ছেলে হত্যার বিচার পাবার আশা করি না -অজয় রায়

দুই বছরেও গ্রেপ্তার হয়নি বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীরা। পুলিশ এখন পর্যন্ত সনাক্তও করতে পারেনি তাদের। যদিও পুলিশের দাবি, ‘খুনি শনাক্ত হয়েছে’ এবং ‘পুলিশের নজরদারিতে’ রয়েছে। যেকোনো সময় খুনিকে গ্রেফতার করা হবে।

বছরখানেক ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এমন কথা। অভিজিতের বাবা অজয় রায় পুলিশের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তিনি বলছেন, “পুলিশের কাছে গেলেই বলে, খুনি শনাক্ত হয়েছে, পুলিশের নজরদারিতে আছে। শিগগির খুনিকে গ্রেফতার করা হবে। আমি পুলিশের ‘খুনি নজরদারিতে’ এই কথার অর্থ বুঝি না।”

অজয় রায় বলেন, “ছেলে হত্যার বিচার পাবো বলে আর বিশ্বাস করি না। পুলিশ আমাদের কোনো কিছু জানায় না, খোঁজও নেয় না। তিন মাস আগে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। শুধু বলে তদন্ত চলছে।”

অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-দক্ষিণ) উপ কমিশনার (ডিসি) মাসরুকুর রহমান খালেদ বলেন, “এই মামলায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পলাতক ওই সাতজনের অন্যতম ছিল শরিফ। গত জুনে শরিফ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।”

ডিসি মাসরুকুর আরও বলেন, “এই মামলার খুনি শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। খুনিকে গ্রেফতার করতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখছি না। আশা করছি অচিরেই খুনি গ্রেফতার হবে।”

লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর দেশে-বিদেশে তোলপাড় হলেও এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি। গত বছরের ১৯ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেড ছয় জঙ্গির নাম-ঠিকানা ও ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে হাদী নামে একজনের ছবি দিয়ে অভিজিৎ হত্যায় জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। পরে সেই শরিফুলও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

ওই সময় ডিবির কর্মকর্তারা জানান, বহু নামে পরিচিত শরিফুল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সামরিক শাখার শীর্ষ নেতা। অভিজিৎ হত্যায় সরাসরি অংশ নেন শরিফুল।

তদন্ত কর্মকর্তারা আরও বলেন, “অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বইমেলায় শরিফুলের নেতৃত্বে অভিজিৎ রায়কে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের ২ মিনিট আগেও তার নেতৃত্বে কয়েকজনকে অভিজিৎ রায়ের পিছু নিতে দেখা যায়। এছাড়া ওয়াশিকুর বাবু হত্যা মামলায় গ্রেফতার আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।”

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খুন হন অভিজিৎ রায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন।

ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশকে সহায়তা করতে ঢাকায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে দাবি পুলিশের। ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী এবং সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস খুনের আসামি মান্নান ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহীর বিরুদ্ধে অভিজিৎ হত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

গ্রেফতার অন্য ছয় জন ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমান, সাদেক আলী, আমিনুল মল্লিক, জুলহাস বিশ্বাস, আবুল বাশার ও জাফরান হাসানের মধ্যে কেউ সরাসরি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।