ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মায়ের অপরাধের জের ধরে নুসরাত জাহান স্বর্ণা নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক সরকারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, গত সোমবার স্বর্ণা স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক তাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়ে পরবর্তীতে আর স্কুলে যেতে নিষেধ করেছেন। এতে স্বর্ণার নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণার বাড়ি গৌরীপুর পৌর শহরের ইসলামাবাদ মহল্লায়। তার বাবা শহীদুল ইসলাম খান পেশায় ব্যবসায়ী। মা নাছিমা আক্তার গৃহিনী। গত শনিবার স্বর্ণার মা নাছিমা আক্তার প্রতিবেশী নারী সেলিনাকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে লোমহর্ষক নির্যাতন করেন।
অভিযোগ আছে, স্বর্ণার বাবার সাথে পরকীয়ার সন্দেহে তার মা নাছিমা আক্তার পরিবারের লোকজন নিয়ে সেলিনার ওপর নির্যাতন চালায়। পরে গত রোববার নির্যাতনের ঘটনায় স্বর্ণার মা নাছিমা আক্তার, নানী হাবিলা আক্তার ও স্বর্ণাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে স্বর্ণার মা ও নানীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। তবে স্বর্ণার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে থানা থেকে ছাড়া পেয়ে গত সোমবার স্বর্ণা নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্কুলে গেলে একজন শিক্ষক স্বর্ণাকে প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়ে বলেন, “এই মেয়েকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।” একথা শুনে প্রধান শিক্ষক স্বর্ণাকে স্কুল থেকে বের করে দেন।
এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী স্বর্ণা বলেন, “গত সোমবার রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্কুলে গেলে অ্যাসিস্টেন্ট হেড স্যার আমাকে দেখিয়ে হেড স্যারকে বলেন, ‘এই মেয়েটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।’ একথা শোনার পর হেড স্যার বলেন, ‘এই মেয়ে স্কুলে আসছে কেনো? ওকে বলো, স্কুল থেকে চলে যেতে।’ এরপর আমি স্যারের কাছে জানতে চাই, কবে স্কুলে আসবো আর রেজিস্ট্রেশনের বিষয় জানতে চাইলে জবাবে স্যার বলেন, তোর আর স্কুলে আসা লাগবে না, রেজিস্ট্রেশনও করা লাগবে না।”
অপরদিকে, স্বর্ণার মামা মোস্তাকিম বলেন, “যেহেতু স্বর্ণা কোনো অপরাধ করেনি সেহেতু ধারণা করছি তার মায়ের অপরাধের জের ধরেই প্রধান শিক্ষক স্বর্ণাকে রেজিস্ট্রেশন করতে দেননি। স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন। এরপর থেকে স্বর্ণা বাসায় বসে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। তার পড়াশোনা ও স্কুলে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এনামূল হক সরকার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ওই দিন রেজিস্ট্রেশনের ছবি তোলার জন্য সবাইকে স্কুলে ড্রেস পরে আসার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্বর্ণ স্কুল ড্রেস পরে না আসাতে তার ছবি তোলা হয়নি। এছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নেই। পরবর্তীতে তার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হবে। আর স্বর্ণাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
খবর: ময়মনসিংহের স্থানীয় পত্রিকা।