আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর // বিক্রম আদিত্য

বিক্রম আদিত্য

সাদা খাতা দেখলেই মনে হয়
একটি কবিতা লিখে ফেলি।
কিন্তু আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর।
কবিতার নামে আসে শুধু গল্প।
ভালোবাসার, ভালোলাগার গল্প হলেও হোতো।
কিন্তু এ যে হিংসার গল্প, কষ্টের গল্প,
চিরচেনা অপছন্দের গল্প।
আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর

ভেবেছিলাম আবার প্রেম করবো;
কচি বয়সের প্রেম জমে ভাল।
কিন্তু প্রেমের চেয়ে ধর্ম বড়!
পরিচিতরাই ধর্মের দেয়াল গড়ে
প্রেমের পথটুকু ঢেকে দিলো।
তাই আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর।

বাবা রোজ চিনেবাদাম কিনে আনতেন,
মাঝে মাঝে মোরব্বাও।
একদিন বন্যায় সব ভেসে গেল-
চিনেবাদামের ক্ষেত আর
আমাদের বাড়িঘর সব।
বাবা এখন ত্রাণ আনেন উঁচু মঞ্চ থেকে!
তাই আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর।

সেলিম চাচার ক্যান্সার হলে
রানির অনেক কষ্ট হয়েছিল।
রানির মা বাড়িতে থাকতো না।
অসুস্থ সেলিম চাচাকে দেখে রাখা কি
একা রানির পক্ষে সম্ভব?
সেলিম চাচা বাঁচেনি বেশিদিন,
রানির মা-ও একরাতে আর ফেরেনি।
তাই আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর।

উজানের ঢেউয়ে সেবার এক বাচ্চা এলো,
বড় হাঁড়িতে কেউ ভাসিয়ে দিয়েছে।
তাকে দেখতে গ্রামের মানুষ ছুটলো,
সব কাজ ফেলে সবাই ছুটলো নদীর ধারে,
সবাই মহাসমারোহে দেখে ফিরেও এলো,
বাচ্চাটা ভেসে গেল অন্য কোনো গ্রামে।
তাই আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর।

শাপলা দিদি ভালো পড়ালেখা জানত।
গ্রামের মানুষ বড় ভালোবেসেছিল
যখন সে একাই স্ট্যান্ড কোরলো।
চেয়ারম্যান সাহেব দোয়া করলেন ডাক্তার হওয়ার।
ডাক্তারের অভাবেই দিদি মারা গেল
বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে।
তাই আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর।

স্বাধীনতা দিবসে মাতবর সাহেব বড় রকমের
ভাষণ ছেড়ে অনেক হাততালি কুড়োলেন।
সাইফুরের মা তাকে খুব ভয় পায়-
সাইফুরের নানা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছিলেন।
মাতবর সাহেবই নাকি সেই জীবন নিয়েছিলেন।
তাই আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর।

অনেক অনেক গল্প জমে আছে-
আমার বাড়ির কোণায়,
ফুলির উঠোনের ধারে,
নদীর ধারের আমাবাগানেও-
অনেক অনেক গল্প পাওয়া যাবে।
লিখে ফেলতে হবে একে একে সব।
সাদা খাতা দেখলেই কবিতা লিখতে
ইচ্ছে হয় ভীষণ।
কিন্তু জীবন জুড়ে যে গল্প জমে আছে প্রচুর!

আমার কলম থেকে কবিতা ঝরে না আর/


_______ বিক্রম আদিত্য