শিক্ষার মানোন্নয়নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার খসড়ায় প্রভাষক নিয়োগ থেকে শুরু করে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির অভিন্ন মাপকাঠি রাখা হয়েছে।
প্রভাষক পদে প্রয়োজনে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিতে প্রস্তাব করেছে ইউজিসি।
খসড়া নীতিমালায় এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রার্থীদের অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাবনা এসেছে।
‘অভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের নীতিমালা’ নিয়ে ইউজিসি বলছে, অভিন্ন নীতিমালা হলে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি একটি কাঠামোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে। শিক্ষকদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে খসড়াটি।
খসড়া নীতিমালায় প্রভাষক নিয়োগে আলাদা আলাদা অনুষদের জন্য আলাদা যোগ্যতা ধরা হয়েছে।
তবে প্রত্যেক অনুষদে আবেদনের জন্য এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ধরা হয়েছে ৪.৫০।
বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক, ব্যবসায় প্রশাসন ও আইন বিভাগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের ক্ষেত্রে জিপিএ ৪ এর মধ্যে সিজিপিএ ৩.৫০ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে কলা ও মানবিক বিভাগের ক্ষেত্রে সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে একটিতে ন্যূনতম ৩.২৫ এবং অন্যটিতে ন্যূনতম ৩ পয়েন্ট থাকলে আবেদনের যোগ্য হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, চারুকলা ও মেডিসিন অনুষদে
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি এবং থিসিসসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।
স্নাতক পরীক্ষায় সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে থাকতে হবে ন্যূনতম সাড়ে সিজিপিএ-৩। শুধুমাত্র স্থাপত্য বিভাগে ৪ বছর মেয়াদী পরীক্ষায় ৪ এর মধ্যে ন্যূনতম সিজিপিএ-৩.২৫ থাকতে হবে।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় চারুকলার ক্ষেত্রে সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ন্যূনতম ধরা হয়েছে সিজিপিএ-৩.৫।
মেডিকেল বিষয়ের প্রার্থীদের এমবিবিএস বা সমমানের ডিগ্রি, নির্দিষ্ট বিষয়ে এমফিল, এমএসসি, পিএইচডি বা ডি ফার্মা ডিগ্রি অথবা সেই বিষয়ে সমমানের পোস্ট গ্রাজুয়েট যোগ্যতা ধরা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়/ কৃষি প্রাধান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে
সংশ্লিষ্ট বিভাগে ৪ বছর মেয়াদী সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি এবং থিসিসসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।
টেকিনিক্যাল বিভাগে সংশ্লিষ্ট অনুষদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্নাতক/ডিভিএম পরীক্ষায় সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে সাড়ে সিজিপিএ-৩ থাকতে হবে। নন-টেকনিক্যাল বিভাগের জন্য সংশ্লিষ্ট অনুষদের ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে থাকতে হবে সিজিপিএ-৩.৫।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান সমুন্নত রাখা ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের মেধাভিত্তিক অবস্থান ৭ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে। এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাক্রমকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিবেচনা করা হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রার্থীর পরীক্ষার ফল প্রকাশ অপেক্ষমান থাকা সময়ে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রার্থীদের অতিরিক্ত যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। তবে অন্যান্য শর্ত কোনভাবে শিথিলযোগ্য হবে না।
‘সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক নিয়োগের জন্য প্রয়োজনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে একটি শর্টলিস্ট তৈরি করে সাক্ষাৎকারের জন্য আহ্বান করা যেতে পারে।’
অনলাইন ও দূরশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডিগ্রি বিবেচ্য হবে না বলে খসড়ায় বলা হয়।
‘জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে ইউজিসি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবসহ প্রশাসনের কয়েকজন সিনিয়র সচিবের আলোচনাকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের বিষয়টি প্রাধান্য পায় বলে জানায় ইউজিসি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ইউজিসিকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অভিন্ন নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়নের নীতিমালা প্রণয়নের অনুরোধ করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে সুপারিশ দিতে কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লাকে আহবায়ক করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের কোনো সমন্বিত নীতিমালা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নির্ভর করে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের ওপর। অভিন্ন নীতিমালা প্রণীত হলে উচ্চশিক্ষার জন্য তা যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করবে।
খসড়াটি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খসড়া নিয়ে আলোচনা করে মতামত ব্যক্ত করবেন। এরপর চূড়ান্ত করা হবে।