ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা এখন সারা দেশে প্রধান আলোচনার বিষয়। এই অভিযুক্ত তরুণ আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ। জানা গেছে সাফাতের সঙ্গে তার বন্ধুরাও ছিল। এদেরকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফুঁসে উঠেছে তরুণ প্রজন্ম। এই কাতারে সামিল হয়েছেন অভিনয় শিল্পীরাও। এদেরই একজন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি সকলকে আপন জুয়েলার্স বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন।
৯ মে ফেসবুকে এক পোস্টে সুবর্ণা লিখেছেন, ‘ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স যখন টেনে হিঁচড়ে এক যাত্রীকে প্লেন থেকে বের করে দিলো, তখন কিন্তু তাদের সিইও জনসমক্ষে ক্ষমা চাননি। যখন জনগন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউনাইটেডকে বয়কট করলো, যখন তাদের শেয়ারের মূল্যে ধস নামলো, যখন তারা কয়েক দিনের মাথায় ১ বিলিয়ন ডলারের মতো সম্পদ হারালো, তখন সিইও জনসমক্ষে আসলেন। বললেন, খুব ভুল হয়ে গেছে— মাফ করে দিন।
কাল থেকে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, বলছেন যেহেতু প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে, কয়েকদিন মিডিয়া একটু হইচই করবে, তারপর ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেওয়া হবে। এটা হওয়ার সম্ভাবনা নেহায়েত কম নয়। কিন্তু এবার আমাদের একটা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে। যারা গয়নাগাটি কিনে থাকেন, তাদের জন্য আপন জুয়েলার্স একটি অতি পরিচিত নাম। আমাদের উচিত আপন জুয়েলার্সকে সম্পূর্ণভাবে বয়কট করা। যতগুলো ঘরে ফেসবুক রয়েছে, সেইসব পরিবার যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেয়– আপন জুয়েলার্স থেকে আর কোনো কেনাকাটা করা হবে না— বিশেষ মূল্যছাড় দিলেও না; তখন ওদের বিবেক ওদের কিছু বলুক আর না বলুক, আসন্ন ঈদ ও বিয়ের মৌসুমে ওদের ব্যালেন্স শিট অন্তত ওদেরকে জানিয়ে দিবে— কাজটা ঠিক হয়নি। বলতে পারেন, এরা ইতিমধ্যেই যত টাকা বানানোর বানিয়ে ফেলেছে— এসব করে কি আদৌ কোনো লাভ হবে? একই কথা কিন্তু ইউনাইটেড এর মতো কোম্পানির ক্ষেত্রেও বলা যেত— কিন্তু মানুষ সত্যি ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে, বয়কটের প্রভাব একেবারে নগণ্য নয়। এমনকি ইজরাইলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র বিডিএস মুভমেন্ট দ্বারা এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, তারা এখন অ্যান্টি-বিডিএস মুভমেন্টের পেছনে যথেষ্ট টাকা ব্যয় করছে। এ ধরনের কেইসে আমরা সবসময় শুনে থাকি— আইন তার নিজ গতিতে চলবে। এবার আমাদের বলার পালা— ক্রেতারাও তার নিজ বিবেচনায় বেচা-কেনা করবে।
প্রসঙ্গত, ‘মাসখানেক আগের এই ঘটনাটি নিয়ে গত শনিবার মামলা দায়ের করা হয়। এরপর পরই তুমুল আলোচনার মধ্যে ধর্ষিত এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ তিনি ও তার বান্ধবী আরেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিলেন সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ।
ধর্ষণে সহযোগিতা করায় পিকাসো রেঁস্তোরার অন্যতম মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের দেহরক্ষী ও গাড়িচালককেও ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি করা হয়েছে।
তবে প্রধান আসামি সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের দাবি, ষড়যন্ত্র করে তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন শারীরিক সম্পর্কের কোনো ঘটনা ঘটলে তা উভয় পক্ষের ইচ্ছানুসারে ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি। এতেও বাড়ছে সমালোচনা।
এক তরুণী সংবাদ মাধ্যমগুলোকে জানিয়েছেন, তারা অনেক চিৎকার করেছেন। ওদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। সাফাত ও নাঈমের হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন এমনকি নিজেদের সম্ভ্রম ভিক্ষাও চেয়েছেন তারা। কিন্তু রেহায় পাননি।
এদিকে, সাফাতের মাদকাসক্তির কথা তার সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাও জানিয়েছেন।
অপরদিকে ধর্ষিতাদের ‘ইচ্ছা অনুযায়ী’ মামলাটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশও তদন্তে থাকবে। ১৯৭৩ সালে ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠিত হয় আপন জুয়েলার্স। বর্তমানে ঢাকায় তাদের ৭টি বিক্রয় কেন্দ্র আছে।