ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎস্থলে অনেকক্ষণ থাকলাম। থাকলাম শুধু বন্দী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের দেখার জন্য। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর্যবেক্ষণ করলাম।
এই ঘণ্টাখানেক সময়ে একজন সাক্ষাৎকারীও পেলাম না যে আমার চেয়ে “ধনাড্য” (হাবভাবে) হতে পারে। মানে দেখে সবাইকে খুব ছা পোষা মনে হল, একেবারে সমাজের তলানীর মানুষ।
এটা দেখে মনে হতে পারে তাহলে অপরাধ কি সব দরিদ্ররাই করছে? সেটি তো কিছু ক্ষেত্রে ঠিক যে, সরাসরি অপরাধ করার কাজটা দরিদ্রদের দিয়েই করানো হয় বেশি।
তবে ওখানকার যে চিত্র তাতে মনে হবে সকল অপরাধ দরিদ্ররাই করছে। এর কারণ কী? অপরাধ সব নিশ্চয়ই দরিদ্ররা করছে না, কিন্তু ধরা পড়ছে এবং জামিন হচ্ছে না দরিদ্রদের।
বিশেষ করে ঢাকায় তো অভিজাত এলাকাগুলোতে অপরাধ এখন আরও বেশি হচ্ছে। কিন্তু ধনীরা থানাতেই দফারফা করে ফেলে, যদি কোর্ট পর্যন্ত আসেও তারা তখন কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে চলে যায়। ফলে শেষ পর্যন্ত কারাগারে জায়গা হয় যারা শক্ত উকিল রাখতে পারে না, যথেষ্ট ঘুষ দিতে পারে না তাদের।
আমি বোঝার জন্য ‘নীল’ সাক্ষাৎ রুমের কয়েকজন সাক্ষাৎপ্রার্থীর সাথে কথা বললাম, অনেকেই যা বলল, তাতে বুঝলাম, সেখানে প্রকৃত অপরাধী যেমন আছে আবার অনেকেই শুধু শিকার।
ওখান থেকে বের হয়ে এসে মনে হল, ছোটখাটো অপরাধে স্থানীয় সরকারের একটা ভূমিকা থাকা দরকার। গ্রাম বা শহরের সালিসি ব্যবস্থা সরকারের নির্দেশনার আওতায় আরও কার্যকর করা দরকার। তাহলে অনেক বিষয়ই থানা বা কোর্টে গড়াবে না। তাতে মামলার জট কমবে, সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে জনগণ।
আমাদের জনগণের একটা বৈশিষ্ট আছে, আমরা মূলত লেজ উঁচিয়ে এগিয়ে যাওয়া স্বভাবের। গ্রামে থাকতে দেখতাম, কথায় কথায় মানুষ থানায় দৌঁড়াত তখন, এখনও দৌঁড়ায়।
এসব ক্ষেত্রে প্রথম ভূমিকা থাকা উচিৎ স্থানীয় প্রশাসনের। গ্রাম হলে মেম্বার চেয়ারম্যানের, শহর হলে কমিশনারের।
তবে অবশ্যই এর জন্য শুধু মেম্বার চেয়ারম্যান নয়, স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার জন্য স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য কিছু মানুষ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া উচিৎ। প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি দশ জনের এমন একটি কমিটি থাকে তাহলে জনগণ অনেক লাভবান হবে নিশ্চয়ই।
বাদী-বিবাদী, থানা, উকিল, আদালত —এ এক ভয়ঙ্কর চক্র হয়েছে আমাদের দেশে। যার টাকা থানা তার, আদালত তার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটাই চলছে। খুব বেশি বড় ঘটনা এবং নাছোড়বান্দা না হলে সাধারণ মানুষ বিচার পায় না।
দিব্যেন্দু দ্বীপ