জীবন ও জীবীকা: ধারাবাহিকভাবে এই পোস্টে ছবি এবং ক্যাপশন যুক্ত হবে, চোখ রাখুন

শহীদুল ভাই
হৃদয়বান মানুষ চিনতে আমার এখন দুই সেকেন্ডের বেশি লাগে না। যেখানেই যাই এরকম দু’একজন মানুষের সাথে খাতির পাতিয়ে আসি। শহীদুল ভাই তেমনই একজন লোক। চা খেতে ওনার দোকানে বসেছি। চায়ের দোকান আরও অনেক আছে, কিন্তু আমি চয়েজ করি। তিনজন রিক্সালা দাঁড়িয়ে থাকলে কাকে আমি পিক করব সেটিও “টু সেকেন্ড থিওরি” দিয়ে ঠিক করি। শহীদুল ভাইয়ের দোকানেও সেভাবেই ঢুকলাম। চা খাচ্ছি। হঠাৎ অন্যরকম একজন লোক ঢুকলো, ইশারায় আমার কাছে খেতে চাইলো। আমি খেতে বললাম। কিছু খাওয়ার আগে সে দোকানের মধ্যে পড়ে থাকা দুটো ময়লা পরিষ্কার করলো। এরপর একটা ক্রিম রোল নিয়ে চলে গেলো। লোকটাকে আমার পাগল মনে হলো না। অনেকদিন ধরে আমি একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। অটিজম শিশুরা বড় হওয়ার পরে কী হয়? ইনি বোধহয় একটা উত্তর। এই লোকটিকে আমার পাগল মনে হলো না। ছোটবেলায় সে হয়ত অটিস্টিক ছিলো, কোনো সেবা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে পাগল হিসেবে গণ্য হয়েছে। চায়ের দোকানদার শহীদুল ভাইয়ের কথা বলছিলাম- যখন বিল দিচ্ছিলাম, উনি বললেন, ক্রিম রোলটার দাম আপনি আট টাকার জায়গায় পাঁচ টাকা দেন, কারণ, আপনি একজন পাগলকে খাইয়েছেন। ‘পাগল’ লোকটির ওপর কাজ করতে চাই, ওনার ছোটবেলাটা জানতে চাই, যদি সম্ভব হয়। ছবিটি দাকোপ উজেলা সদর থেকে তোলা।
তখন সকাল সাড়ে ছয়টা। শীতের সকাল। উনি দুটো পাকা পেঁপে, কয়েকটা কাঁচা পেঁপে, কয়েকটা আমের গুটি এবং ফুল নিয়ে বসে আছেন বিক্রির আসায়। যেহেতু এটা খুলনার হিন্দু এলাকা, তাই পূজোর উপকরণ হিসেবে এখানে ফুল বিক্রি হয়। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে এসে এগুলো বিক্রি করতে হলে কয়টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়? উনি রোজ ঘুম থেকে ওঠেন রাত তিনটায়, এরপর গোছগাছ করে রওনা হন। আমরা যে ডিসিপ্লিন এবং ব্যস্ততার কথা বলি- এদের থেকে নিয়মানুবর্তী এবং ব্যস্ত মানুষ কি আসলে আমরা, হোক সে সেনাবাহিনী বা পুলিশের বড় অফিসার? আমাদের জীবন তো আসলে নিয়ম আর ব্যস্ততার ভণিতায় বিভিন্ন ধরনের প্রমোদ এবং বিচ্যুতিতে ভরা। তবু যে আমরা সুখী নই!