বনের পাখি বলে

follow-upnews
0 0

%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8

রাগ: কীর্তন
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৯ আষাঢ়, ১২৯৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৮৯২
রচনাস্থান: শাহজাদপুর
স্বরলিপিকার: সরলা দেবী

        


         খাঁচার পাখি ছিল    সোনার খাঁচাটিতে,    বনের পাখি ছিল বনে।

         একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে,    কী ছিল বিধাতার মনে।

         বনের পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই,    বনেতে যাই দোঁহে মিলে।’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি আয়,   খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।’

         বনের পাখি বলে, ‘না,   আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   আমি কেমনে বনে বাহিরিব।’

         বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি    বনের গান ছিল যত,

         খাঁচার পাখি গাহে শিখানো বুলি তার—  দোঁহার ভাষা দুইমত।

         বনের পাখি বলে ‘খাঁচার পাখি ভাই,   বনের গান গাও দেখি।’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি ভাই,   খাঁচার গান লহো শিখি।’

         বনের পাখি বলে, ‘না,   আমি   শিখানো গান নাহি চাই।’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়   আমি  কেমনে বনগান গাই।’

         বনের পাখি বলে, ‘আকাশ ঘন নীল   কোথাও বাধা নাহি তার।’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘খাঁচাটি পরিপাটি   কেমন ঢাকা চারিধার।’

         বনের পাখি বলে, ‘আপনা ছাড়ি দাও   মেঘের মাঝে একেবারে।’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘নিরালা কোণে বসে   বাঁধিয়া রাখো আপনারে।’

         বনের পাখি বলে, ‘না,   সেথা   কোথায় উড়িবারে পাই !’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   মেঘে  কোথায় বসিবার ঠাঁই।’

         এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে,    তবুও কাছে নাহি পায়।

         খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,   নীরবে চোখে চোখে চায়।

         দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,   বুঝাতে নারে আপনায়।

         দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা—কাতরে কহে, ‘কাছে আয় !’

         বনের পাখি বলে, ‘না,   কবে    খাঁচায় রুধি দিবে দ্বার !’

         খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,   মোর  শকতি নাহি উড়িবার।’

Next Post

নিজেকে হারাই: কানামো কাহিনী (প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব)

সুদূরের পিয়াসী পাহাড়ে ওঠা আমার কাছে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার মত। নিজের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করা। নিজের কাছে হেরে যাওয়া আবার নিজের কাছেই জয়ী হওয়া। পাহাড়ে গেলে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। টের পাই নিজের ভিতরের একাগ্রতা এবং মানসিক শক্তি। পাহাড়ে গেলে মনে হয় আমি নিজেকে ছাড়িয়ে আরও বহুদূর অতিক্রম করতে পারি। তাইতো […]