ভিতরে যাই থাকুক লোকে জানবে তুমিও গপাগপ খাইতে পারে অন্যকে দেখিয়ে দেখিয়ে

তাই নীপিড়িত মানুষের কথা বললে, সমষ্টির কথা বললে বেশিরভাগ মানুষ এটা আর ভালোভাবে নেয় না, এটা বরং তাদের আতঙ্কিত করে, তারা ভাবে এই বুঝি ছোট্ট জীবনের ভোগের আয়োজনে ভাটা পড়ল, এজন্য সমাজ দরদী বা জন দরদী মানুষের কাছ থেকে মনে মনে তারা (বেশিরভাগ) দূরে সরে যায়। শুধু দূরে সরে থাকে তাই নয়, এটাও তারা প্রমাণ করতে চায় যে হিতৈষী ঐ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টা ভুল, তারা সঠিক।


বর্তমানে কেউ আসলে অশিক্ষিত থাকে না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও বহুধরনের শিক্ষা সে কোনো না কোনোভাবে পেয়ে যায়। অর্থাৎ, মানুষের চোখকান ভীষণ রকমভাবে খুলে গেছে। মানুষ জেনে গেছে পৃথিবী বিচিত্র এবং উপভোগ্য, ফলে মানুষের আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে একইসাথে অপ্রাপ্তির হতাশাও বেড়েছে।

মানুষ চায় এখন যথাসম্ভব অদেখা যা কিছু দেখতে, অচেনা যা কিছু চিনতে, যা ভোগ করা হয়নি তা ভোগ করতে। একইসাথে মানুষ জানে তার সীমাবদ্ধতা, জানে জীবন কত সংক্ষিপ্ত, এ অবস্থায় কারো পাশে দাঁড়ানোর কথা বেশিরভাগ মানুষ কিছুতেই আর ভাবতে পারে না, তারা একা অথবা প্রয়োজনে দলবেধে ভোগ বা উপভোগ করতে চায় শুধু, কিন্তু একসাথে বাঁচতে চায় না। এদিক থেকে বেশিরভাগ তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ আরও ভয়ঙ্কর, তারা ভোগবাদী দুইভাবে— ১. পার্থিব সবকিছু পেতে চায়; ২. একইসাথে নিজেকে মননশীল, জ্ঞানী-গুণী হিসেবেও প্রমাণ করতে চায়।

তাই নীপিড়িত মানুষের কথা বললে, সমষ্টির কথা বললে বেশিরভাগ মানুষ এটা আর ভালোভাবে নেয় না, এটা বরং তাদের আতঙ্কিত করে, তারা ভাবে এই বুঝি ছোট্ট জীবনের ভোগের আয়োজনে ভাটা পড়ল, এজন্য সমাজ দরদী বা জন দরদী মানুষের কাছ থেকে মনে মনে তারা (বেশিরভাগ) দূরে সরে যায়। শুধু দূরে সরে থাকে তাই নয়, এটাও তারা প্রমাণ করতে চায় যে হিতৈষী ঐ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টা ভুল, তারা সঠিক।

তারাও কিন্তু সংখ্যালঘু, কারণ, বেশিরভাগ মানুষের শুধু বেঁচে থাকতে নাভিঃশ্বাস হয়ে যায়, তাই চাইলেও খুব বেশি মানুষ তাইরেনাইরে দলে ভিড়তে পারে না। না পারলেও ইচ্ছেটা বেশিরভাগ মানুষের একই, ফলে ঘ্রাণে সুখ তাদের হয়, ঈর্ষাতেও তাদের কিছু সুখ মেলে। তারা পথ চেয়ে থাকে সরল এবং গরল পথে সুখলাভকারী ঐ মানুষগুলোর দিকে, তাদের জন্য যারা কেঁদে মরে, খেটে মরে তাদের দিকে তাকিয়ে, কিছু পাবার আশায়, তাদের মতো হবার নেশায়।

হিতৈষী মানুষেরাও যে পৃথিবীর সকল রূপরসগন্ধ ভোগ করতে চায় না, তা নয়, বরং অনেকক্ষেত্রে বেশি চায়, কিন্তু তারা হৃদয়হীন হতে পারে না, একই সমাজে থেকে ভয়ঙ্করভাবে তলিয়ে থাকা মানুষগুলোকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। আসলে কোমল হৃদয়ই তাদেরকে আটকে দেয়। পাথর্ক্য এখানে ‘হৃদয়বৃত্তির’।

যার জন্য করি চুরি, তার কাছ থেকে চোর শোনার ভয়ঙ্কর এই বৈপরিত্য সমাজে আছে। এটা মাথায় রেখে হিতৈষী মানুষদের উচিৎ তাদের দরদ গোপন করা, এবং একটা ছদ্মবেশী ‘হ্যাপি-গো-লাকি’ ভাব বজায় রাখা।

এক্ষেত্রে নিজের কোনো পরিচয়ের থেকে কাজটাকে বড় করে দেখতে হবে। ভিতরে যাই থাকুক লোকে জানবে তুমিও গপাগপ খাইতে পারে অন্যকে দেখিয়ে দেখিয়ে, তুমিও গন্ত্যব্যে ছুটতে পারে পথের কোনো পাশে না তাকিয়ে, তুমিও পকেট ভরতে জানো, তুমিও গাড়ি-বাড়ি করতে জানো। এটা কাজে দিবে। এতে চারপাশে মানুষের আনাগোনা বাড়বে, কৌশলে কাজ করা সহজ হবে।

সমাজের যে দুটো সংখ্যালঘু শ্রেণির মধ্যে সবসময় দ্বন্দ্ব চলে সেখানে নিষ্ঠুর এবং ভোগবাদী মানুষগুলোই জিতে আছে, কারণ, তাদের আড়ম্বর দেখে সাধারণ মানুষ, কষ্টে চলা মানুষগুলো তাদের পিছু নেয়। সাধারণ মানুষ ভুল করে তাদের যোগ্যতর ভাবে, এজন্য ঐ মানুষগুলো সামাজিকভাবে খুব শক্তিশালী হয়ে যায়। খারাপ হয়েও তারা তেজি ভাবটা বজায় রাখতে পারে, যদিও প্রকৃতপক্ষে তারা তেজি নয়। অপরদিকে হিতৈষী এবং প্রকৃতপক্ষে দরদী মানুষগুলোর আড়ম্বর এবং আয়োজন থাকে না বলে সাধারণ মানুষ এদিকে তেমন একটা ভেড়ে না, ফলে সংখ্যালঘু এই সেকশনটা দুর্বলতর থাকে। ধীরে ধীরে সমাজটা অপর সংখ্যালঘু কিন্তু স্বার্থপর মানুষগুলোর হাতে চলে যায়।