সময় ।। হরিশচন্দ্র মিত্র
খেলায় মজিয়া শিশু কাটায়ো না বেলা
সময়ের প্রতি কভু করিও না হেলা।
আজি যে সময় গত হইল তোমার
আসিবে না পুনঃ তাহা আসিবে না আর।
তাই বলি বৃথা কাল করিও না ক্ষয়
আপনার কাজ কর থাকিতে সময়।
বড় কে ।। হরিশচন্দ্র মিত্র
আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।
বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার
সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার।
গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে
বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।
পরিচ্ছদ ।। হরিশচন্দ্র মিত্র
মহামূল্য পরিচ্ছদ, রতন ভূষণ,
নরের মহত্ত্ব নারে করিতে বর্ধন।
জ্ঞান-পরিচ্ছদ, আর ধর্ম-অলঙ্কার,
করে মাত্র মানুষের মহত্ত্ব বিস্তার।
বুঝিবে সে কিসে
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।
যতদিন ভবে, না হবে না হবে,
তোমার অবস্থা আমার সম।
ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে
বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম।
দুখের তুলনা
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে !
দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার,
অমনি ‘জুতো’র খেদ ঘুচিল আমার,
পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন
নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ ?
অপব্যয়ের ফল
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
যে জন দিবসে মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি,
আশু গৃহে তার দখিবে না আর
নিশীথে প্রদীপ ভাতি।
আমার পণ ।। মদনমোহন তর্কালঙ্কার
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি ,
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে ,
আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।
ভাইবোন সকলেরে যেন ভালোবাসি ,
এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি।
ভালো ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা ,
পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা।
সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে ,
মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে।
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি ,
কিছুতে কাহারে যেন নাহি দেই ফাঁকি।
ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে ,
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।
বাবুরাম সাপুড়ে ।। সুকুমার রায়
বাবুরাম সাপুড়ে,
কোথা যাস বাপুরে
আয় বাবা দেখে যা,
দুটো সাপ রেখে যা-
যে সাপের চোখ নেই,
শিং নেই, নোখ নেই,
ছোটে না কি হাঁটে না,
কাউকে যে কাটে না,
করে না কো ফোঁসফাঁস
মারে না কো ঢুসঢাস,
নেই কোন উৎপাত,
খায় শুধু দুধভাত,
সেই সাপ জ্যান্ত,
গোটা দুই আন তো,
তেড়ে মেরে ডান্ডা
ক’রে দেই ঠান্ডা।
এমন যদি হতো ।। সুকুমার রায়
এমন যদি হতো
ইচ্ছে হলেই আমি হতাম
প্রজাপতির মতো।
নানান রঙের ফুলের পরে
বসে যেতাম চুপটি করে
খেয়াল মতো নানান ফুলের
সুবাস নিতাম কতো।
এমন যদি হতো
পাখি হয়ে পেরিয়ে যেতাম
কত পাহাড় নদী
দেশ-বিদেশের অবাক ছবি
এক পলকে দেখে সবই
সাতটি সাগর পাড়ি দিতাম
উড়ে নিরবধি।
এমন যদি হতো
আমায় দেখে এই পৃথিবীর
সবাই পেতো ভয়
মন্দটাকে ধ্বংস করে
ভালোয় দিতাম জগৎ ভরে
খুশীর জোয়ার বইয়ে দিতাম
এই দুনিয়াময়।
এমন হবে কি ?
এক লাফে হঠাৎ আমি
চাঁদে পৌঁছেছি !
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
দেখে শুনে ভাল করে
লক্ষ যুগের অন্ত আদি
জানতে ছুটেছি।
রামগরুড়ের ছানা ।। সুকুমার রায়
রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা,
হাসির কথা শুনলে বলে,
‘হাসব না-না, না-না !’
সদাই মরে ত্রাসে– ওই বুঝি কেউ হাসে !
এক চোখ তাই মিটমিটিয়ে
তাকায় আশে পাশে।
ঘুম নাহি তার চোখ আপন ব’কে ব’কে
আপনারে কয়, ‘হাসিস যদি
মারব কিন্তু তোকে !’
যায় না বনের কাছে, কিম্বা গাছে গাছে
দখিন হাওয়ার সুড়সুড়িতে
হাসিয়ে ফেলে পাছে !
সোয়াস্তি নেই মনে মেঘের কোণে কোণে
হাসির বাস্প উঠছে ফেঁপে
কান পেতে তাই শোনে !
ঝোপের ধারে ধারে রাতের অন্ধকারে
জোনাক জ্বলে আলোর তালে
হাসির ঠারে ঠারে !
হাসতে হাসতে যারা হচ্ছে কেবল সারা,
রামগরুড়ের লাগছে ব্যথা
বুঝছে না কি তারা ?
রামগরুড়ের বাসা ধমক দিয়ে ঠাসা,
হাসির হাওয়া বন্ধ সেথায়
নিষেধ সেথায় হাসা।
সংগৃহীত