৩ নভেম্বর (সোমবার) রাত ৩-১৭ মিনিটে প্যাটেল শুনতে পান পাগলা ঘন্টির আওয়াজ, কাঁসার ঘন্টি গম্ভীর শব্দে ঢং ঢং করে বাজছিল। একই সাথে করুণ সুরে বিউগল ও ক্ষণে ক্ষণে হুইসেলের শব্দে নিশীথ রাতটা কেমন যেন আতঙ্কপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। …তারপর ঝনঝন চাবির শব্দে ১ নং রুমের দরজা খোলার শব্দ ওনারা শুনতে পেলেন। …এরপর দ্বিতীয় রুমের লকআপ খোলার শব্দ পেলেন। …মনসুর আলী ওজু করে পাঞ্জাবি পরলেন।
দাড়িওয়ালা এক পাহারাদার নায়েব আলী মনসুর আলীর কোমরে ধাক্কা দিয়ে তাগাদা দিল ১ নং রুমে যেতে।…প্যাটেলের ভাষায় ‘মনসুর আলীকে ১ নং রুমে নেওয়ার ১/২ মিনিটের মধ্যেই চারটা স্টেনগানের ম্যাগজিন ছুটল। ৫টা সিঙ্গেল রাউন্ড গুলির আওয়াজ পেলাম। পরে শুনেছি, জেলখানার ঐ পাহারাদার নায়েব আলী নাকি দৌড়ে গিয়ে হত্যাকারী আর্মিদের বলেছে, ‘একটা বাইচা আছে’। মনসুর আলী তখনও বেঁচে ছিলেন ও পানি পানি বলে কাতরাচ্ছিলেন। আর্মিরা গাড়ির কাছ থেকে আবার ভেতরে এসে বেয়নেট চার্জ করে মনসুর আলীকে।’ জেল হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ১৫ আগস্টের পর গ্রেফতারকৃত শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা প্যাটেল তাজউদ্দিন আহমদ-এর জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদের কাছে টেলিফোনে এভাবেই জেল হত্যাকান্ডের বিভৎসতার বর্ণনা দিয়েছিলেন।
খালেদ মোশাররফ জেলহত্যা তদন্তের জন্য জাস্টিজ সোবাহানকে চেয়ারম্যান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ নিহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে জেলহত্যা তদন্ত বন্ধ করে দেন। জিয়া শুধু জেলহত্যা তদন্ত বন্ধ করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি পার্লামেন্টে ইন্ডেমনিটি (দায়মুক্তি) বিল পাশ করেন। এই জংলি আইন জারি করে তিনি ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকান্ড ও জেলহত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেন। এভাবেই জিয়ার হাত ধরে আমাদের দেশে বিচারহীনতার রাজনীতির সূত্রপাত হয়। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি হতেই জঙ্গিবাদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও অগ্নি সন্ত্রাস আমাদের দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
জিয়া রাষ্ট্রীয় শপথ ভঙ্গ করে জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিলেন এবং হত্যাকারীদের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকুরি দিয়েছিলেন। তার এই বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য প্রকৃতি তাঁর ওপর নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নিয়েছে। তার সহকর্মীরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর বিকৃত ও বিভৎস লাশটি স্বজনদের দেখতে দেওয়া হয়নি। ছোট ছেলে কোকো ড্রাগ আসক্ত হয়ে পড়েন এবং মানি লন্ডারিং মামলায় দন্ডিত হয়ে বিদেশে পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বড় ছেলে একুশের গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে বর্তমানে বিদেশে পলাতক আছেন। স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে কারাবাস যাপন করছেন। মোটকথা গোটা সংসারটাই এখন ছাড়খার।