আমাদের সফর এখনো চলছে // তাপস ঘোষ

কালিম্পং

১২ মে ২০২২ তারিখে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে রওনা দিলাম পশ্চিম বাংলার কালিম্পং জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইচ্ছেগাও নামক এক গ্রামে । আমরা রায়গঞ্জ থেকে আমাদেরই এক বন্ধুর গাড়ী নিয়ে ছয়জন খুব ভোরে রওনা দিয়েছিলাম । শিলিগুড়িতে আমাদের এক বন্ধুকে নিয়ে আমরা ছুটলাম ইচ্ছেগাও-এর উদ্দেশ্যে । আমার পরিচিত একজনের হোম-স্টে আমরা আগেই বুক করে রেখেছিলাম । একদম ঝা চকচকে হোম-স্টে । হোম-স্টেটিও সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত। অশান্ত মনকে শান্ত করার আদর্শ জায়গা এই হোম-স্টেটির স্থানটি। আমরা শেষ দুপুরে এখানে এসে পৌঁছালাম। আমাদের হোম-স্টে’র অবস্থান ঠিক ইচ্ছেগাও না বলে লোয়ার ইচ্ছেগাও বলাই ভালো। ওখান থেকে পায়ে হেঁটে বা গাড়ীতেও যাওয়া যায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ইচ্ছেগাওতে। আমরা কয়েকজন বিকেলে পায়ে হেঁটেই ইচ্ছেগাওতে গিয়েছিলাম। পায়ে হেঁটে যেতে আমাদের বিশ মিনিটের মতো লেগেছিলো। অন্ধকার নেমে আসায় আমরা ওপরে পৌঁছেই তক্ষুণি নেমে এসেছিলাম নীচে। কারণ, রাস্তার দু’দিকে গভীর জঙ্গল ছিলো, আর রাস্তাও খুব এবড়ো থেবড়ো ছিলো। পাহাড়ী গ্রাম তার সমস্ত নিস্তব্ধতা দিয়ে আমাদের সম্মোহিত করে রেখেছিলো।

পরের দিন খুব ভোরে আমরা কয়েকজন পায়ে হেঁটে পাহাড়ের উপরে কয়েকটি মন্দির ঘুরে দেখলাম। এরপর সকালের খাওয়া খেয়ে আমরা আবার ইচ্ছেগাও গেলাম। ইচ্ছেগাও থেকে পায়ে হেঁটে আমরা সিলারিগাও গেলাম। পায়ে হেঁটে যেতে আসতে আমাদের ঘণ্টা দু’য়েক সময় লেগেছিলো। রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য রকমের ফুলের গাছ— বাহারী ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য যে কোনো মানুষকে চাঙ্গা করে তুলবেই। আমিও তার ব্যতিক্রম হতে পারিনি। আমি সেসব বিভিন্ন ফুলের নামও জানি না, তার জাত জানি না, কী তার ধর্ম তাও জানি না। এসব জানতে আমার বয়েই গেছে! আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় হলো— তারা কী সুন্দরভাবে, নিজেদের মধ্যে কোনো ধরনের ধংসাত্মক প্রতিযোগিতা না করে নিজেদেরকে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যেটা আমরা, অর্থাৎ কিনা মনুষ্য প্রজাতি পারছি না। এটা মনুষ্য প্রজাতির কাছে তার প্রকৃতির অংশ হিসেবে টিকে থাকার এক অশনি সঙ্কেত বলেই আমার মনে হয়। পাহাড়ের জঙ্গলে হাজার হাজার প্রজাতির গাছ পালার সুন্দর সহাবস্থান মনুষ্য প্রজাতির কাছে শিক্ষণীয় হতে পারে যে, কীভাবে নিজেকে প্রকৃতির সঙ্গে সংম্পৃক্ত করতে হয় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। সফরের মাঝপথে লিখলাম, আমাদের সফর এখনও চলছে।

কালিম্পং