মেয়েদেরও স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে বিজ্ঞান থেকে নেয়া হবে ২০ শতাংশ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর আগে মহিলা শিক্ষক নিয়োগের জন্য ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও নতুন বিধিমালায় পুরুষ ও মহিলা শিক্ষকদের জন্য অভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা রাখা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অংশে বলা হয়েছে, আগের নিয়োগ বিধিতে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীদের জন্য আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল। তবে নতুন নিয়োগ বিধিতে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীদের জন্য অভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে উভয়ের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রি অথবা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদের শতকরা ২০ ভাগ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে হবে। এটি নতুন বিধি হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে।
আগে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বয়সসীমা ছিল ২৫ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু নতুন বিধিতে সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগ বিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বসয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর। নতুন এ নিয়োগ বিধিমালা প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়েছে; যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বিধিমালা-২০১৭ নামে অভিহিত হবে। সচিব কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও প্রসারের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ একান্তই অপরিহার্য। বিদ্যমান নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনপূর্বক এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিধিমালা প্রণয়নের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে প্রণীত বিধিমালায় সহকারী শিক্ষকদের সরাসরি নিয়োগ ও প্রধান শিক্ষকদের শতকরা ৩৫ ভাগ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে এবং সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৫ শতাংশ শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের বিধান ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি সরকারি কর্ম কমিশনের বিবেচনাধীন বিষয়। যার কারণে নতুন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন অপিরহার্য হয়ে পড়েছে।
আগের বিধিমালার মতোই নতুন বিধিমালার আওতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ উপজেলা বা থানাভিত্তিক হবে। সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশ ছাড়া কমিশনের আওতাভুক্ত কোনো প্রধান শিক্ষক পদে কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি নিয়োগ দেয়া যাবে না। সরকারিভাবে গঠিত কেন্দ্রীয় সহকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কাউকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন অথবা বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন; এমন ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। ১৩ থেকে ১৬ বেতন গ্রেডের কোনো পদ থেকে ১০ থেকে ১২ বেতন গ্রেডের কোনো পদে এবং ১০ থেকে ১২ বেতন গ্রেডের কোনো পদ থেকে ৯ম অথবা তদূর্ধ্ব কোনো পদে সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া যাবে। আগের বিধিতে এ শর্তগুলো ছিল না। বিদ্যমান নিয়োগ বিধির ৯ম বিশেষ বিধানে বলা ছিলÑ নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি চাকরিতে যোগদানের ৩ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ কিংবা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে ব্যর্থ হলে তার চাকরি স্থায়ী করা হবে না বলে যে শর্ত ছিল, তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২৫ থেকে ৩৫ এর স্থলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগ বিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশোধিত বয়সসীমা ২১ থেকে ৩০ করা হয়েছে। মোট পদের ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের শর্ত আগে ছিল; এখনও থাকবে। তবে নতুন করে বিধান করা হচ্ছেÑ সরাসরি নিয়োগযোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে। সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি, সহকারী শিক্ষক পদে ৭ বছরের সন্তোষজনক চাকরি এবং সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন অথবা ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন অথবা ব্যাচেলর ইন এডুকেশন ডিগ্রি থাকতে হবে। আবার সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক অথবা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩০ এর পরিবর্তে ২১ থেকে ৩০ করা হয়েছে।