রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র সম্পর্কে প্রচারিত বিভ্রান্তিমূলক/ ভুল তথ্য এবং সঠিক তথ্য:
১.রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের মধ্যে হবে।
সঠিক তথ্য: রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমা থেকে ১৪ কিমি দূরে নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট থেকে ৬৯.৬ কিমি দূরে অবস্থিত।
২. সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
সঠিক তথ্যঃ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হওয়ার ধারনা নিতান্তই অবান্তর বরং এর সুরক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচী নেওয়া হবে। যেমনঃ এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি; সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলতা কমাবে; বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন ও চিকিৎসা। সবুজায়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় ৫ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হবে যা ‘কার্বন সিংক’ হিসেবে কাজ করবে এবং বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করবে।
৩. সুন্দরবনের কাঠ কেটে কয়লা বানিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হবে।
সঠিক তথ্যঃ বিদেশ হতে আমদানীকৃত উন্নতমানের কয়লা এ বিদ্যুতকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে।
৪. পশুর নদীর পানি শেষ হয়ে যাবে।
সঠিক তথ্যঃ জোয়ার ভাটার নদী বলে এখানকার পানি মানে সাগরের পানি। সুতরাং পানি শেষ হওয়ার বিষয়টি অবান্তর।
৫. পশুর নদীতে দূষিত বর্জ্য ফেলা হবে।
সঠিক তথ্যঃ পশুর নদীতে কোন বর্জ্যই ফেলা হবে না।
৬. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই নদীতে যাবে
সঠিক তথ্যঃ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই নদীতে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। কারন ছাই প্রতিদিনই বিক্রি হবে। (সিমেন্ট উৎপাদনের কাজে এ ছাই ব্যবহার করা হবে যা বর্তমানে আমদানী করা হয়)
৭. পশুর নদীতে গরম পানি ফেলা হবে এবং পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
সঠিক তথ্যঃ পানির তাপমাত্রা কমানোর জন্য অত্যাধুনিক কুলিং টাওয়ারের মাধ্যমে কোল্ড ওয়াটার রিসাইকেল সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ একই পানি ঠান্ডা করে পুনরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে গরম পানি কোনভাবেই পশুর নদীতে ফেলা হবে না।
৮. বিদ্যুৎ ভারত নিয়ে যাবে।
সঠিক তথ্যঃ এখানে উৎপাদিত শতভাগ বিদ্যুতই বাংলাদেশে ব্যবহৃত হবে।
৯. মালিকানা দুই দেশের, ঋণের দায় বাংলাদেশের
সঠিক তথ্যঃ এ কোম্পানির মালিকানা ৫০% করে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের এনটিপিসির, সার্বিকভাবে বাংলাদেশ বা ভারতের নয়। বিশ্বব্যাপি যে দেশে বৃহৎ প্রকল্প স্থাপিত হয় সে দেশই সভারিন গ্যারান্টি প্রদান করে। যেহেতু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ভু-সম্পত্তি বাংলাদেশের, সকল সম্পদ এদেশেই থাকবে এবং এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশেই ব্যবহৃত হবে সেহেতু প্রথা অনুযায়ী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের গ্যারান্টি বাংলাদেশ সরকার প্রদান করবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বেসরকারী মালিকানায় বা যৌথ মালিকানায় বিদেশী অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুতকেন্দ্রে বাংলাদেশ সরকার গ্যারান্টি প্রদান করে থাকে।
১০. ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানি করা হবে।
সঠিক তথ্যঃ কয়লা আমদানীর জন্য নির্বাচিত সম্ভাব্য দেশসমূহ হচ্ছেঃ ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, মোজাম্বিক ইত্যাদি।
১১. চিমনী থেকে ছাই, কালো ধোঁয়া বের হয়ে এলাকার কৃষি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।
সঠিক তথ্যঃ বিদ্যুতকেন্দ্রে ব্যবহৃত চিমনীর উচ্চতা ৯০০ ফুটের অধিক হওয়ায় চিমনি থেকে নির্গত পরিশোধিত বায়ু কৃষি, প্রকৃতি ও পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না বা কোন কালো ধোঁয়া বের হবে না। এছাড়া বছরের কোন সময়ই বায়ুর গতি সুন্দরবনের দিকে সরাসরি প্রবাহিত হয়না বিধায় এলাকার কৃষি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
১২. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে এলাকায় এসিড বৃষ্টি হবে।
সঠিক তথ্যঃ সক্স, নক্স নিয়ন্ত্রিত থাকবে বিধায় বিদ্যুতকেন্দ্রের কারণে এলাকায় এসিড বৃষ্টি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
১৩. সুন্দরবনের পাশে (রামপালে) কেন এই বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে?
সঠিক তথ্যঃ সুবিধাজনক জমির প্রাপ্যতা, নাব্যতাসহ কয়লা পরিবহণের সুবিধাদি, প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির উৎস/যোগান, বিদ্যুৎ সঞ্চালন সুবিধা, নির্মাণ সামগ্রীর প্রাপ্যতা, ঘন জনবসতি পরিহার করা (এখানে মাত্র ১৫০ টি টংঘর ও স্থাপনাকে পুনর্বাসন করতে হয়েছে), অভয়ারণ্য থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান ইত্যাদি কারণে রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে।
১৪. যে সকল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে তা ব্যবহার করার নিশ্চয়তা নেই।
সঠিক তথ্যঃ অবশ্যই যেসব প্রযুক্তির কথা বলা হয়েছে তা ব্যবহৃত হবে। যেমনঃ
– বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে অত্যাধুনিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে (এই প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বল্প কয়লায় বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে)।
– ফ্লু-গ্যাস ডি-সালফারাইজেশন (এফজিডি) এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর ফলে নির্গত গ্যাসে Sox নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বিশেষতঃ সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) প্রায় সম্পূর্ণ শোষিত হবে (নির্গত ফ্লু-গ্যাস থেকে ৯৬% Sox দূরিভুত করবে)।
– নাইট্রোজন এর অক্সাইড (NOx) নির্গমন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য আধুনিক লো নক্স বার্নার ডিজাইন করা হবে।
– উৎপাদিত ৯৯.৯% ছাই Electro Static Precipitator (ESP) এর Hopper এ সংগৃহীত হবে।
১৫. ভারত বড় দেশ, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করতে পারে।
সঠিক তথ্যঃ এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সুতরাং চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার কোন কারণ নেই।
১৬. পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে
সঠিক তথ্যঃ পরিবেশ অধিদপ্তর ০৫-০৮-২০১৩ তারিখে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান করে। এর পরই কাজ শুরু করা হয়েছে। বিভিন্ন ধাপে নির্মাণ কাজ করার সময় পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয় যা অনুসরণ করা হচ্ছে এবং হবে।
১৭. বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই উড়ে পরিবেশ দূষণ হবে।
সঠিক তথ্যঃ
-বটম অ্যাশ পানির মিশ্রনে জমাট করে সংরক্ষণ করা হবে।
– উৎপাদিত ফ্লাই অ্যাশ ৯৯.৯% Electro Static Precipitator (ESP) এর Hopper এ সংগৃহীত হবে যা সাথে সাথেই বিক্রয় করা হবে।
ফলে ছাই থেকে বায়ু বা পানি দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই।
১৮. কয়লা পরিবহনের সময় পরিবেশ ও পানি দূষিত হবে।
সঠিক তথ্যঃ
আবৃত অবস্থায় কয়লা পরিবহন, মজুদ এবং প্ল্যান্টে ব্যবহার করা হবে। ফলে বাতাসে উড়ে বা পরিবহনের সময় পানিতে মিশ্রিত হয়ে দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। কয়লা পরিবহনের জাহাজ চলাচল নিয়েও উদ্বেগের কিছু নেই। বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য দৈনিক একটি মাত্র ছোট জাহাজ দ্বারা (যার বহন ক্ষমতা ১০-১২ হাজার টন) লাইটারেজ প্রক্রিয়ায় আবৃত অবস্থায় কয়লা আনা হবে। এতে পরিবহনের সময় কয়লা ছড়িয়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। আর সপ্তাহে একটি মাত্র মাদার ভেসেল আকরাম পয়েন্টে আসবে। এই বিষয়ে Environmental Impact and Social Assessment (EISA) সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে যার ফলাফলও ইতিবাচক।
১৯. শব্দ দূষণ হবে।
সঠিক তথ্যঃ শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক মানের সাথে সংগতি রেখে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিবেশবান্ধব মান অনুসরণ করা হবে।
#YesToRampal