Headlines

বলভদ্রপুর গণহত্যা: রাজাকারেরা হত্যা করেছিল জবাই করে এবং ছুরি মেরে

বাগেরহাট

বাড়িতে ঢুকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়। টাকা পয়শা কোথায় কি আছে সেটি জানতে চাওয়ার এক পর্যায়ে গুলি করার আগে মতি ঘটকের জিভ কেটে ফেলে দিয়েছিল রাজাকারেরা।


বলভদ্রপুর গ্রামটি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলা এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। গ্রামটি পড়েছে বনগ্রাম ইউনিয়নের মধ্যে। বলভদ্রপুর গ্রামটির অবস্থান কচুয়া উপজেলার শাঁখারিকাঠী গণহত্যাটি যেখানে সংগঠিত হয়েছিল সেখান থেকে বেশ কাছেই।

বলভদ্রপুর গণহত্যাটি একটি বাড়িতে সংগঠিত হয়। রাজাকারেরা বাড়িটিতে ঢুকে পিতা এবং দুই ছেলে এবং ছেলের শশুরকে হত্যা করে। রাজাকারেরা মূলত দেবপ্রসাদ চক্রবর্তীর শশুর অমর ঘটককে টার্গেট করে এসেছিল। অমর ঘটক এসেছিল সাড়া গ্রাম থেকে জামাই বাড়িতে পালাতে। রাজাকারেরা ফিরে গিয়ে অমর ঘটকের স্ত্রীকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে।

যেটা জানা যায়–

অমর ঘটক ছিলেন ধনী ব্যক্তি, তার সোনাদানা, টাকা পয়শা আত্মসাত করতেই রাজাকারেরা এ হত্যাকাণ্ড চালায়।

পাশের বাড়ির একজন ভদ্রমহিলাকেও পৃথক ঘটনায় হত্যা করে হয়। প্রথমে তাকে নির্যাতন করা হয়। তাকে পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর তাকে কুপিয়ে পাশ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। ভদ্রমহিলার কেউ ছিল না। লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন হত্যাকাণ্ডের শিকার চারু বালা দাসের ভাইপো রতন কুমার দাস। চারু বালা দাসের মৃতদেহ তিনি পুকুর থেকে তুলে এনে সমাহিত করেছিলেন।

মৃতদেহের বর্ণনা দিতে গিয়ে রতন দাস বলেন, চারুবালা দাসকে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধেই রাজাকারেরা ক্ষান্ত হয়নি, মাথার চুল সামনের দিকে টেনে এনে পায়ের দড়ির সাথে বেঁধে দিয়েছিল। স্থানীয় রাজাকারেরা এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় বলে তিনি জানান। হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে রাজাকারেরা সোনা দানা টাকা পয়শা এমনকি গরু বাছুর নিয়ে চলে যায়।

রতন দাসের বর্ণনা থেকে কৃষ্ণ লাল চক্রবর্তীর বাড়িতে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডটি সম্পর্কে জানা যায়। সেদিনের নৃশংসতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বাড়িতে ঢুকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়। টাকা পয়শা কোথায় কি আছে সেটি জানতে চাওয়ার এক পর্যায়ে গুলি করার আগে মতি ঘটকের জিভ কেটে ফেলে দিয়েছিল রাজাকারেরা। এরপর গুলি করে তাকে হত্যা করে। গুলিতে দেবু প্রসাদ চক্রবর্তী মারা যায়নি। রাজাকারেরা যখন চলে যাচ্ছিল তখন সে দেখার জন্য মাথা উচু করলে এক রাজাকার ফিরে এসে ছোরা দিয়ে তার পেট ফেড়ে ফেলে। এরপর তীব্র মরণ যন্ত্রণা ভোগ করে সে মারা যায়। ঘটনার বর্ণনাকারী ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়েছিলেন।

বলভদ্রপুর গ্রামে কৃষ্ণ লাল চক্রবর্তীর বাড়িতে ঢুকে সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল-

কৃষ্ণলাল চক্রবর্তী, দেবু প্রসাদ চক্রবর্তী, শিব প্রসাদ চক্রবর্তী, অমর ঘটক। এবং পৃথক ঘটনায় হত্যা করা হয়েছিলো চারুবালা দাসকে।