বাউল গ্রেপ্তার ও রিমান্ড – বাঙালী সংস্কৃতির প্রতি আঘাত ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অপমান

ইসলামকে সঠিক পথে আনতে চাওয়া একজন বাউল

দেশের প্রচলিত আইন বাউলদের বিশ্বাস ও গানের সাথে বিরোধ হওয়া -আইন প্রণেতাদের চরম ব্যর্থতা। বাউলরা কখনই তাদের গানের জন্য অপরাধী হতে পারে না, তারা অপরাধমুক্ত মনের অধিকারী। সমাজের বিদ্যমান সকল অপসংস্কৃতি ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাদের গান ও নিবেদন। সুরের মূর্ছনায় তারা মানুষের কাছে তুলে ধরে সমাজের অন্তর্নিহিত কপটতা, ধূর্তামি, যা সাধারণ্যের দৃষ্টির বাইরে থাকে । উপলব্ধি ও অবলোকন করা অন্তর্দৃষ্টির প্রখরতা নিয়েই বাউল হয়। ইহজগতের লোভ লালসা তাদের স্পর্শ করে না। নির্মোহতা তাদের প্রধানতম গুণাবলী।

বাউলদের গানে সমাজ ও রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সে সকল ঘটনার প্রকাশ ঘটে, যা মানুষ ব্যক্তি স্বার্থ ও লোভে বলতে পারে না। অথচ সে মানুষরাই মনে করে যে বাউল যথার্থই বলছে। তাই হাটে, ঘাটে, গঞ্জে, গাছতলায় বাউলের গান সকলে জড়ো হয়ে শোনে। বাউল গানের উৎসব হয়। কখনও কখনও সে গানে বেদনার্ত মানুষের দুচোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসে। শোষণ, বঞ্চনা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে এমন মর্মস্পর্শী বাউলী প্রতিবাদ তাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়।
বাউলের গান ভারতবর্ষে হাজার বছরের – যা অকৃত্রিম, শাশ্বত, প্রতিবাদী সংস্কৃতি হয়ে গণমানুষের চর্চায় আজও বেঁচে আছে। এমনকি উপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ খেদানোর আন্দোলনে ফকির বাউলদের বিদ্রোহের কাহিনী ইতিহাসে আলাদাভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে ।

ধারণা করা নয়, নিজ উপলব্ধি ও সাধনায় সত্যাগ্রহী হয়ে বাউলরা তাদের গান অন্তরে ধারণ করে। এ গান সমাজে উঁচুতলার অভিজাত শ্রেণি ও কট্টর ধর্মান্ধ মৌলবাদকে আঘাত করবে – এটাই স্বাভাবিক। এজন্যই তো বাউল গান। সে জন্যই তো মানুষ শোনে। আইন যদি ধর্মান্ধতা ও অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণ করে , তাহলে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বাউল গান বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

পুঁজি বিনিয়োগের আধুনিক সংস্কৃতির কারখানায় মুনাফা লাভের পণ্য হিসাবে কখনই বাউল সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে না । বাউল সমাজের অধিকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বাঙালীর সংস্কৃতি হিসাবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। পুলিশ যদি সেই অধিকার সংরক্ষণে রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়, বাউলকে গ্রেপ্তার করে, বিচার বিভাগ যদি আইনের যাঁতাকলে পিষ্ট করে বাউলকে শাস্তি দেয় – এ লজ্জা জাতি হিসাবে আমাদেরই। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অপমান। গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ হয়, মুক্তিযুদ্ধ তাদেরকে ধারণ করেনি ।

বাউলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি, বাউলকে অপরাধী করার সংস্কৃতি বিরোধী এ রাষ্ট্রীয় আইন বাতিল হোক। সত্য প্রকাশ অপরাধ নয়, তীব্র হোক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। এ সংস্কৃতি বাংলার, বাঙালীর ও বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের ।ৎ


বাহারুল আলম



টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহানবী (সা.), মসজিদের ইমাম ও ইসলামের নানা বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বাউলশিল্পী শরিয়ত বয়াতী (৩৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১১/০১/২০২০) সকালে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বাশিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বয়াতি শরিয়ত সরকার মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের আগধল্যা গ্রামের পবন মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বয়াতি শরিয়ত সরকার গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার রৌহাট্রেক পীর হযরত হেলাল শাহ’র দশম বাৎসরিক মিলনমেলায় পালাগানের অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন। এ সময় তিনি বলেন, গান-বাজনা হারাম কোরআনে কোথাও লেখা নেই। এ ছাড়া দাউদ (আ.) নবী কোনো নবী না, তিনি বয়াতি ছিলেন। রাসুল (সা.) গান না শুনে ঘুমাইতেন না। তিনি আরো বলেন, নবীজি আবু মুসা আশয়ারী (র.) কে ২৩ রকমের গানের বাদ্যযন্ত্র হাদিয়া প্রদান করিয়াছেন। ওই সব বাদ্যযন্ত্র দাউদ নবীর ছিল। (কালের কণ্ঠ)