আত্মহত্যা করার কথা ভাবছেন?

follow-upnews
1 0

আপনি হতাশ। ভীষণ হতাশ, জীবনের প্রতি বিতশ্রদ্ধ, প্রধানত নিজের প্রতি। ছুড়ে ফেলে দিতে চান নিজেকে? মৃত্যু? আত্মহত্যাই এখন একমাত্র পথ ভাবছেন? যদি বলি জীবনটা তো আপনি হারাতেই চাচ্ছেন, তাহলে আমাদের দিয়ে দিন না, আমাদের জন্য বাঁচুন না? নাকি মরবেন তবু আমাদের জন্য, মানে মানুষের জন্য, অথবা প্রকৃতি-গাছ-পাখির জন্য বাঁচবেন না? কিছুই আপনি ভালোবাসেন না? কোনো কিছুর প্রতি আপনার কোনো দায় নেই, কোনো ঋণ নেই? শুধু নিজে পাননি বলে শেষ করে দেবেন নিজেকে? স্বার্থপরতা, চরম স্বার্থপরতা! আপনার কাছে আমরা চাই, যে জীবন আপনি শেষ করে দিতে চাচ্ছেন সে জীবনের সবটুকু আমরা চাই। ভাবছেন কিছুই আপনার দেবার নেই, ভাবছেন এই দেহ এই মন নিয়ে এক মুহূর্তও আর এগোনোর শক্তি নেই, ইচ্ছে নেই—

আচ্ছা, কখনো আপনি একাকী সবাইকে আড়াল করে গাছের কচি পাতায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন? দেখেছেন, কেমন কেঁপে কেঁপে ওঠে পাতাগুলো একটু ভালোবাসার পরশ পেয়ে? আপনার দিকে পথ চেয়ে আছে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা ঐ গাছগুলো। দেখতে পান, অনুভব করেন? আপনি তাদের সঙ্গ দেবেন না?

বেওয়ারিশ কোনো কুকুরকে দুই টাকার মুড়ি খাইয়েছেন কোনোদিন, যে মোটেও আপনার নয়, যার ঠিকানা জানেন না, গন্তব্য জানেন না, কার সে পাহারাদার জানেন না? ভালোবেসেছেন, নাকি ভালোবাসা চেয়েছেন? ভালোবেসে তো কেউ ঠকে না, ঠকে ভালোবাসা চেয়ে।

গ্রামের নিভৃত পথ চলতে চলতে কখনো থমকে গিয়েছেন? গাছের ছায়ায় গামছা বিছিয়ে শুয়ে থাকা কোনো বৃদ্ধের পাশে বসে কখনো জানতে চেয়েছেন, কেমন আছেন? দেখেছেন— নির্বাক বৃদ্ধ কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে? সে দৃষ্টির শূন্যতা মেপেছেন কোনোদিন?

মধ্যবয়সী ফেরিওয়ালা যখন শিশু পার্কের সামনে ফেনায় চাকতি ভিজিয়ে রঙ্গীন বাবল ওড়ায়। প্রতি ফুঁতে ব্যর্থতা তার বাবল হয়ে ওড়ে, সমাজের বঞ্চনাগুলো বুদবুদ হয়ে ঘুরে এসে আবার ঠিক ঠোঁঠের কোণায় জমে, তবু সে বাঁচে। তবু সে রোজ ঘরে ফেরে, বাঁচায়!

সিংহাসনে সামনে অটল বসে সন্তানহারা মা ঘণ্টা বাজায় পূজোর ভণিতায়, দুঃখগুলো ধূপের ধোঁয়ায় বাতাসে মেলায়। মেপে দেখেছেন সে দুঃখ কোনোদিন? সত্যিই সে স্বর্গ একটা চায়, নইলে অকালে হারানো ছেলেকে এখন সে রাখবে কোথায়?

সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত শিশুর নাস্তিকতা অনুভব করেছেন কোনদিন? পিতা-মাতা, মানুষ, এ জগৎ, বিশ্বচরাচরে কতটা বিশ্বাস হারিয়েছে সে! অনুভব করেছেন?

এমন রাজাও পৃথিবীতে আছে বিশ্বাস করেন— যার সুখাদ্যে অনিহা, উর্বশীর নগ্ন শরীরে নিস্পৃহ, সমুদ্রে ভীত, পর্বতে সন্ত্রস্ত, তবু বাঁচতে চায় বিশাল হয়ে! বাঁচতে চায় গাছটির জন্য, বাঁচতে চায় ঐ বৃদ্ধের জন্য, বাঁচতে চায় দেশের এক কোটি ক্লান্ত শিশুর জন্য। বাঁচতে হবে আমাকে এবং আপনাকে এক হয়ে ঐ রাজার সাথে। আমাদের বাঁচিয়ে রাখার দায় আছে যে! নাকি ভীষণ স্বার্থপর আপনি, মরবেন তবু অন্য কারো জন্যে বাঁচবেন না?


দিব্যেন্দু দ্বীপ

Next Post

বনের পাখি বলে

রাগ: কীর্তন তাল: তেওরা রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৯ আষাঢ়, ১২৯৯ রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৮৯২ রচনাস্থান: শাহজাদপুর স্বরলিপিকার: সরলা দেবী                   খাঁচার পাখি ছিল    সোনার খাঁচাটিতে,    বনের পাখি ছিল বনে।          একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে,    কী ছিল বিধাতার মনে।          বনের পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই,    বনেতে যাই দোঁহে মিলে।’          খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি আয়,   […]