ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী কাবেরী

কক্সবাজার

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত হলেনমুজিবুর – কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্ভাব্য সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। আজ শনিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটায় কলেজ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নামধারী নেতা-কর্মীরা তার ওপর তেড়ে আসে। পাশাপাশি অস্ত্রের ভয় দেখায় এবং বিভিন্ন মিথ্যাচার ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথাবার্তাসহ তাকে হেনস্থা করেন।

কক্সবাজার
নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, সাংগঠনিক সম্পাদক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ।

কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মরহুম ওসমান সরোয়ার আলম চৌধুরীর কন্যা এবং কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আফসার কামাল চৌধুরীর পুত্রবধূ হচ্ছেন- নাজনীন সরোয়ার কাবেরী। কাবেরীর অভিযোগ হচ্ছে, তারই জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরোয়ার কমলের ইঙ্গিতেই আজ ছাত্রলীগ নামধারীরা তাকে হেনস্থা করেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কক্সবাজার কলেজের নিজস্ব জমি দখল করে একটি বিতর্কিত রাস্তা নির্মাণের ঘটনায় তিনি বিরোধীতা করায় সাংসদ ক্ষিপ্ত হয়ে এমন ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ করেন কাবেরী। কাবেরীর আরো অভিযোগ, সাংসদ কমলের ইশারায় কেবল কলেজের জমি বেহাত হচ্ছে না সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গি মওলানা ছালাহুল ইসলামকেও কলেজের দখলীয় জমি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের আজকের ঘটনা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ভয়ে কলেজ থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হন। সম্মেলনে তিনি লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমরা আওয়ামী লীগ কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার সরকারি কলেজে জাতির জনকের জন্মদিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও কেক কাটার অনুষ্ঠানে আমি প্রবেশের পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আমাকে সাদরে সম্ভাষণ জানান। কিন্তু একশ্রেণির ছাত্রলীগ নামধারী নৈরাজ্যকারী আমার দিকে তেড়ে আসে এবং আমাকেসহ শিক্ষকদের গায়ে আঘাত করতে উদ্যত হয়। ‘

আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, এক পর্যায়ে আমার নাম বক্তব্যে দেওয়ার জন্য ঘোষণা করলে কলেজ সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন হট্টগোল শুরু করে আমাকে মারতে তেড়ে আসেন। এ সময় উচ্ছৃংখল ছাত্রলীগ নেতারা আমার বিরুদ্ধে কু-রুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং আমাকে শারীরিক হেনেস্তা করে। পরে তিনি বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন বলে জানান। আওয়ামী লীগ নেত্রী কাবেরী বলেন, ‘আমি মঞ্চে ওঠার সময় চেয়ার হাতে নিয়ে মারতে আসেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি জাকের হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী। এ সময় তারা হুমকি দিয়ে বলেন, আমাকে কুটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। ‘

আওয়ামী লীগ নেত্রী কাবেরী বলেন, তাকে হেনস্থাকারীরা ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসী। এদের নেতৃত্বে কলেজের জমি দখল হয়। তিনি তার প্রতিবাদ করায় ক্ষীপ্ত হয়ে তাকে গালিগালাজ করে মারতে তেড়ে আসেন। তিনি জানান, এসব সন্ত্রাসীদের হাতে কলেজের শিক্ষকরাও জিম্মি রয়েছে। ঘটনার সময় সন্ত্রাসীরা কলেজের সবকিছু ভাঙচুর করার জন্য উদ্যত হয় এবং এক পর্যায়ে শিক্ষকগণও উর্পযুপরি তাদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষে করে। কিন্তু তারপরেও তারা নিবৃত্ত না হওয়ায় তিনি শিড়্গকদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরকে এ দিবসটি নষ্ট না করার জন্য করজোড় আহবান জানান। তিনি জানান, এ ধরনের ঘটনা গতকালই জীবনের প্রথম সম্মুখীন হলেন তাও আবার ছাত্র লীগ নামধারীদের হাতে।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার-রামু আসনের দলীয় সাংসদ এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরোয়ার কাবেরীর জ্যষ্টে ভাই সাইমুম সরোয়ার কমল ১০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ করেন। ওই প্রকল্পের রাস্তাটি নির্মাণের স্থান ভিন্ন স্থানে হলেও কক্সবাজার কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের তত্ত্বাবধানে কলেজের জমি দখল করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাবরই রাস্তাটি নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে আসছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নাজনীন সরোয়ার কাবেরীও রাস্তা নির্মাণ কাজের বিরোধীতা করায় সাংসদসহ ছাত্রলীগ কর্মীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন।

[সংবাদটি দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ১৭ মার্চ (২০১৮) প্রকাশিত হয়]