Headlines

চোখ ওঠা ও তার চিকিৎসা

চোখ ওঠা একটি সাধারণ রোগ।  সব বয়সের মানুষের এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রায় সারা বছর রোগটি দেখা যায়। রোগটি এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো সময় উপসর্গ মারাত্মক হয়ে দেখাও দেয়।

চোখ ওঠা নিয়ে আমরা কথা বলেছি ঢাকার বারডেম বা ডায়াবেটিক হাসাপাতালের চক্ষু বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ডা. হজরত আলীর সাথে । চোখ ওঠা বলতে সাধারণ ভাবে চোখে চোখ লাল হওয়া, চোখ খচখচ করা, চোখ সামান্য ব্যথা করা, চোখে পিচুটি জমা এবং রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হওয়া ও পানি পড়াকে বোঝোনো হয়। বিশেষ করে রাতে ঘুমের পর সকালে উঠলে চোখের কোণে পিচুটি বা ময়লা জমতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। সর্দি ও চোখের চুলকানি একসঙ্গেও হতে পারে ।
এই রোগকে সাধারণ ভাবে চিকিৎসকরা কনজাংটিভাইটিস বা কনজাংটিভার প্রদাহ বলে থাকেন । চোখের কালো মণির চারদিকে যে সাদা অংশ দেখা যায়, এর আবরণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কনজাংটিভা বলেন । চোখ উঠলে এই সাদা অংশ লাল হয়ে যায় এবং এখানে প্রদাহ বা জ্বালা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয় । সাধারণ ভাবে এ রোগটি ঋতু পরিবর্তনের সময় দেখা দেয় । অর্থাৎ শীত শেষে গরম যখন পড়তে থাকে সে সময় এই রোগ দেখা দেয় । একই সাথে এ সময় অন্যান্য ভাইরাস ঘটিত রোগ যেমন সর্দি-কাশি বা ঠান্ড জ্বর দেখা দেয়।
সাধারণ ভাবে ভাইরাসের কারণেই চোখ ওঠার মতো রোগ দেখা দেয় । কিন্তু ভাইরাসই চোখ ওঠার একমাত্র কারণ নয় । ব্যাপক হারে বা মহামারী আকারে যে চোখ ওঠা দেখা দেয় তা এডিনো নামের এক জাতের ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। ভাইরাসের কারণে যে চোখ ওঠা দেখা দেয় তা প্রচন্ড ভাবে সংক্রামক হয়ে থাকে । স্কুল কলেজ থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে । ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় কারো যদি ভাইরাসঘটিত চোখ ওঠা দেখা দেয় তা হলে সেখানে এই রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করতে থাকে । এ ছাড়া রোগীর ব্যবহৃত গামছা, তোয়ালে যদি সুস্থ কেউ ব্যবহার করেন তবে তারও এই রোগ হতে পারে । রোগীর সাথে একত্রে থাকার কারণে চোখ ওঠা হতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার ঘটে। তবে সব চোখ ওঠাই কিন্তু ভাইরাসের কারণে হয় না। কোনো কোনো চোখ ওঠা ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হয়।
এবার স্বাভাবিক ভাবেই যে প্রশ্নটি সবার মনে উকি দেবে তা হলো, চোখ ওঠাটি কি ভাইরাসের কারণে হয়েছে না ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়েছে তা কি আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবেন? হ্যা ডা. হজরত আলী এমন এক প্রশ্নের জবাবে আমাদের জানিয়েছেন, ভাইরাসঘটিত চোখ ওঠার সাথে জ্বর সর্দি, কান বা গলা ব্যথার মতো উপসর্গ থাকতে পারে । চোখ লাল হবে এবং চোখে মনে হবে বালু জাতীয় কিছু পড়েছে বা চোখ কচকচানি হবে । এ জাতীয় চোখ ওঠার কারণে চোখে পিচুটি বা ময়লা প্রায় জমেই না। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার কারণে যারা চোখ ওঠার মতো রোগে আক্রান্ত হন তাদের জ্বর সর্দি, কান বা গলা ব্যাথা থাকে না । তবে ব্যাকটেরিয়ার কারণে যাদের চোখ ওঠে তাদের চোখ বেশি লাল হবে । তাদের চোখে পিচুটি বা ময়লা ব্যাপক ভাবে জমবে বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় চোখ আটকে থাকবে। ময়লা জমার কারণে চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হবে ।
তবে চোখ উঠলে চোখ লাল হবে কিন্তু চোখে ব্যাথা হবে না বা চোখে ঝাপসাও দেখা যাবে না । যদি চোখ ওঠার সাথে সাথে এ ধরণের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় তা হলে রোগীকে সর্তক হতে হবে । কারণ তখন ধরে নিতে হবে গ্লুকোমা বা আইরাইটিস নামের যে কোনো কারণে এই ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যেতে মোটেও বিলম্ব করা ঠিক হবে না । এ ছাড়া চোখ উঠলে চোখ থেকে যে পানি বের হবে তা একটু আঠালো হতে পারে । চোখের পাতা ফুলা থাকবে এবং চোখে বালু জাতীয় জিনিস পড়লে যে ধরণের খচ খচানি লাগে তা অনুভূত হতে পারে। চোখ ওঠা প্রথমে এক চোখে দেখা দিতে পারে। পরে তা অন্য চোখে হতে পারে। বা কখনো কখনো একত্রে দুই চোখেও হতে পারে ।
ভাইরাস জনিত চোখ ওঠার জন্য সাধারণ ভাবে তেমন কোনো ওষুধের দরকার পড়ে না । কারণ এ জাতীয় চোখ ওঠা সাতদিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায় । তারপরও চিকিৎসক কখনো কখনো এ জাতীয় চোখ ওঠার জন্য এন্টিবায়োটিক ড্রপ দিয়ে থাকেন । এটা দেয়া হয় সর্তকতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে । ভাইরাস জনিত চোখের রোগের ফলে অন্য কোনো সংক্রমণ যেনো হামলা করতে না পারে সে জন্যেই এই এন্টি বায়োটিক প্রদান করা হয় । এ ছাড়া চোখ ওঠা ছাড়াও যদি জ্বর বা গলা ব্যাথা জাতীয় উপসর্গ থাকে তবে তার জন্য চিকিৎসক ওষুধ প্রদান করবেন । এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে যদি চোখ উঠে থাকে তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসক অবশ্যই এন্টিবায়োটিক প্রদান করবেন । এ ছাড়া প্রয়োজনীয় আরো ওষুধ দিবেন।

চোখ উঠলে গরম পানির সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়। চোখ ওঠার সাথে সাথে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না । কিন্তু সাতদিনের মধ্যে চোখ ওঠা না গেলে অবশ্য চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে । এ ছাড়া চোখে ওঠার পর স্টেরয়েড জাতীয় কোনো ওষুধ চোখে দেয়া যাবে না । তাতে মারাত্মক কুফল দেখা দিতে পারে । আর কারো চোখ উঠলে তাকে যতোটা সম্ভব একা থাকতে দিতে হবে। আর এটি করতে হবে চোখের রোগের বিস্তার প্রতিহত করার জন্য । চোখ উঠলে কেউ কেউ শামুকের পানি সহ নানা ধরণের টোটকা চিকিৎসা করেন। এ জাতীয় চিকিৎষা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। না হলে অন্ধ হওয়ার আশংকা সহ নানা ধরণের মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।