বাগেরহাটের কচুয়ায় নব্য জেএমবির আস্তানায় অভিযান চালিয়ে চার জঙ্গিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার গভীর রাতে উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের জনৈক সাফায়াত শেখের পরিত্যক্ত বাগানবাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে পুলিশ জঙ্গি আস্তানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, হাতবোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, কম্পিউটার এবং বেশ কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। জেএমবির সদস্যরা ওই বাড়িতে বসে বড় ধরনের নাশকতার পরিককল্পনা নিচ্ছিল বলে পুলিশ জানায়। অভিযান চলাকালে জঙ্গিরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপ করলে পুলিশ শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে পুলিশ জানায়।
আটককৃতরা হলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কাকারবিল গ্রামের বেদার উদ্দিন মোল্লার ছেলে আকাশ মোল্লা ওরফে বাবু, (১৯), পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার রগুনাথপুর গ্রামের লোকমান ফরাজীর ছেলে কবিরুল ইসলাম ওরফে কবির মহুরী (২৬), পিরোজপুরের মাছিমপুরের আব্দুল হাই শেখের ছেলে মো. হাবিবুল্লাহ (১৯) এবং একই জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর সোনাখালী গ্রামের শাহাজাহান হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান (২১)। এরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তারা নব্য জেএমবির সদস্য বলে পুলিশ জানায়।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন আজিজ, মতিন এবং আজাদ। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, খলিশাখালী গ্রামের ওই বাড়িতে নব্য জেএমবি সদস্যরা গোপন বৈঠক করছিলেন এবং তারা রাষ্ট্রবিরোধী ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানোর উদ্দেশ্যে প্রস্ততি নিচ্ছে- এমন গোপন খবর পেয়ে কচুয়া থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালে জঙ্গিরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা জবাব হিসেবে শটগানের গুলিবর্ষণ করে। একপর্য়ায়ে সেখান থেকে চার জঙ্গি সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় জঙ্গিদের আস্তানা থেকে একটি রিভলবার, দুটি রাউন্ড গুলি, পাঁচটি হাতবোমা, কিছু বোমা তৈরির সরঞ্জাম, একটি কম্পিউটার এবং কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা স্বীকার করেছেন দেশব্যাপী তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। আটক কচুয়ার জঙ্গি আকাশ মোল্লা ওরফে বাবুর কাকারবিল গ্রামের বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে জঙ্গিদের আসা-যাওয়া ছিল। তাদেরকে জিজ্ঞাসবাদ করা হচ্ছে এবং মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসী জানায়, গভীর রাতে গুলির শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। ভোরে ওই বাড়িতে গিয়ে তারা জানতে পারেন জঙ্গিদের ধরতে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। পুলিশ সেখান থেকে চার জঙ্গিকে ধরে নিয়ে গেছে। মঘিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মনিরুজ্জামান শেখ জানান, ওই বাড়িটি প্রায় পাঁচ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। গাছপালায় ভরপুর বাড়িটির পাশ দিয়ে ছোট খালও রয়েছে। পাশে বিকল্প রাস্তা থাকায় ওই বাড়ির সামনে দিয়ে মানুষের চলাচল অনেকাংশে কম। পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে সুযোগ বুঝে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল।
খবর: কালের কণ্ঠ, ছবি: বাংলা নিউজ ও কালের কণ্ঠ