Headlines

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন: প্রভাষক হতে ৩-২০ লাখ টাকা লেনদেন

অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ ও টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলছে, যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা বাস্তব। কত শতাংশ অনিয়ম-দুর্নীতি হলো, সেটা বিচার করছি না। কারণ, নিম্ন মেধার একজন শিক্ষক নিয়োগ হলে প্রায় ৪০ বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন। তাই এ ধরনের একটি ঘটনা হলেও তা মানতে চাই না। এটি অশনিসংকেত।’

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রভাষক নিয়োগে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরল দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রভাষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ পদে নিয়োগে ৩ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির দুই গবেষক দিপু রায় ও রেযাউল করিম।

২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সালের ঘটনা নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। তবে গবেষণাটি করা হয়েছে এ বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগের আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম শুরু হয়। নিয়োগ বোর্ড গঠন, সুবিধামতো যোগ্যতা পরিবর্তন বা শিথিল করা, জবাবদিহি না থাকার মাধ্যমে এই অনিয়মের শুরুটা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের সুযোগ বিদ্যমান ছিল।

নিয়োগের আগেই আরও যেভাবে অনিয়ম শুরু হয়, তারও কিছু চিত্র তুলে ধরা হয় এই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, কোনো কোনো শিক্ষক পছন্দের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরীক্ষার ফল প্রভাবিত করেন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাজার করাসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আগে থেকেই একাডেমিক পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে নারী শিক্ষার্থীর একাংশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একাডেমিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্ন জানানো ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব অনিয়মের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর সুযোগ থাকলেও সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে সিন্ডিকেট নিয়োগ চূড়ান্ত করে।

১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টিতেই কোনো না কোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’কে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যায়নি। এ ছাড়া ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিজ্ঞপ্তির চেয়েও বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও দল ভারী করা এসব অনিয়মের একটি বড় প্রভাবক।

প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সার্বিক চিত্রটি হতাশাব্যঞ্জক ও উদ্বেগজনক। তিনি প্রভাষক নিয়োগে সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ বিধিমালা করার দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ ও টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলছে, যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা বাস্তব। কত শতাংশ অনিয়ম-দুর্নীতি হলো, সেটা বিচার করছি না। কারণ, নিম্ন মেধার একজন শিক্ষক নিয়োগ হলে প্রায় ৪০ বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন। তাই এ ধরনের একটি ঘটনা হলেও তা মানতে চাই না। এটি অশনিসংকেত।’

সংবাদ: প্রথম আলো