ঘটনা-১
আমার এক বন্ধুর কথা বলছি- এই বন্ধুটি মেট্রিকে স্টার মার্কস পেয়ে পাশ করেছিল। তারপরে যদিও আর খুব বেশি ভাল করতে পারেনি, তবে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছে। ‘মানুষ কী ভাবল’ ম্যানিয়ায় তার প্রফেশনাল লাইফ তৈরি হয়নি। সে আগে থেকেই ডিক্লেয়ার দিয়ে রেখেছিল যে, সে ব্যাংকে চাকরি করবে। যেহেতু কমার্সে পড়েছে তাই পড়াকালীন এ ধরনের একটি ডিক্লারেশনে আত্মশ্লাঘা বোধ করার সুযোগ সে পেয়েছে। এরকম খানিকটা অন্ধ অহমিকা তৈরি করতে গিয়ে ও সমস্যায় পড়েছে। পড়াশুনা শেষ করে বাড়ি ফিরেই সবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে- সে ব্যাংকে চাকরি করে কিনা। বন্ধুটি বিপদে পড়ে যায়। এরপর আর কোন চাকরির চেষ্টা সে করে না, শুধু ব্যাংকে পরীক্ষা দেয়, কিন্তু ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার মত প্রস্তুতি তার নেই, ফলে চাকরি হয় না। এভাবে যেতে যেতে সে হতাশ হয়ে পড়ে। বয়সও প্রায় শেষ হয়ে যায় যায়। অবশেষে সে চুক্তি ভিত্তিতে অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের চাকরি নেয়। এটি অগ্রণী ব্যাংকে চাকরি নয়, এটি আসলে শাখার সাথে একটি চুক্তিভিত্তিক চাকরি। কী অার করবে, এভাবে সে মান বাঁচিয়েছে। আসলে কি ওর মান বাঁচাল, নাকি অারো ডুবল? চাকরির বয়স ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে, বর্তমান চাকরিটা পার্মানেন্ট হবে কিনা তারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই। পার্মানেন্ট হলেও এটি তো একটি চতুর্থ শ্রেণির চাকরি। ওর কিন্তু কমপক্ষে একটি দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি পাওয়ার সামার্থ ছিল। কী কারণে ও ব্যর্থ হল? ওর ব্যর্থতার প্রধান কারণ-
* সময়ের আগে ভাব নিতে গিয়েছে;
* মানুষের কাছে অহেতকু জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করেছে, ও কী চাকরি করবে বা করবে না তা কিন্তু লোকে জানতে চায়নি, ও নিজেই জানিয়েছে;
* লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, কিন্তু লক্ষ্যে পেঁৗছানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়নি;
* বিকল্প নিয়ে ভাবেনি;
* অন্ধ অহমিকাবোধে আক্রান্ত হয়েছে, যার আদৌ কোন মূল্য নেই।
মন্তব্য : জনগণের কাছে অহেতুক জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করতে নেই।
ঘটনা-২
দুই বন্ধু, এক সাথে পড়াশুনা করেছে, এক সাথে থেকেছে, পাশও করেছে একসাথে। দুইজনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। দুইজন প্রায় একই মাপের স্টুডেন্ট, রেজাল্টও একই ধরেনর, তবে বড় অমিল হচ্ছে- একজন ভাব নিতে পছন্দ করে, আরেকজন নরমাল। যে ভাবের পাবলিক সে চাকরি করবে বলে বদ্ধ পরিকর। বাড়িতে ঘুষ দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকার বায়না দিয়ে রেখেছে। আরেক বন্ধু চাকরির পরীক্ষা দেয় বটে, তবে টাকা পয়শা খরচ করার সামার্থ নেই, করতেও চায় না। চাকরি হলে হবে, না হলে না হবে। পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে প্রথম বন্ধুটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি নেয়, দ্বিতীয় বন্ধুটি চাকরির চেষ্টা করে, পাশাপাশি লাখ খানেক টাকা খরচ করে কলেজ মোড়ে একটি কম্পিটার নিয়ে বসে, ধীরে ধীরে একটি ফটোকপি মেশিনও কেনে। এভাবে বছর খানেকের মাথায় সে একটি লাইব্রেরি ও স্টেশনারির দোকানও দিয়ে ফেলে। এখন জেলা শহরে তার তিনটি দোকান। কর্মচারী মোট পাঁচজন। পাশাপাশি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালও চালায়, এজন্য তার একটি অফিশও আছে। জেলা সদরের অনেকেই তাকে এখন কদর করে। কোন ধান্ধাবাজিতে যায় না, মাথা খাটায় এবং পরিশ্রম করে। প্রথম বন্ধুটি এখনো পাঁচ লাখ টাকার দেনা শোধ করতে পারিনি, দ্বিতীয় বন্ধটি ইতিমধ্যে বিশ লাখ টাকার মালিক হয়ে গিয়েছে। এটি হল বর্তমান অবস্থা। আগামী পাঁচ বছর পরের চিত্র কী হবে? প্রথম বন্ধুটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকই থাকবে, এবং দ্বিতীয় বন্ধুটি নিশ্চিতভাবে ঐ জেলা শহরের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হবে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা সম্মানিতা পেশা, কিন্তু যে বিবেচনায় পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে প্রথম বন্ধুটি চাকরি নিয়েছিল, সেই বিচেনাই যদি মূখ্য হয় তাহলে দ্বিতীয় বন্ধুটি প্রথম বন্ধুর চেয়ে সবদিক থেকে এগিয়ে গিয়েছে এবং প্রথম বন্ধুটির ফালতু ভাবের আর কোন দাম তার কাছে থাকার কথা নয়।
মন্তব্য : ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার চেয়ে ঐ টাকায় উদ্যোক্তা হওয়া বেশি সম্মানের এবং বেশি লাভজনক।
ঘটনা-৩
চার বন্ধু হেঁটে যাচ্ছে, পথের মাঝখানে একটি কলার খোশা পড়ে আছে। সবাই দেখেছে, কিন্তু সবাই ভাবছে- ওটা উঠাতে গেলে লোকে কী ভাববে, এরই মধ্যে একটি লোক খোশাটি উঠিয়ে পাশের ড্রেনে ফেলে। চার বন্ধু লজ্জিত হয় এবং লোকটির স্মার্টনেস দেখে মুগ্ধ হয়।
বিষয়টা কী দাঁড়াল- চার বন্ধুর প্রত্যেকে ভেবেছে- লোকে কী ভাববে। কিন্তু যখন অন্য একটি লোক কাজটি করেছে তখন তারা নিজেরো বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে দেখেছে, অর্থাৎ তারা যদি কাজটি করত তাহলে অন্যরাও বিষয়টিকে একইভাবে দেখত।
মন্তব্য : ভাল কাজের কদর দিতে সবাই জানে। সঠিক কাজটি করতে দেরি করার অর্থ আপনি পিছিয়ে গেলেন।