ঠিকানা: ১০৪/১, মেরাদিয়া নয়াপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা-১২১৯
ঘটনাটা ঘটেছিল ১২ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে। ঘটনার দিন পাকিস্তানি বাহিনীর দুজন সেনা সদস্য মাদারটেক থেকে নৌকা দিয়ে মেরাদিয়া আসে। তখন এখানে গ্রাম থেকে গ্রামে নৌকায় চলাচল করা যেত। মাদারটেকে ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। মেরাদিয়া গ্রামে কিছু মুক্তিবাহিনী অবস্থান গ্রহণ করেছে– এরকম খবর পেয়ে ওরা খোঁজখবর করতে এসেছিল। একজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল, আরেকজন ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে বিভিন্ন খোঁজখবর নিচ্ছিল। এরপর ছেলেদের ওরা বাধ্য করে কিছু মুরগী ধরে দেওয়ার জন্য। অদূরেই দুজন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন— রামপুরা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ লিয়াকত আলী, এবং তফাজ্জল হোসেন। লিয়াকত আলী তফাজ্জল হোসেনকে অস্ত্র হাতে দাঁড় করিয়ে রেখে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রহরারত সদস্যের দিকে এগিয়ে যায়। তফাজ্জলকে বলে গিয়েছিল বিপদের সময় যেন সে অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসে। লিয়াকত আলী পাকিস্তানি বাহিনীর প্রহরারত ঐ সদস্যকে পিছন থেকে শক্ত হাতে জাপটে ধরে। তফাজ্জল সময় মতো পৌঁছুতে না পারায় পাকিস্তানি বাহিনীর ঐ দুই সদস্য লিয়াকত আলীকে ব্যাপক মারধর করে, তাঁর কপাল ফেটে যায়, এবং একটি চোখ গুরুতরভাবে জখম। অজ্ঞান হয়ে গেলে ওরা লিয়াকত আলীকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। এই ঘটনার পর ঐদিন দুপুরের দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি বড় দল মেরাদিয়া ঘেরাও করে। লুটপাট এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। আগে থেকেই গ্রামের পুরুষ লোকেরা পালিয়েছিল, তাই ওরা তেমন কাউকে আর খুঁজে পায়নি। বেলা তিনটার দিকে আমার পিতা আইয়ুব আলী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে শহরের দিকে রওনা হন। নৌকা মাদারটেকের কাছে আসার সাথে সাথে অপেক্ষা করে থাকা পাকিস্তানি বাহিনী নৌকাটিকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। অন্যরা পানিতে লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচাতে পারলেও আমার পিতা আইয়ুব আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এরপর আমার মা আমাদের পাঁচ ভাইবোনকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন।