জীবনযাপন-৩ : ‘তবুও’ ‘কিন্তু’ এসব শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করুন

ধরুণ, মাওয়া ঘাটে লঞ্চে আপনি পার হচ্ছেন। লঞ্চের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার আঙ্গুলের দামী একটি সোনার আংটি রয়েছে। আংটিটা খুলে আঙ্গুল বদল করতে গিয়ে বেখেয়ালে সেটি টুপ করে নদীতে পড়ে গেল। কী করবেন এখন আপনি?

ক. নদীতে ঝাপ দিয়ে পড়বেন?

খ. চিৎকার করে লঞ্চের সবাইকে জানাবেন?

গ. চালককে লঞ্চ থামাতে বলবেন?

ঘ. কিছুই করার নেই বলে মেনে নেবেন?

কী করবেন আপনি?

অনেকেই অনেক কিছু করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আসলে কিছুই করার নেই। পুকুরে আংটি পড়লে তাইতো সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না, তাহলে নদীতে পড়লে কী করার আছে? কিছু করার নেই বলে মেনে নিতে হবে। এরপর আপনি যা যা, যত চেষ্টা বা দুঃখ করবেন —সবই লসের খাতায় জমা হবে। এক্ষেত্রে অনেকেই যেটা করবে— “তবুও একটু চেষ্টা করে দেখি” এতে কি আসলে কোনো কাজ হবে? হবে না। বরং একটা মুচকি হাসি দিয়ে ভুলে যান।

index

এ সম্পর্কে একটি গল্প বলি–

অফিসের বয়কে মোবাইলে ৩০০টাকা পাঠাতে বললাম। ওকে একটি ছোট কাগজে নাম্বারটা লিখে দিয়ে টাকা দিলাম। ও টাকা পাঠিয়ে আসল, কিন্তু টাকা আসেনি। ওকে খোঁজ নিতে বললাম, কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় ও খোঁজ নিতেও পারল না। বাসায় ফেরার পথে নিজে গেলাম, দেখি, দোকান বন্ধ। এভাবে তিনদিন পরে দোকান খুঁজে পাওয়া গেল— বলল, টাকা সে ঠিকই পাঠিয়েছে! টাকা পাঠাল, কিন্তু টাকা আসল না, কেন?

ক. কোম্পানি টাকাটা পাঠায়নি?

খ. টাকা ভুল নম্বরে গিয়েছে?

গ. টাকা এসেছে, কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি?

ঘ. বড় কোনো ঘাপলা আছে, অর্থাৎ সে টাকাটা পাঠায়নি?

আপনার উত্তর কী হবে?

কোনটি হওয়ার সম্ভাবনা আসলে সর্বাধিক? টাকাটা ভুল নম্বরে গিয়েছে —এটিই হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। হয়েছিলও তাই। এথন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে ভুল নম্বরে গেল?

ক. আমি নম্বর ভুল লিখে দিয়েছি?

খ. দোকানদার নম্বর লিখতে ভুল করেছে?

যেহেতু আমার নিজের নম্বর, তাই আমি নম্বর লিখতে ভুল করার সম্ভাবনা খুবই কম। ভুলটা সম্ভবত তারই হয়েছে। এখন ভুলটা যে তারই হয়েছে, সেটি প্রমাণ করতে হলে, নম্বর লেখা ঐ কাগজটা লাগবে। ঐ কাগজটা তো আর পাওয়া যাবে না।

এখন যুক্তি কী বলে—

লোকটা কি দায় মেনে নেবে?

নেবে না। কারণ, নম্বর লিখতে তারই ভুল করেছে, এটি প্রমাণ করা আদৌ সম্ভব নয়।

“তারপরেও যদি টাকাটা ফেরৎ পাওয়া যায়, তাই একটু যাই।”

এটা ভুল করলেন। এবং ক্ষতির পরিমাণ বাড়ালেন। টাকাটা অবশ্যই ফেরৎ পাওয়া যাবে না বুঝেও আপনি ‘কিন্তু’ ‘কিন্তু’ করবেন কেন? এরচেয়ে বরং বিষয়টি মেনে নিয়ে ক্ষতির পরিমাণ কমানোই তো ভালো, তাই না? তবে এখান থেকে শিক্ষা নিতে ভুলবেন না।

বিষয় হচ্ছে, এই লেখাটার ভাবার্থ হচ্ছে— দুশ্চিন্তা করে এবং বৃথা চেষ্টা করে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ানো যাবে না।