অস্তিত্বের একুশ
থুতু তোদের ওই বন্দুকের নলে,
বেনিয়া তোদের হিংস্র বুলেট
বারুদ ভরা বুক বিদ্ধ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল
সেদিন মুক্তির আগুন।
তোদের বর্বর বুলেট
গিয়ে বিঁধেছিল শান্ত ঐ বরকরতের বুকে!
পিছনে তাকিয়ে দেখি লুটিয়ে পড়েছে অজ্ঞাৎ এক বালক,
একটু অদূরেই গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে অহিউল্লাহ;
করুণ রক্ত ধুলায় গোধুলী আলো ছড়ায়
যে আলোয় আজ বাংলাভাষা,
যে আলোয় আজ আমরা।
সে আলো আরো রক্তের নেশায় কখন যেন হয়ে যায় আলেয়া!
ভয় পাশ কেন মূর্খের দল?
তোদের বুকে তো বুলেট বিঁধে না
হৃদয়হীন বুকে বুলেট বিঁধে না।
মানুষেরা কখনও পারে না ধরায়
রক্ত ঝরাতে দানবেরও।
বেঁচে থাক তোরা,
দানব, থেকে থেকে দেখ
মানবের আত্মা কখনো মরে না।
ওরা অমর, ওরা একুশ;
ওরা আসবে ওরা আসে।
তোরা বেঁচে থাক, বেনিয়ারা বেঁচে থাক!
মরে, ওরা মরে
কোত্থেকে ওরা উড়ে এসে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে
কোনদিন যারা আসেনি সামনে
চাইনি যারা নাম তারাই শহিদ
ওরাই রফিক জব্বার শফিউর
ওরা দিয়ে যায় ভাষা, দিয়ে যায় দেশ
ওরা অনিঃশেষ।
দিব্যেন্দু দ্বীপ
সেই কবে শুরু হয়েছিল পথচলা—আজ থেকে ৫৪ বছর আগে ১৯৫২ সালো। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”— একুশের রক্তস্নাত গান শুনতে শুনতে ’৭১ এ পৌঁছানো। ভাষা সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম অতঃপর বিজয়। একুশ আমাদের বহমান অনুপ্রেরণা, দিকনির্দেশনা। ত্যাগের মহিমায় চীর উজ্জ্বল বাঙালি বীর সন্তানদের পূন্যস্নাত আমাদের ভাষাদিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক রূপ (১৭ নভেম্বর ১৯৯৯, ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়) লাভ করেছে। এটা আমাদের মহত্মম অর্জন, এ অর্জনের পিছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ রক্তস্নাত এক ইতিহাস যার ফলশ্রুতিতে অ আ ক খ—অতঃপর “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ”—একটি স্বাধীন ভুখণ্ড ‘বাংলাদেশ’। ভাষার নামে পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দেশের নাম হলো। ২১-এর চেতনাকে সমুন্নত রেখে হয়েছিল পরবর্তী সব আন্দোলন। শুধু দেশের নাম বাংলাদেশ হয়েছিল তা নয়, ১৯৭১-এ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে আমাদের পরিচয়ও হয়েছিল ভাষার পরিচয়ে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের একক পরিচয় হলো আমরা বাঙালি।
আসলে ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির জাতীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আন্দোলন, যার মধ্যে একাকার হয়ে আছে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শোষণ আর দেশীয় (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রতিক্রিয়াশীলদের দেশদ্রোহিতা।
“একদল চাচ্ছে খাঁটি বাংলাকে ‘বলি’ দিতে,
আর একদল চাচ্ছে ‘জবে ’করতে।
একদিকে কামারের খাঁড়া
আর একদিকে কসাইয়ের ছুরি …”
–ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ভাষা আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং আরো অনেকের লেখনি দিয়ে। ১৯৪৭ সালের ২৯শে জুলাই “পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা” শিরোনামায় তিনি স্বনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় বাংলা ভাষার পক্ষে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এরপর ছাত্রসমাজ, বিরোধীদলসহ বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এই আন্দোলনে সমর্থন জুগিয়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী মহলে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃস্টি হলেও, ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের বলিষ্ট নেতৃত্ব, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও সর্বোচ্চ ত্যাগের ফলে ভাষার দাবী সফল হয়েছিল।
প্রথম ছাত্রসভা: ’৪৭ এর ৫ই ডিসেম্বর করাচিতে শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৬ই ডিসেম্বর ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ‘মর্নিং নিউজে’ প্রকাশিত হয়—শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এতে প্রতিয়মান হয় যে সম্মেলনে উপস্থিত পূর্ব পাকিস্তানি প্রতিনিধিরাও উর্দুর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছন।
এ সংবাদটি ঢাকার ছাত্রদের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সে দিনই ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ও অন্যন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা দলে দলে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলায় (পুরাতন কলাভবনের কাছে, যেখানে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অবস্থিত তার কাছে ঐতিহাসিক আমতলার অদূরেই একটি বেল গাছ ছিল) ঐতিহাসিক এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙনে এটাই ছিল প্রথম ছাত্রসভা।
গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব: ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে, করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেষণে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা পশ্নে সরকারি প্রস্তাবের উপর একটি সংশোধনী পেশ করেন। পরিষদে সংশোধনী আনতে গিয়ে তিনি বলেন, “….. রাষ্ট্রভাষা সেই ভাষাই হওয়া উচিৎ রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ যে ভাষা ব্যবহার করে এবং ….. আমি মনে করি যে, বাংলাভাষাই আমাদের রাষ্ট্রের লিংগুয়া ফ্রাংকা (বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় কথা বলে) ….. যদি ২৯নং বিধিতে (১৮৩৫ সালে ভারত শাষণ বিধির ২৯ নং উপধারা) ইংরেজি ভাষা সম্মানজনক স্থান পেতে পারে ….. যদি পরিষদের কার্যাবলী উর্দু অথবা ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে চলতে পারে, তাহলে বাংলা–যা চার কোটি চল্লিশ লক্ষ লোকের ভাষা কেন সম্মানজনক স্থান পেতে পারে না? কাজেই এ ভাষাকে প্রাদেষিক ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ নয়। এ ভাষাকে রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ । সুতরাং, …… আমি প্রস্তাব করি যে, ২৯নং বিধিতে ইংরেজি শব্দটির সাথে ‘অথবা বাংলা’ কথাটি যোগ করা হোক। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সংশোধনী প্রস্তাবটি সরকারি বিরোধীতার মুখে অগ্রাহ্য হয়। এ সর্ম্পকে প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় প্রস্তাবের বিরোধিতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের দেওয়া ভাষণ থেকে। অথচ পূর্ব বাংলা থেকেই তিনি গণপরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের ২রা মার্চ গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ। ১১মার্চ কর্মপরিষদ সারা পূর্ববঙ্গে ধর্মঘট আহবান করে। বিশেষ করে ছাত্রদের মধ্যে এর ভয়ানক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। ১৯৪৮-এর ১১মার্চ শুধু ঢাকায় নয় সারা বাংলাদেশে (তখনকার পূর্ববাংলা) আন্দোলনে ফেটে পড়েছিল। তারপর থেকে ছাত্ররা প্রতিবছর ১১মার্চ দিনটি পালন করত। আসলে ঐ দিনটিই ভাষা আন্দোলনের মূল উপলক্ষ হয়েছিল। ১৯ মার্চ ১৯৪৮ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম ঢাকায় আসেন। ২১শে মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বক্তৃতায় বলেন, “আমি ষ্পটভাবে বলে দিতে চাই, “উর্দুই, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”, অন্য কোনো ভাষা নয়। ’২৩শে মার্চ এ কে ফজলুল হক জিন্নাহর বক্তৃতার সমালোচনা করে বিবৃতি প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকপত্র পেষ: উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হতে যাচ্ছে, এই আশংকায় ছাত্র, শিক্ষক এবং সমাজের সচেতন শ্রেণি এ সময় খুবই তৎপর হয়ে ওঠে। ’৪৮ এর ২৩শে মার্চ বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ জানিয়ে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মি. জিন্নার নিকট একটি স্মারকপত্র দাখিল করা হয়। পুর্ব পাকিস্তানের শত শত নাগরিক এই স্মারকপত্রে সাক্ষর করেন। সাক্ষরকারীদের মধ্যে কবি, সাহিত্যিক, শীল্পি, আইনজীবী, শিক্ষক, ওলামা, ছাত্র, রাজনৈতিক নেতা, ডাক্তার, সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোক ছিলেন। স্মারকপত্রে উল্লেখিত রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক প্রস্তাবটি পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষি মন্ত্রিরাও সমর্থন করেন বলে জানা যায়।
স্মারকপত্রে উপস্থিত সাত দফা দাবী:
(১) পাকিস্তানের মোট জনসংখার দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী। পূর্ব পাকিস্তানের ষোলো আনা অধিবাসীই অধিকাংশের মঙ্গলের জন্য বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী করেছে;
(২) পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের বিশ্বাস এই যে, পাকিস্তানের অধিবাসীদের লইয়া একটি সুদৃঢ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠন করিতে হইলে, বাংলা ভাষাকে একটি রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে গ্রহণ করিলে জাতি গঠনের দৃঢ ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হইবে;
(৩) এই বিশ্বে এমন সব রাষ্ট্র আছে যেখানে একাধিক রাষ্ট্র ভাষা প্রচলিত, যেখানে একাধিক রাষ্ট্র ভাষা প্রচলিত শাসন কার্য পরিচালনায় সেখানে কোন সমস্যা হয় না;
(৪) ভাষার স্বাতন্ত্র আন্তরিক সৌভাত্র ও ঐক্যের অন্তরায় নহে;
(৫) আমরা উর্দু ভাষা বাদ দেয়ার দাবী করছি না, কিন্তুু বাংলা ও উর্দু উভয়কেই রাষ্ট্রভাষা করতে বলছি;
(৬) জগতের প্রত্যেক রাষ্ট্রেই অধিকাংশ অধিবাসীর কথিত ভাষাই রাষ্ট্রবাষারূপে গৃহীত হয়েছে;
(৭) যে ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নহে, সেই ভাষার পরিবর্তে, জনসাধারণের অস্তিমজ্জাগত পরিচিত ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করিলেই পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর, রাজনৈতিক, শিক্ষানৈতিক ও অর্থনেতিক উন্নয়ন সম্ভব হইবে, ইহাই আমাদের সর্বাধিক উন্নতি সাধনের একমাত্র উপায়।
কিন্তু গণপরিষদে লিয়াকত আলী খান কর্তৃক রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবী অগ্রাহ্য হয়। ২৪শে মার্চ কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ সাহেব ভাষা সম্পর্কে তার বক্তব্যের পূণরাবৃত্তি করেন। এ সময় ছাত্ররা ‘নো নো’ বলে তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে।
যার ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ প্রতিবছর ১১শে মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস রূপে পালিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র বা সংবিধান রচনায় অচলাবস্থার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটিররও কোনো সুরাহা হয়নি। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের মৃত্যু হয় যথাক্রমে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকভাবে। অঃতপর খাজা নাজিমউদ্দীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল এবং নূরুল আমীন হন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লিগের ঢাকা অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি খাজা নাজিম উদ্দীন চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করেন যে “উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” ঐ ঘোষনার প্রতিক্রিয়ায় ৩০শে জানুয়ারি ১৯৫২ ঢাকায় প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়, ঐদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট এবং বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটির উদ্যোগে কলাভবন (পুরাতন) প্রাঙ্গনে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি গঠিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে। ১৯৫২ সালের ৩০শে জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীনের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ কমিটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং এই কমিটির উদ্যোগেই ৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে যেখান থেকে পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে রক্তাক্ত বাংলা ২১শে ফেব্রুয়ারি।
১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত: ২০শে ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় মাইক দিয়ে ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করার কথা। খবর শুনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়। সভায় ১৪৪ ধারা এবং তা ভাঙা হবে কিনা সে বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করা হয়। নিরপেক্ষ, পক্ষ, বিপক্ষ মিলে সর্বশেষ ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। এই ভোটাভুটির ফলাফল থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ঘোষণা করা হয় ২১ তারিখ আহুত জনসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে এবং সর্বসাধারণের মতামত অনুসারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কয়েক জন সদস্য (তরুণ ছাত্র নেতা) ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং রাত ১২টায় ‘ওরা ১১জন’ ঢাকা হলের (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) পুকুরের পূর্ব ধারের সিঁড়িতে গোপন বৈঠকে মিলিত হন, সিদ্ধান্ত হয় ২১ তারিখের সভায় (আগে থেকেই রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে হরতাল এবং জনসভা আহবান করা হয়েছিল) গাজীউল হক সভাপতিত্ব করবেন এবং তিান গ্রেফতার হলে সভাপতিত্ব করবেন যথাক্রমে এম আর আখতার মুকুল অথবা কমরুদ্দীন শহুদ।
অতঃপর ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশাল ছাত্রসমাবেশে (সাধারণ জনতাও ছিল) প্রথম মত (১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করা) উত্থাপন করা হয় এর পর দ্বিতীয় মত (১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার কথা) বললে জনতা হর্ষ ধ্বনি করে ১৪৪ ধারা ভাঙার মতামতকে গ্রহণ করে মিছিলে অংশগ্রহণ করে। তবে সত্য কথা হচ্ছে, ১৪৪ ধারা ভাঙা বা রাখা প্রশ্নে দ্বিমত থাকলেও সভা থেকে যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন দল মত নির্বিশেষ সবাই আন্দেলনে শামীল হয়েছিল।
সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ১০ জনি মিছিল বের করা হবে এবং নেতারা যথাসম্ভব গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারিদিকে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের সেল মারে। ধোঁয়ার মধ্যে ভিজা রুমাল চোখে দিয়ে ছাত্ররা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংর্ঘষ বেধে যায় এবং কোনোরকম পূর্বসংকেত ছাড়াই মেডিক্যাল হোষ্টেলের পিছন থেকে একদল সশস্ত্র পুলিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোরেশীর নির্দেশে, নির্মমভাবে ছাত্রদের উপর গুলি চালায়, ঝরে যায় কয়েকটি অমূল্য জীবন, আহত হয় অনেকে। ২১শে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণে নিহত ছাত্ররা হচ্ছেন বরকত, জব্বার, রফিক ও ছালাম। এর মধ্যে ছালাম অনেকদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন, অবশেষে ৪ঠা মার্চ ১৯৫২ তিনি মারা যান।
ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালে মোট চারজন মারা গিয়েছিলেন সেদিন, তবে আরো অনেক মৃতদেহ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চাকরিরত ইংরেজ ডাক্তার এলিংসন না থাকলে নিহতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেত, কারণ, তিান অত্যন্ত দক্ষতা এবং দ্রুততার সাথে একটার পর একটা অপেরেশন করেছিলেন। গুলিবর্ষণের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোটাদেশ একসাথে ফুঁসে ওঠে। যার ফলশ্রুতিতে ২২শে ফেব্রুয়ারি হরতাল অবরোধ পালিত হয়। ২২ তারিখও পুলিশ গুলি চালায়, ঐদিন পুলিশের গুলি এবং গাড়ি (পুলিশের ) চাপায় নবাবপুর রোড, হাইকোর্টের সামনে এবং কার্জন হল সংলগ্ন রাস্তায় আরো কয়েকজন জনতা নিহত হন যার মধ্যে একজন অজ্ঞাত বালকও ছিলেন।
মূলত ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙার মধ্য দিয়েই বাংলা ভাষার দাবীটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ’৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একছত্র বিজয় যার ধারাবাহিকতায় ’৫৬ সালে গণপরিষদের অধিবেশনে লিখিতভাবে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বালা ভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রথম শহিদ মিনার: ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পতিবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটের সময় ভাষা আন্দোলনকারীদের উপর ঢাকা মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙনের যে জায়গায় প্রথম গুলি হয়েছিল, ঠিক সে জায়গায় নির্মিত হয় প্রথম শহিদ মিনার। ২২শে ফেব্রুয়ারি রাতে শহিদ মিনার তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২৩ তারিখ বিকাল থেকে শুরু করে সারারাত কাজ হয় (কার্ফু থাকা সত্ত্বেও)। ২ জন রাজমিস্ত্রি আর ছাত্ররা মিলে সম্মিলিতভাবে ইট বালি সিমেন্ট দিয়ে (মেডিকেল কলেজ সম্প্রসারণের জন্য অদূরেই প্রচুর ইট বালি ছিল।) প্রথম শহিদ মিনারের কাজ সম্পন্ন করেছিল। শহিদ মিনারটির নকশায় সাড়ে ৯ ফুটের পরিকল্পনা থাকলেও কাজ শেষে তা প্রায় ১১ ফুট উচ্চতা হয়েছিল। শহিদ মিনারের নিচের অংশ লাল কাপড়ে জড়িয়ে উপরের অংশে দুটি হাতে লেখা পোষ্টার লাগিয়ে দেওয়া হয় । একটি পোষ্টারে লেখা ছিল “শহীদ স্মৃতি অমর হোক” আর একটিতে লেখা ছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। শহিদ মিনারের সামনের অংশ দড়ি দিয়ে ঘিরে একটি বড় কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। হাজার হাজার আবাল বৃদ্ধ বনিতা প্রতিদিন লাইন করে দাঁড়িয়ে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো ছাড়াও বিছিয়ে রাখা কাপড়ে সাধ্যমত টাকাপয়সা দিয়েছিল। এমনকি অনেক গৃহবধু তাদের গায়ের গয়না পর্যন্ত দান করেছিল। ’৫২ ’র ভাষা আন্দোলনের এই শহিদ মিনার মোট ২ বার উদ্বোধন করা হয়েছিল।
প্রথমবার শহিদ শফিউর রহমানের পিতাকে এনে ২৪শে ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। ১৯৫২ সালর ২৬শে ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী এবং প্রতিক্রিয়াশীলদের সমর্থনপুষ্ট হয়ে একদল পুলিশ ঐতিহাসিক শহিদ মিনারটি গুড়িয়ে দিয়েছিল।
শহিদের কবর: ২১শে ফেব্রুয়ারি নিহত ছাত্রদের মৃতদেহ মেডিকেল কলেজের মর্গে ছাত্ররা বিশেষ প্রহরায় রেখেছিল। পরের দিন মৃতদেহ নিয়ে শোকমিছিল করার কথা ছিল। কিন্তু রাত আনুমানিক ২ টার সময় সশস্ত্র পুলিশ একদল পাঞ্জাবী সৈন্যের সাহায্যে মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও করে মৃতদেহগুলি নিয়ে যায়। মেডিক্যাল কলেজের ২ জন ছাত্র কারফিউর মধ্যে সৈন্যদের পিছন পিছন বেরিয়ে পড়ে। আজিমপুর কবরস্থানে সৈন্যরা মৃতদেহ কবর দিয়ে চলে যাবার পর ঐ ২ জন ছাত্র শহিদদের কবর চিহ্নিত করে রাখে।
বাায়ান্ন সালের ২১শে ফেব্রয়ারি বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে (আনুমানিক ৩ টায়) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোষ্টেল প্রাঙ্গনে বা পাশ্ববর্তী এলাকায়, ২২শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় আর দুপুরে নওয়াবপুর রোডে, বংশাল রথখোলার মোড়ে, জনসন রোডে বাংলা ভাষার দাবীতে অথবা ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন–শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের সংখ্যা কত, কী তাদের পরিচয়? আজো আমরা তা সঠিকভাবে জানি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) থেকে শহীদদের সম্মন্ধে নিম্নোক্ত তথ্য পরিচয় পাওয়া যায়।
রফিক উদ্দিন আহমদ (শহিদ-২১/০২/’৫২
পরিচয়: মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের
বানিজ্য বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র।
জন্ম: ১৯৩২
জন্মস্থান: পারিল
থানা: সিংগাইর
জেলা: মানিকগঞ্জ
পিতা: মরহুম আব্দুল লতিফ
মাতা: রাফিজ খান
আব্দুল বরকত (শহিদ ২১/২/১৯৫২)
পরিচয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের
এম এ ক্লাসের ছাত্র
জন্ম: ১৬জুন, ১৯২৭
জন্মস্থান: বাবলা, ভরতপুর
জেলা: মুর্শিদাবাদ (ভারত)
ঢাকার ঠিকানা: বিষ্ণুপ্রিয়া ভবন, পুরন পল্টন,ঢাকা
আব্দুল জব্বার (শহিদ ২১/০২ /৫২)
পরিচয়: ১৯৫১ সালে তৎকালীন ন্যাশনাল
গার্ড পি.এন.জি এর সদস্য
জন্ম: সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি
জন্মস্থান:পাঁচাইরা
থানা: গফরগাঁও
জেলা: ময়মনসিংহ
পিতা: মরহুম আব্দুল কাদের
শফিউর রহমান
(শহীদ ২২/ ০২/৫২, নবাবপুর রোড)
পরিচয়: বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের ছাত্র এবং হাইকোর্টের কর্মচারী
জন্ম: ১৯১৮ (তথ্য : সাপ্তাহীক সনৈক)
জন্মস্থান:কোন্নাগর, হুগলি (ভারত)
পিতা:মরহুম মাহবুবুর রহমান
ঢাকার ঠিকানা: হেমেন্দ্র দাস রোড, ঢাকা
আব্দুস সালাম
এবং হাসপাতালে মৃত্যু ৭/০৪/৫২
পরিচয়: শিল্প বিভাগের পিয়ন
জন্ম: সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি
জন্মস্থান: লক্ষণপুর
জেলা: ফেনী
পিতা: মরহুম মোহম্মদ ফাজিল মিঞা
অহিউল্লাহ (শহিদ ২২/০২/৫২, নবাবপুর)
গুলিবিদ্ধ হন ২১/০২/৫২
পরিচয়: শিশু শ্রমিক
জন্ম: ১৯৪২(আনুমানিক)
পিতা: রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমান
(সাপ্তাহীক নতুন দিন পত্রিকার মতে অহিউল্লাহ ২১/২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে গুলিতে নিহত হন এবং পুলিশ লাশ অপসারণ করে।)
আব্দুল আওয়াল (শহিদ ২২/০২/৫২)
পরিচয়: অঞ্জাত
পিতা: মোহম্মদ হাশিম
বেসরকারি তথ্যানুসারে জনাব আওয়াল ২২ ফেব্রুয়ারি বিশাল শোক মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। উক্ত মিছিল কার্জন হলের সামনের রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি ট্রাক মিছিলটির উপরে চালিয়ে দেওয়া হয়। এই ট্রাকের নিচে জনাব আওয়ালের মৃত্যু হয়। অবশ্য সরকারি (তখনকার পাকিস্তানি সরকার) বক্তব্য অনুসারে ২২ ফেব্রয়ারি মোটর দুর্ঘটনায় আব্দুল আওয়াল নিহত হন।
অজ্ঞাত বালক (শহিদ ২২/০২/৫২)
তবে এই বালকের মৃত্যু সর্ম্পকে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ সরকারের জারিকৃত প্রেসনোটে কিছুটা উল্লেখ আছে। আলোচ্য প্রেসনোটে বলা হয় যে সম্ভবত মোটর দুর্ঘটনায় বালকটি মারা গিয়াছে তাহার মৃত্যু সম্পর্কে আরো তদন্ত চলিতেছে। উল্লেখ্য, পরবর্তীকালে এই তদন্তের রিপোর্ট আর প্রকাশিত হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে একথা বলা যায়, ২২শে ফেব্রয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে শোক শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল অজ্ঞাতনামা বালক তাতে অংশ নিয়েছিল। শোভাযাত্রাটি ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্য সশস্ত্র বাহিনীর ট্রাক মিছেলের মাঝ বরাবর চালিয়ে দিলে এই অজ্ঞাত বালকটি নিহত হয়।
মূর্ত স্মৃতি: ভাষা শহিদদের স্মৃতি তাঁদের ত্যাগের মহিমা এতদিন মিনারের মাঝে একাত্ম হয়েছিল। স্বভাবতই আমাদের বিক্ষিপ্ত মন এবং ব্যস্ত জীবন থেকে তারা হারিয়ে যায় বারে বারে। অনেকদিন ধরেই আমরা আশা করছিলাম শহিদ মিনারের পাশাপাশি বরকতদের পোর্টেট থাক সারা বাংলাজুড়ে। উদ্যোগের অভাবে হোক আর উদ্দিপনার অভাবেই হোক, কয়েক যুগ অতিক্রান্ত হলেও ভাষা শহিদদের দেখা মেলে না তেমন কোথাও। অথচ বাংলার অস্তিত্বের লড়াইয়ে তাঁরাই ছিলেন প্রথম আত্মত্যাগী বীর সেনা।
ভাষা শহিদদের নিয়ে প্রথম একক স্থাপনাটি ডাকসু সংগ্রহশালার দেয়ালে স্থাপিত হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ২০০৬-এ (উদ্বোধন)। ডাকসু সংগ্রহশালার সামনের দেয়ালে চারুকলার ছাত্র শিল্পী আব্দুল আযীয (বর্তমানে চারুকলার শিক্ষক) বায়ান্নর মহান ভাষা শহীদের একটি প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন। এরপর ডাকসু সংগ্রহশালার সংগ্রাহক, আলোকচিত্রী গোপাল দাস’র উদ্যোগে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় চিত্রকর্মটি টাইলস মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ম্যুরাল চিত্রে রূপান্তর করা হয়েছে।
ভাষা শহিদদের নিয়ে প্রথম ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে বাংলা একাডেমি চত্বরে। আবক্ষ আস্কর্যটি ভাষা সৈনিক সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরকে নিয়ে। ভাস্কর্যটির ভাস্কর অখিল পাল। ভাষা সৈনিকদের মূর্তি ছাড়াও রয়েছে ভাষা আন্দোলন, বর্ণমালা ও বাংঙালি সংস্কৃতি নিয়ে টেরাকোটা। দুই ধাপে সাড়ে ১৭ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটিতে ৬ ফুট উপরে তৈরি করা হয়েছে আবক্ষ মূর্তিগুলো। নিচের প্রথম ধাপ গোলাকার ফুলের পাঁচটি পাপড়ির আদলে গড়া। তার উপরে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। টেরাকোটায় ফুটে উঠেছে ’৫২ ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্ত।
বরকত যাদুঘর: ভাষা শহিদ আবুল বরকত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। শহিদ বরকতের স্মৃতি বিজড়িত সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ভাষা শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। জাদুঘরটি সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।
শেষ কথা: ইতিহাস অনেকভাবে লেখা য়ায় তবে সত্য সতই। ভাষা শহিদ অজ্ঞাত বালকের মৃত্যুর মতো সত্য, শান্ত নিরীহ বরকতের চলে যাওয়ার মতো সত্য, জীবনের দাম দিয়ে রক্ষা করা মায়ের ভাষার মতো সত্য, শহিদ মিনারের সত্য, বাঙালির সত্য, বাংলা ভাষার সত্য, চীর অম্লান সত্য।
“ পাগল ছেলে”
মা পড়ে আর হাসে ,
“তোর উপরে রাগ করতে পারি!”
নারকেলের চিড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে
এটা সেটা আরো কত কি!
তার থোকা যে বাড়ী ফিরবে!
ক্লান্ত খোকা!
– আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
তথ্যসূত্র:
ডাকসু সংগ্রহশালা
এশিয়াটিক সোসাইটি
বাংলাপিডিয়া
একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস: আহমদ রফিক
ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি: বদরুদ্দিন ওমর