দেশে এখন ভাব নেওয়ার কালচার চলছে!

ভাব নেওয়ার কালচার

একটা ভালো মোবাইল কেনার কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? একমাত্র প্রয়োজন ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য থাকার কথা নয়। ছবি তোলার প্রয়োজন হতে পারে, নেট ব্যবহার করার প্রয়োজনে হতে পারে, টিভি দেখার প্রয়োজনে হতে পারে, ইত্যাদি যে কোনো প্রয়োজনে হতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র লোক দেখানোর প্রয়োজনে কেউ কি বিশ/ত্রিশ হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশি দাম দিয়ে মোবাইল কিনতে পারে? পারার কথা নয়, কিন্তু কিনছে তো মানুষ, কিনছে না? এই মানুষই আবার কোনো দাতব্য কাজে একশো টাকা খরচ করতে রাজি নয়। একশো গ্রাম বাদাম কিনতে গিয়ে দরদাম করছে মানুষ, কিন্তু দশ হাজার টাকা দামের মোবাইল বা অন্য কোনো বিলাসী পণ্য কিনতে গিয়ে দরদাম করার কিন্তু সযোগ নেই। উদাহরণটা মোবাইল দিয়ে দিলাম, জামা কাপড় গয়নাগাটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমনটিই হচ্ছে।

এক আপার কথা বলছি— তার বাসা হচ্ছে পুরনো ঢাকার প্যারিদাস রোডে, কিন্তু তার ছেলে পড়ে কাকরাইল উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। কেন? ছেলেটার নাভিশ্বাঃস উঠে যাচ্ছে, সাথে মায়েরও। সারাদিন বসে মা-ছেলে স্কুল করে। জ্যামের মধ্যে থেকে ঝিমুতে ঝিমুতে কোনো মতে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে ছেলেটা, ঘুম থেকে উঠেই তাকে টিচারের কাছে পড়তে বসতে হয়! এটা কীসের পড়াশুনা?

আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপা ওকে আশেপাশের কোনো স্কুলে ভর্তি করে দিচ্ছেন না কেন? উনি বললেন, ও সেন্ট গ্রেগরি তে চান্স না পাওয়াতেই এই গণ্ডগোলটা বেধেছে।

যা বুঝলাম, আসলে গণ্ডগোল কিছু নয়। অন্য অভিভাবকদের সাথে পাল্লা দিয়ে উইলসে ইংলিশ ভার্সনে ভর্তি করে সে স্ট্যাটাস বজায় রেখেছে। অনেক বুঝালাম, ছেলেটার আপনি সর্বনাশ করে দিচ্ছেন। এভাবে পড়াশুনা হয় না। আশেপাশে যেকোনো স্কুলে ভর্তি করে দেন। কোনো সমস্যা হবে না তাতে। ও খেলাধুলা করার, নিজের আগ্রহে পড়ার এবং বিশ্রাম নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাবে।

আশেপাশের অনেককেই দেখবেন, বেকার অবস্থায় তার একরকম আচরণ, কোনো একটা ভালো চাকরি পাওয়ার পর অন্য আচরণ। অর্থাৎ কোনো একটা সফলতার পরে সে আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। এক কথায় অভদ্র হয়ে যায়। এর মানে হচ্ছে, চাকরি প্রাপ্তিটা যতটা না জীবিকা নির্বাহ এবং কাজ করার আগ্রহ থেকে, তার চেয়ে অনেক বেশি অহংকার-অসভ্যতা করার জন্য।

আসলে আমরা হয়ত জানিই না কী করতে হয়, কী পেতে হয়, কীভাবে ভালো থাকতে হয়, এজন্য সবখানে চলছে মারাত্মক অসুস্থ প্রতিযোগিতা, তথাকথিত শিক্ষিতরাই এটা বেশি করছে।


দিব্যেন্দু দ্বীপের ডায়েরি থেকে