৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস আজ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান নেতৃত্ব দানকারী, দেশ গড়ার কারিগর জাতীয় ৪ নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর হত্যা করে ঘাতকেরা।
স্বাধীনতাবিরোধী, মানবতাবিরোধী, সভ্যতাবিরোধী ঘাতক চক্র জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে জেলখানার ভেতর গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যে বর্বর শক্তি দেশকে নিয়ে অন্ধকারে যাত্রা করেছিল তা তারা পূর্ণ করেছিল জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। অন্ধকারের শক্তি জানত, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে কারা হাল ধরবে।
৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে।
কারাগার নিরাপদ হওয়ার কথা থাকলেও ঘাতকরা ’৭৫ এর ৩ নভেম্বর ভোর রাতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া চার সূর্যসন্তানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলি করে হত্যা করে। গুলিতে তাজউদ্দিনের মৃত্যু না হলে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে এই চার নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান।
নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তখনকার হন্তারক এবং হত্যাকারী সরকারের সহায়তায় ৪ নভেম্বর রাতে দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশ চলে যায় ঘাতকরা।
বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলঙ্কময় দিন আজ, কালো অধ্যায়, নৃশংসতা, বর্বরতা সব জঘন্যতাকে ছাপিয়ে দিয়েছিল আজকের দিনে তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকেরা। বাংলার জনগণ জাতীয় এই চার নেতাকে আজীবন স্মরণ করবে, এবার তাদের কর্ম থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজবে।