সামান্য ক্ষতও মৃত্যু ডেকে আনবে!

ব্রিটিশ সরকারের ফরমায়েশি একটি রিপোর্টে সুপারবাগদের ভবিষ্যৎ দৌরাত্ম্যের যে ছবি তুলে ধরা হয়েছে, তা ভীতিকর৷ ২০৫০ সাল থেকে বছরে এক কোটি মানুষ প্রাণ হারাবে সুপারবাগ ইনফেকশনে, যদি কিছু করা না হয়৷

১

রিপোর্টটির নাম হলো ‘রিভিউ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টান্স’৷ রিপোর্টটি সেই ধরনের সব ‘সুপারবাগ’-দের নিয়ে, প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে যাদের কাবু করা যায় না; যার ফলে ছোটখাটো ইনফেকশন থেকেও রোগীর প্রাণসংশয় ঘটতে পারে, বড় বড় অপারেশনের তো কথাই নেই৷ এমনকি সন্তানের জন্মদান প্রসূতির পক্ষে অতীতের মতোই একটা মরণ-বাঁচনের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে, কেননা কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না৷

মনে রাখা দরকার,গত শতাব্দীর আশির দশকের পর আর কোনো নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়নি৷ অপরদিকে পশুপালনে যেমন অ্যান্টিবায়োটিক্সের ব্যবহার বেড়েছে, তেমনই ডাক্তাররাও যে কোনো ইনফেকশনে কারণে-অকারণে – যেমন ভাইরাল ইনফেকশনে – অ্যান্টিবায়োটিক্স প্রেসক্রাইব করার ফলে সাধারণ জীবাণুগুলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টান্স বা এএমআর, অর্থাৎ ওষুধ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে৷ ২০১৪ সালের মাঝামাঝি যাবৎ দশ লাখ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক্স প্রতিরোধী জীবাণুর প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছে, বলে জানাচ্ছে এই রিপোর্ট৷

রিপোর্টটির দায়িত্বে ছিলেন গোল্ডম্যান স্যাক্স কোম্পানির সাবেক অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল, যিনি উত্থানশীল দেশগুলিকে ‘‘ব্রিক” আখ্যা দেবার জন্য খ্যাত৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ওনিল-কে এএমআর সুপারবাগ থেকে বিশ্বব্যাপি ঝুঁকির ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে বলেন৷ ওনিল-এর উত্তর হলো, বিষয়টিকে একটি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করা প্রয়োজন, যা কিনা ‘‘সন্ত্রাসবাদের মতোই একটা বড় ঝুঁকি”৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন ডাবলিউএইচও ইতিপূর্বেই সাবধান করে দিয়েছিল যে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টান্সের ফলে বিশ্ব প্রাক-অ্যান্টিবায়োটিক যুগে ফিরে যেতে পারে৷ ওদিকে মুশকিল এই যে, অ্যান্টিবায়োটিকের যে কোনো ধরনের ব্যবহারই সুপারবাগগুলির বিকাশ ও বিস্তার বাড়াতে পারে৷

১

জিম ও’নিল-এর নেতৃত্বাধীন গবেষক দল বিষয়টি নিয়ে দেড় বছর চর্চা করার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, একদিকে যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমানো উচিত, অন্যদিকে তেমন নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন৷ নয়ত রিপোর্টে যে দশটি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে যেমন একটি বিশ্বব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি পড়ে, তেমনি পড়ে বিশুদ্ধ পানীয় জল, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধান ও হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা৷ অ্যান্টিবায়োটিক্স ব্যবহারের চেয়ে টিকাদানের উপরও বেশি জোর দেওয়া যেতে পারে৷

নতুন অ্যান্টিবায়োটিক শুধু আবিষ্কার করলেই চলবে না – সবচেয়ে বড় কথা, এই নতুন অ্যান্টিবায়োটিক সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার না করে, ‘আপৎকালীন অবস্থার’ জন্য রেখে দিতে হবে৷ অর্থাৎ অন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক যখন কাজ করছে না, তখন এই আনকোরা নতুন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হবে৷ এক্ষেত্রে সমস্যা এই যে, ভেষজ কোম্পানিগুলি যদি এই নতুন অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে ছাড়তে না পারে, বিক্রি না করতে পারে, তাহলে তারা সেই অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করতে যাবে কেন?

কাজেই ও’নিল ও তাঁর সতীর্থদের রিপোর্টের একটি মূল প্রস্তাব হল, অ্যান্টিবায়োটিক্স সংক্রান্ত প্রাথমিক গবেষণার জন্য একটি দুই বিলিয়ন ডলারের ‘গ্লোবাল ইনোভেশন ফান্ড’ সৃষ্টি করা হোক৷ এছাড়া ভেষজ কোম্পানিগুলিকে তাদের আবিষ্কৃত প্রতিটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য এক বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে৷ টাকার অঙ্কগুলো বেশি শোনালে মনে রাখতে হবে, রিপোর্টই বলেছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়াবে বছরে ১০০,০০০,০০০,০০০,০০০ ডলার৷


খবরের সূত্র: ডয়েচেভেল