ছোটগল্প: অক্সিজেন

Dibbendu Dwip

মেয়েটি ষোড়শী। বয়সের তুলনায় শরীর একটু এগিয়ে গেলে বেদনাটুকু যেমন সবসময় ঢাকা পড়ে থাকে ঠিক তেমন লাগছে ওকে তখন। সে শোকার্ত, কিন্তু তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই। উর্বশী ষোড়শীর বেদনার্ত মুখ দেখা খুব সহজ কথাও নয়। সবার আগে চোখে পড়ে যায় তার যৌবন।

আমি শয্যাশায়ী— পুরুষ মানুষের নেশার ঘোর বোধহয় মরার বেলায়ও কিছুটা থাকে। সেই ঘোরেই কিনা মেয়েটিকে মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছিলাম। ও টের পাচ্ছিল, কিন্তু টের না পাওয়ার ভণিতাটুকু করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো একজন পুরুষকে কেন গণনা করে কোনো হিসেব বের করতে চাইবে মায়ের অসুস্থতায় একজন শোকার্ত ষোড়শী?  

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভেঙে দেখি অক্সিজেন মাস্ক ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ আছি, এবং কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তাহলে আমি কি সুস্থ হয়ে গেলাম? মাস্ক আর লাগালাম না। মেয়েটি বারে বারে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কী যেন দেখছে। আমি ভাবছি— অন্যকিছু, অন্যকিছু ভাবতেই ভালো লাগছে। কভিড-১৯-এর তীব্রতা কমলেও শরীর তো এখনও সুস্থ হয়নি, তাই মন উচাটন হওয়ার কোনো কারণ নেই, কিন্তু স্বেচ্ছায় মাতাল হতে ভালোই লাগছে। 

আমি বুঝতে পারছি না— মেয়েটি কেন আমার আশেপাশে এসে ঘোরাঘুরি করছে। খুব করে আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে, আমি চোখ আধবোঝা অবস্থায়ও বুঝতে পারছি। মেয়েটি উদভ্রান্তের মতো বারে বারে ফিরে ফিরে আসছে। কিছু বলছে না, শুধু এক দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকছে। 

আমি হাত ইশারায় মেয়েটিকে ডাকলাম। ও কাছে এসে কোনো কথা না বলেই আমার মাথায় হাত রেখে বলল, “আপনি তো সুস্থ হয়ে গেছেন। আপনার তো অক্সিজেন আর প্রয়োজন নেই।” আমি কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়েই আছি। ভাবছি– স্বর্গীয় কিছু ঘটছে নাকি! করোনাক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছি, এমতাবস্থায় ষোড়শীর কোমল হাতের কুশল বিনিময়! সবকিছু খুব এলোমেলো এবং ভালো লাগছে। 

মেয়েটি আমার অক্সিজেন মাস্কটা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কী যেন ভাবছে। আমি ভাবছিলাম ও বোধহয় মাস্কটা আমাকে পরিয়ে দেবে। নাহ! ও আবার বলল, “আপনি তো সুস্থ হয়ে গেছেন, আপনার তো আর অক্সিজেন লাগছে না!” 

আমি একথা শুনে ওর হাত থেকে মাস্কটা নিয়ে মুখে লাগাতে চাইলাম। তীব্র বেগে ও সরে গেলো। বলল, “এটা আর লাগাবেন না। আপনার আর অক্সিজেন লাগছে না। আমার মায়ের খুব খারাপ অবস্থা, সকাল থেকে এখনও অক্সিজেনের ব্যবস্থা হয়নি। ডাক্তারকে ডেকে বলুন যে, আপনার আর অক্সিজেন লাগছে না।” 

মেয়েটিকে ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসতে বললাম। ডাক্তার আসলে বললাম যে, আমার আর অক্সিজেন লাগছে না। যদিও আমি জানি না অক্সিজেন আদৌ আমার লাগছে কিনা। ডাক্তার আমার অক্সিজেনটা খুলে নিয়ে ষোড়শীর মাকে লাগিয়ে দিলেন।