খুব বেশি জড় বোধসম্পন্ন না হলে মানুষ জীবনভর বিশ্বাস অবিশ্বাসের (অনুসন্ধিৎসা) এক দোলাচলের মধ্যে থাকে। তাই কোনোভাবেই খারিজ করে দেওয়ার নীতি ভালো নয়।
প্রতিষ্ঠান (ধর্ম নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান) খারিজ করা আর আধ্যাত্মিকতা খারিজ করা এক কথা নয়। মানুষের জীবনযাপনের মধ্যেই কিছু অদৃষ্টে, কিছু পাপে বিশ্বাসের উপকরণ তৈরি হয়ে যায়। বিশ্বাসের এই জায়গাটুকু মানুষ নিজের মতো করেই পরিচালনা করতে পারত, তার জন্য সে আধ্যাত্মিকতার কোনো রূপ তৈরি করে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
ঈশ্বর সবসময় সত্তা এবং স্বত্ত্বাহীন থাকার কথা ছিল, এমনকি ‘ঈশ্বর’ বা এরকম কোনো নামকরণেরই কেনো প্রয়োজন ছিল না। ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল বলেই একসময় নিরাকার উপাসনার প্রশ্নটি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু তখন হয়ত বোঝ সম্ভব ছিল না যে এই উপাসনা এবং প্রার্থনার নিয়ম তৈরি করে দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে আরো বড় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।
তাই যে আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে মানুষের শান্তি খোঁজার কথা ছিল সেটি হয়ে উঠেছে এখন আমিত্ব, ভোগবাদ এবং দলবদ্ধতার আয়োজন।
এর বিপরীতে বোধবুদ্ধিহীন নাস্তিকতাও কোনো সমাধান নয়। যে নাস্তিকতা সরাসরি আস্তিকতাকে খারিজ করে সেটিও আরেকটি প্রতিষ্ঠান, এই নাস্তিকতাও এক সময় একই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে নাস্তিকতা মানে ধর্মের গ্রন্থস্বত্ত্ব এবং প্রাতিষ্ঠানিক দিকটি খারিজ করা, এবং ধর্মগুলোকে ব্যক্তির নিজস্ব আধ্যাত্মিক চিন্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা।
তাই ‘নাস্তিক’ এই শব্দ দিয়ে যেমন কাউকে আক্রমণ করার সুযোগ নেই, আবার ‘আমি নাস্তিক’ বলে এক ঝটকায় সবকিছু খারিজ করে দেওয়াটাও অপ্রয়োজনীয়। একইসাথে ‘আমি আস্তিক’ বলাটাও একই পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় এবং সমস্যা সৃষ্টিকারী।
দিব্যেন্দু দ্বীপ