

আমে থাকা ভিটামিন সি, ফাইবার এবং পেকটিন শরীরের কোলেস্টেরল লেবেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। আম প্রচুর ভিটামিন ই সমৃদ্ধ একটি ফল, ফলে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

আমে প্রচুর পানি থাকে, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট ঠিক রাখে। এ কারণে গরমে আম খেলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়।

আমে থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, এবং ক্যারোটিনয়েডস্ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যাদের রক্ত স্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও আম একটি অসাধারণ ফল, কারণ, আমে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে।

মনে রাখতে হবে যে, আম কেটে খাওয়াই ভালো, জুস করে খাওয়া ভালো নয়। বাজারে যে জুসগুলো পাওয়া যায় সেগুলো তো নয়ই। যেহেতু অভিযোগ রয়েছে— অনেক আম কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয়, বা উজ্জ্বল করা হয়, তাই আম খাওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে— প্রচুর পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় আম কিন্তু যৌন উত্তেজনা বাড়ায়! তাই এ দিক থেকেও আপনার প্রয়োজন বুঝে আম খান। বেশি আম খেলে হঠাৎ করে আপনার মধ্যে প্রেমভাবও জেগে উঠতে পারে, যখন কাছে এমন কোনো ইচ্ছুক সঙ্গী নেই তখন কী করবেন— বেশি আম খাওয়ার সময় এটাও মাথায় রাখার বিষয় বৈকি। 

মোদ্দা কথা কোনো খাবারই বেশি নয়, একদিনে বেশি নয়। তবে উপরের কথাগুলো মাথায় রেখে প্রতিদিন দু’চারটা (?) আম খাওয়া যেতেই পারে। দু’চারটা বললে আবার অনেকে দু’চারটা ফজলি আম খেয়ে ফেলবেন না যেন! আবার একসাথেও দু’চারটা নয়। আম বেশি খেতে গিয়ে অন্য ফল যেন একেবারে বাদ না পড়ে— বিশেষ করে কলা, ডাব, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম এবং আমড়া। সব ফলই কিছু না কিছু খাবেন। আমের সিজনে আমটা বুঝেশুনে একটু বেশী খান, ক্ষতি নেই।