জনগণের প্লাটফর্ম তাহলে কোনটা?

follow-upnews

জনগণের মধ্য থেকে দেশ-সামজ-রাজনীতি নিয়ে ভাবছে এমন লোকদের খুঁজে খুঁজে বের করে একেবারে তৃণমূলে গিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু শাহবাগে বসে ‘যুদ্ধাপরাধীরে বিচার চাই’ বলে সবটুকু লাভ হবে না, সে লাভ ক্ষণিকের, জনগণের জন্য রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করতে চাইলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে।

0 0

সামগ্রিকভাবে দুর্বত্তায়নের বিরুদ্ধে কথা বলা আর জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলা কিন্তু এক কথা নয়। জামায়াত ইসলামী সিম্বলিক শত্রু হয়ে গেল বড় সমস্যা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে জামাতের ডুবন্ত শক্তি জামাতের বিরুদ্ধে কথা বলে (নিজেদের বিরুদ্ধে), যুদ্ধপরাধীদের বিচারের কথা বলে আওয়ামীলীগ তথা সরকারের মধ্যে জায়গা করে ফেলবে, তারা ঠিকই টিকে থাকবে এবং সাবমার্জড থেকে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। 

ইসলামী ব্যাংক তো ঠিক এভাবেই সরকারের সাথে একাট্টা হয়ে গেল! বিপদে পড়ছে জামায়াতের ভাসমান শক্তি, এদের একটা অংশ সরসরি মিশনে অংশ নিচ্ছে, মারছে এবং মরছে। এই যে ‘স্থায়ী শত্রু চিহ্নিতকরণ তত্ত্ব’ দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে এতে জনগণের বড় ধরনের কোনো লাভের জায়গা এখনো তৈরি হয়নি, তা সে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হলেও না।

এদেশের দুর্বৃত্তদের একটা কমন ডায়লগ হচ্ছে ‘ওরা জামায়াত’। এতে জামায়াতের তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। দুর্বত্তের সংখ্যা বাড়ছে, পুরনো কাঁটার সাথে নতুন কাঁটা যুক্ত হচ্ছে। শুধু জামায়াত জামায়াত খেলা খেলে খুব বেশি এগোনো যাবে না, একেবারে তথ্য প্রমাণসহ দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।

এক্ষেত্রে গণমাধ্যম সবচেয়ে বড় রোল প্লে করতে পারত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বেশিরভাগ মিডিয়াগুলো ওদেরই (দুর্বৃত্তের)। প্রথম আলো জনগণের পক্ষে অনেক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারত, তারা সেটা করেনি, আনিসুল হকেরা খুবই অন্যায্যভাবে, একজন লতিফুর রহমানের ঘাড়ে চেপে নিজেদের আখের গুছিয়েছে এবং গোছাচ্ছে।

ফলে জনগণের জন্য কোনো প্লাটফর্ম এদেশে এখনো তৈরি নেই। গণজাগরণ সেরকম একটি প্লাটফর্ম হতে হতে শেষ পর্যন্ত হতে পারেনি। ঐ দুর্বৃত্তরাই কৌশলে এটিকে প্রচলিত ধারার বাম রাজনীতির সাথে জুড়ে দিয়ে শক্তিহীন করে দিয়েছে। কলকাতার আম আদমি পার্ট কিন্তু ডান বাম কোনো পরিচয় ধারণ করে মাঠে নামেনি। কেজরিওয়াল এক্ষেত্রে চমৎকার একটি কাজ করেছেন। কোনো আদর্শর ধ্বজা ধরেননি। সরাসরি জনগণের সমস্যার জায়গা নিয়ে কথা বলেছেন। এতে জনগণের আস্থা তিনি অর্জন করতে পেরেছেন। ফলাফল পেয়েছেন হাতেনাতে।

গণজাগরণ মঞ্চের সমস্যা হচ্ছে তারা একটি আদর্শর ওপর ভর করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি প্লাটফর্ম নষ্ট করে দিয়েছে। তাছাড়া শুধু মুখপাত্র দিয়ে হয় না, দরকার ছিল একটি কাঠামো, সেটি আমরা গঠন করতে পারিনি। এক্ষেত্রে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের রাজনীতিক জ্ঞানের অভাব অনেকাংশে দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী তাকে যারা পরিচালনা করেছে। এখনো যে সম্ভাবনা একেবারে নেই তা নয়। সেক্ষেত্রে প্রচুর হোমওয়ার্ক দরকার, একই সাথে সিপিবির সাথে তাদের যে সখ্যতা তৈরি হয়েছে সেখান থেকেও বেরিয়ে আসা দরকার। সখ্যতা থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশের সামাজিক কনটেক্সট বিবেচনায় সেটিকে সামনে আনার সুযোগ নেই। বামদলের সাথে যুক্ত থেকে যারা নিধিরাম সর্দার হিসেবে ইতিমধ্যে জনগণের মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন তাদেরকে মঞ্চে তুলে জনগণের আস্থা অর্জন করা যাবে না। তাদের সাথে সম্পর্ক গোপন করতে পারতে হবে। রাজনীতিতে ‘পরকীয়া’ একটি শিল্প, এই শিল্পটি আয়ত্ত করতে না পারলে হবে না।

প্রকাশ্যে রাখতে হবে জনগণ, জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব দিয়ে মঞ্চ পরিচালনা করতে হবে। আসলেই ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য থাকলে নিজেকে আড়াল করতে জানতে হবে। লাফ দিয়ে মঞ্চে উঠে তেমন কিছু অর্জন করা যাবে না। জনগণের মধ্য থেকে দেশ-সামজ-রাজনীতি নিয়ে ভাবছে এমন লোকদের খুঁজে খুঁজে বের করে একেবারে তৃণমূলে গিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু শাহবাগে বসে ‘যুদ্ধাপরাধীরে বিচার চাই’ বলে সবটুকু লাভ হবে না, সে লাভ ক্ষণিকের, জনগণের জন্য রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করতে চাইলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে।

Next Post

অস্তিত্বের একুশ: ইতিহাসের পুনর্পাঠ

অস্তিত্বের একুশ থুতু তোদের ওই বন্দুকের নলে, বেনিয়া তোদের হিংস্র বুলেট বারুদ ভরা বুক বিদ্ধ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল সেদিন মুক্তির আগুন। তোদের বর্বর বুলেট  গিয়ে বিঁধেছিল শান্ত ঐ বরকরতের বুকে! পিছনে তাকিয়ে দেখি লুটিয়ে পড়েছে অজ্ঞাৎ এক বালক, একটু অদূরেই গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে অহিউল্লাহ; করুণ রক্ত ধুলায় গোধুলী আলো […]