আপনি কী তা ভুলে যান, মনে রাখুন আপনি কী করতে চান

follow-upnews
0 0

‘আমি’তে পেয়ে বসলেই বিপদ! তাতে একটা গদগদ ভাব নিয়ে থাকতে পারবেন বটে, কিন্তু কিছু করতে আর পারবেন না। অবশ্য পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ কিছু করতে চায়ও না। বেশিরভাগ মানুষ চায় বিত্ত, ক্ষমতা এবং খ্যাতি। বিত্ত এবং ক্ষমতা পদায়নের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব, উন্নয়নশীল দেশে খুব বেশি সম্ভব। কিন্তু খ্যাতির জন্য বড় কিছু আপনাকে করতে হবে। অবৈধ ক্ষমতা বেশিদিন টেকে না, টিকলেও তার পরিণতি ভালো হয় না, তার অনেক নজির আছে।

কিছু করা তো অনেক রকমের হতে পারে। বিজ্ঞানীরা তো বিশাল কিছু করছে। দিন-রাত তারা গবেষণাগারে কাজ করে নুতন কিছু আবিষ্কার করছে। এর বাইরে যারা সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত, যারা সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত তারা মূলত গণমানুষের সাথে থেকে তাদের দুঃখ দুর্দশা উপলব্ধির মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করছে।

বিষয়টি এভাবে চিন্তা করা যায়, আপনি বড় কিছু হতে চান এজন্য আপনি কিছু কাজ করতে বাধ্য হন, করেন। অথবা, আপনি বড় কিছু করতে চান, এজন্য আপনি প্রাণ দিয়ে দিনরাত কাজ করেন, এর ফলে আপনার অজান্তে আপনি বড় হচ্ছেন। দুটির মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। প্রথম মানুষটার মানসিক চাপ অনেক বেশি থাকে, জীবনের প্রতিটি ধাপে ছল— চাতুরী থাকে, ফাঁকি থাকে।

খুব বড় যারা হয়েছে পৃথিবীতে তাদের স্বপ্ন ছিল, লক্ষ্য ছিল তবে পদায়নের লোভ ছিল না, ক্ষমতার লোভ ছিল না, বিত্তের লোভ ছিল না। অবশ্য লক্ষ্য যে খুব থাকে তাও নয়, থাকে নেশা, বিশেষ কোনো দিকে নেশা। ঐ নেশাই তার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়। ভালোবাসাও এক ধরনের নেশা, ভেতর থেকে আসে, সবকিছুর জন্য ভালবাসা, তা যেমন মানুষের জন্য তেমনি গাছ-পাখি-ফুল-প্রজাপতির জন্যও। ফলে মানুষটি একটি লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হতে থাকে। কখনো সচতনে কখনো অবচেতনে।

অন্যদিকে সমাজের সাধারণ মানুষগুলোর মধ্যেই একটি শ্রেণি রয়েছে, যারা তথাকথিত মেধাবী (চালাক-চতুর-কৌশলী) তারা মূলত নিজের পদায়ন (ক্ষমতা) চায়, সেটির মাধ্যমে মানুষের মাঝে উঁচু আসন পেতে চায়, পদায়ন ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদশালী হতে চায়, অনেকে হয়ও। তবে সারাজীবন এরা বড় ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। পরিবারে অসংগতি থাকে। কখনই এরা সুখী মানুষ নয়, বাইরে তাদের আড়ম্বর থাকে শুধু।

এ ধরনের মানুষ খুব সহজেই চেনা যায়। দেখবেন, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যেই এই মানুষগুলো রয়েছে, এদের মধ্যে সবসময় ‘আমি’ কাজ করে। এর মানে এই না যে এরা সবাই খুব দাপটের সাথে চলে, মিনমিনে শয়তান আছে অনেক। মিনমিনগুলো আপনার সাথে খুব ভাবে না চললেও সমাজের ক্ষমতাহীন মানুষের ওপর এরা চেপে বসে। কিছু আছে যারা ভাবে চলে। ভাব দেখাতে আপনার পিছনে হয়ত হঠাৎ হাজার টাকা খরচ করে ফেলল, কিন্তু দরকারে তাদের পাবেন না। ব্যয় করে এরা খুব, ব্যয়টা পোষায়ে নেয় অপকর্মের মাধ্যমে। যেমন, ব্যয় করে একইসাথে প্রতিদান আশাও করে। এদের সাথে হয় আপনাকে ভৃত্য হয়ে থাকতে হবে অথবা ওদের মতো খরচ করতে পারতে হবে।

সবদিক বিবেচনা করে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কি স্রোতে গা ভাসাবেন— নাকি নিজের একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন, নিজস্ব একটি জগৎ তৈরি করবেন, সৎ এবং সাবলীল থাকার চেষ্টা করবেন। জীবনে সুন্দর থাকার অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে— আপনি কী তা ভুলে যান, সামনের লোকটিকে ক্ষুদ্র ভেবে তার ওপর দাপট দেখানো বন্ধ করেন, মানুষকে জিম্মি করা বন্ধ করেন, বরং নিজের কাজটাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিন। ভয় দেখিয়ে, ক্ষমতা দেখিয়ে অন্যের কাছ থেকে সম্মান আদায় করা লাগে না। সম্মানের জায়গাটা এমনিতেই তৈরি হয়। এতে জীবন সুন্দর এবং সমধুর হয়।

#দিব্যেন্দু দ্বীপ

Next Post

মধুমতি ব্যাংকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ

আবেদন করুণ (ক্লিক)