Headlines

সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় হলেও মাথাপিছু সবজি গ্রহণের হার মাত্র ৭০ গ্রাম!

বাংলাদেশ

আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও সবজির উৎপাদনে দেশটি ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। যেসব এলাকায় পূর্বে সবজি চাষ ছিল কষ্টসাধ্য শ্রম ও ব্যয়সাপেক্ষ সেসব জায়গাতেও এখন সবজি চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলে এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নিচু জমিতে বলতে গেলে সবজি চাষ হত না। সেসব জমিতেও এখন ব্যাপকভাবে সবজি চাষে হচ্ছে। সারা বছর সবজির এ উৎপাদনের পিছনে কৃষিশ্রমিকের নিরলস পরিশ্রম, কৃষিতে গবেষণা, আধুনিক প্রযুক্তি এবং হাইব্রিড বীজ বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে ৬৫ গুণ বড় চীন রয়েছে প্রথম অবস্থানে, ২২ গুণ বড় ভারত রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। যদিও চীন এবং ভারতেও উৎপাদন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি, বিশেষ করে চীনের উৎপাদন আকাশছোঁয়া। দেশে গত দশ বছরে সবজির উৎপাদন কমপক্ষে দশগুণ বেড়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশে সবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। দেশে এখন প্রায় ১০০ ধরনের সবজি চাষ হয়, মতান্তরে দুইশো প্রকার। স্বল্প পরিসরে চাষ হয় এমন সবজিগুলোও ধরলে বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ রকমের সবজির চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি যেসব সবজি বাংলাদেশে চাষ হয়, তার মধ্যে টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, চাল কুমড়া, পটল, ঝিঙা, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, কাঁচা মরিচ, ধুন্দল, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, শসা, ক্ষীরা, মুলা, শিম, গাঁজর, পুইশাক, লালশাক, বরবটি, সজনে, শিম, ধনেপাতা, মটরশুঁটি, কাঁচা পেঁপে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রথাগতভাবে শীতকাল বাংলাদেশে সবজি চাষের জন্য আদর্শ সময় হলেও বর্তমানে ৩০ শতাংশ সবজি উৎপাদিত হয় গ্রীস্ম ও বর্ষাকালে। গ্রীস্মকালীন সবজির মধ্যে রয়েছে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বরবটি, পটল, শসা, ঝিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, গিমা কলমি, পুঁইশাক, মুখিকচু, মানকচু, মৌলভীকচু, পানিকচু, সজনে, মিষ্টিকুমড়া ও চালকুমড়া। বর্ষাকালীন সবজির মধ্যে রয়েছে শসা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাকরোল, চাল কুমড়া, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়স, পুই শাক, লাল শাক, ডাটা শাক, পাট শাক, করলা ইত্যাদি শাকসবজি।  জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ থেকে সবজি এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে সবজির বাজার বাড়ছে। এসব কিছুর পরেও বাংলাদেশে সবজির সংকট রয়েছে। মাথাপিছু সবজি গ্রহণের পরিমাণ খুবই কম। অন্যদিকে সঠিক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের অভাবে উৎপাদিত ফল ও সবজির প্রায় ৩১ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ‘পোস্ট হারভেস্টে ম্যানেজমেন্ট অব ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবলস ফর ফুড সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স’ শীর্ষক গষেণায় বলা হয়, জমি থেকে ফসল সংগ্রহের পর ভোক্তা পর্যন্ত পোঁছাতে এই বিপুল পরিমাণ ফল ও সবজি নষ্ট হয়।  সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয় টমেটো। উৎপাদিত টমেটোর শতকরা ৪২ শতাংশ নষ্ট হয় সংগ্রহত্তোর দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে। অন্যান্য সবজির মধ্যে ফুলকপি ২২, শসা ২৪ দশমিক ৩, বাঁধাকপি ২৫ ও শিম ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ নষ্ট হয়। চীনে এত সবজি উৎপাদিত হওয়ার পরও একটি ভারসাম্যপূর্ণ দামে সেখানে সবজি বিক্রি হয়। উৎপাদন পর্যায়ে সবজি তুলনামূলকভাবে কম দামে বিক্রি হয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে— বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালের কৃষকদের উৎপাদন খরচই ওঠে না। 

দক্ষিণাঞ্চলে ঘেরের আইলে সবজি চাষ

দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়, বিশেষ করে যে জেলাগুলো মাছ চাষের জন্য বিখ্যাত, গত প্রায় দেড় দশক ধরে এ জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে সবজি চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে ঘেরের আইলে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে চাষীরা এলাকাতে সবজি চাষে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর— এ দিক থেকে উল্লেখযোগ্য জেলা। বিশেষ করে শষা, করল্লা এবং লাউ কুমড়া চাষে এ এলাকায় বিপ্লব ঘটেছে।

হাওড়ে সবজি চাষ

মাত্র কয়েক বছর আগেও হাওড় অঞ্চলে আগাম ঝড় বৃষ্টি এবং বন্যায় উঠতি বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হত। পানির তোড়ে ভেসে যেত পাকা ধান। পাহাড়ি ঢলে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ— এ ছয় জেলার কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছিলো। রোগবালাই, ধান কাটার উচ্চ মজুরী ইত্যাদি কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা বিকল্প কোনো ফসলের সন্ধান করছিলো। একসময় বোরো ধান ও মাছ শিকারই ছিল হাওরবাসীর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। তবে এখন হাওড় অঞ্চল বদলে গিয়েছে। কার্তিক মাসে হাওরের তুলনামূলক উঁচু জমি থেকে পানি সরে গেলে কৃষক ওই উর্বর পলিযুক্ত দোআঁশ মাটিতে চাষ করছেন মুলা, গাজর, আলু, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, টমেটো, খিরা, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক, মাষকলাই, মরিচ, লাউসহ নানা ধরনের সবজি ও রবি ফসল। ফলে বোরোর বাম্পার ফলন এলাকা হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের মতো হাওর অঞ্চলগুলো দিন দিন রবিশস্যের নতুন ভাণ্ডারে পরিণত হচ্ছে। আজ থেকে তিন-চার বছর আগেও যা ছিল ধারণার অতীত।   

বিলে সবজি চাষ

সবজি চাষের আরেকটি উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বিল অঞ্চলগুলো। যেমন, মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিল, খুলনার তেরখাদার ভূতিয়ার বিলে সবজি চাষ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাশোরারচর বিল, বরিশালের সাতলা বিল এবং গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিলে হচ্ছে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ বিলগুলো একসময় পতিত থাকলেও এখন ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। বিলের পানি শুকিয়ে গেলে আরেকবার সবজি চাষ হচ্ছে। এভাবে বিলের জমি থেকেও এখন দুইবার ফসল উঠছে।

প্রতিবন্ধকতা

কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণন করতে গিয়ে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষককে নানা ধরনের কঠিন প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয় বলে এফএওর এক সাম্প্রতিক (২০২২) জরিপভিত্তিক গবেষণায় উঠে এসেছে। সবজির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় ৬৪ শতাংশ কৃষক। কৃষিখাতে উৎপাদনে বাড়লেও বিপণনে সমস্যা থেকে গিয়েছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হিমাগার স্থাপন, এবং কৃষিপণ্যে পরিবহনে গতি আনা, উদ্যোগগুলো অত্যন্ত জরুরী হলেও সরকারি এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ঋণ ও ধারের টাকা পরিশোধের জন্য এবং ফসল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাৎক্ষণিক স্বল্প মূল্যে ফসল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কৃষকরা। এ সুযোগেই কৃষিপণ্যের লাভের প্রায় পুরোটা চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। এ সমস্যা সবজি বিপণনের ক্ষেত্রে আরো ব্যাপক। কৃষক উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কম দামে। সে ফসলই আবার সরবরাহ চেইনের বিভিন্ন পর্যায় ঘুরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে। এ চেইনে মধ্যস্বত্বভোগীদের অপ্রত্যাশিত মুনাফার ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক, একইসাথে ব্যয় বাড়ছে সাধারণ ভোক্তাদেরও।

সবজি রপ্তানিতে সম্ভাবনা

২০০৯-১০ অর্থবছরে সবজি রপ্তানি ছিলো চার কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এক দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি হয় চল্লিশটির বেশি দেশে। মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি হলেও মূলত ছয়টি দেশ থেকে সিংহভাগ রপ্তানি আয় আসে। এ ছয়টি দেশ হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও কুয়েত। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সবেচেয় বেশি সবজি যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে, এরপর মালয়েশিয়া এবং কাতার। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি যায় যুক্তরাজ্যে। ইপিবির সবজি রপ্তানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের (ইউএস) সবজি বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আয় এসেছে ২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ২৪ শতাংশ। মোট রপ্তানি আয়ের আশি শতাংশ আসছে উপরে উল্লিখিত ছয়টি দেশ থেকে। সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পাশের দেশ ভারত থেকে বিমানের পাশাপাশি জাহাজেও সবজি রপ্তানি হয়, ফলে তারা তুলনামূলক কম মূল্যে সবজি রপ্তানি করতে পারে। বোম্বে থেকে জাহাজে করে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ভারত সবজি পাঠিয়ে থাকে। সবজি পচনশীল পণ্য বলে বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি হয় বিমানে, ফলে এক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। তাছাড়া আকাশপথেও তুলনামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান থেকে সবজি পাঠাতে খরচ কম, এজন্য বাংলাদেশের বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ভারত যে শাকসবজি রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তা দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানও প্রমাণ দিচ্ছে। দেশটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১ লাখ ৪৮ হাজার টন শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে, যা পরের বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার টনে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমেছে।   

নিরাপদ সবজি চাষের সম্ভবনা

নিরাপদ সবজির চাহিদা এবং বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। মানিকগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষিরা সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা এখন নিরাপদ সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছে। এ ধরনের সবজির চাহিদা স্থানীয়ভাবে যেমন রয়েছে, একইসাথে এসব সবজি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এ ধরনের একটি উদ্যোগের উদাহরণ হিসেবে  ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৪ নং নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মোস্তবাপুর গ্রামের কথা বলা যায়। এ গ্রামের শতাধিক কৃষক উৎপাদন করছেন বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি। উৎপাদনের পাশাপাশি বিপণন, প্রক্রিয়াকরণ ও মজুদের সব পর্যায়েই জৈব ও নিরাপদ উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনের এ বিষয়টি মোস্তাবপুর গ্রাম থেকে এখন আশেপাশের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে ৪ নং নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বিশ থেকে পঁচিশটি গ্রামে এখন নিরাপদ সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে জৈব কেঁচো কম্পোস্ট সার ও জৈব বালাইনাশক। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের সিংহভাগই নারী। তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে বিক্রির জন্য গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা একটি বাজার। প্রতি বৃহস্পতিবার ইউনিয়নের পূর্ব বলরামপুর গ্রামে এ বাজার বসে। স্থানীয়রা নিরাপদ সবজির এ বাজারের নাম দিয়েছে বিষমুক্ত সবজির বউবাজার।

সবজির দাম কি বাংলাদেশে বেশী?

পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে সবজির দাম বেশি। পাকিস্তানের তুলনায় কিছুটা কম। পৃথিবীরর বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সবজির দাম কম। নেপাল, মিশর এবং আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার চেয়েও বাংলাদেশে সবজির দাম কম। মুশকিল হচ্ছে মূল্যতালিকা তৈরির ক্ষেত্রে খামার থেকে যে দামে বিক্রি হচ্ছে সেটি হিসেব করাতে বাংলাদেশ মূল্য তালিকায় তলানিতে অবস্থান করছে, কিন্তু বিভিন্ন হাত ঘুরে এসে খুচরা বাজারগুলোতে যে দামে সবজি বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে সেক্ষেত্রে দামের দিক থেকে অনেক দেশই বাংলাদেশের চেয়ে পিছনে পড়ে যাবে।  

শেষ কথা

উর্বর মাটি এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকা সবজি চাষের জন্য অনুকূল। ভালো বীজ আর যত্ন পেলে এদেশের সব জেলাতে বিপুল পরিমাণে সবজি উৎপাদন সম্ভব। এদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৮.৫ মিলিয়ন হেক্টর। সবজি আবাদের জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ২০১৪-১৫ সনের হিসেব অনুযায়ী ০.৭৯৮ মিলিয়ন হেক্টর। অর্থাৎ সবজি চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে শতকরা মাত্র ৯.৩৮ ভাগ জমি। এতে মাথাপিছু সবজি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে মাত্র ৭০ গ্রাম। যদিও একজন সুস্থ সবল মানুষের জন্য প্রতিদিন ২২০ গ্রাম সবজি গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে ফাও (FAO)-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু সবজি গ্রহণ করে মাত্র ৫৬ গ্রাম, খাওয়া উচিৎ ২৫০ গ্রাম। অর্থাৎ সবাই যথেষ্ট পরিমাণ সবজি খেলে এখনো বাংলাদেশ সবজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবজির এ বিশাল ঘাটতি পূরণ করতে হলে সবজি উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে, একইসাথে সুস্থ থাকার জন্য সবজি খাওয়ার মাথাপিছু পরিমাণ বাড়াতেও উৎসাহিত করতে হবে।