লক্ষ কোটি টাকা পাচার, ঋণ খেলাপি এবং লাগামহীন দুর্নীতি সত্ত্বেও বিস্ময়কর উন্নয়ন! তত্ত্ব কী? // দিব্যেন্দু দ্বীপ

follow-upnews
0 0

বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী আর মাত্র ৭ বছর পর পরেই চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০৩০ সালে ভারত হবে তৃতীয়। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ উপরে উঠে পৌঁছে যাবে ২৫ নম্বরে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সিইবিআর বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক ওলট-পালট ঘটে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার বেশিরভাগ বড় অর্থনীতির দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর বিপরীতে চীন খুব কৌশলে করোনাভাইরাস দ্রুত এবং কঠোরভাবে মোকাবেলার কারণে সামনের বছরগুলোতে পৌঁছে যাবে বেশ সুবিধেজনক অবস্থানে। চীন যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে, সেটাকে সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সিইবিআর বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হয়েছে। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল, তার থেকে ৫ বছর আগেই ২০২৮ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৯ ডলার। এই হিসেবটা পিপিপি বা পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটিকে হিসেবে নিয়ে করা। বাংলাদেশকে এখন একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বলে গণ্য করা হয়। সিইবিআর এর সূচক অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনো এক নম্বর শক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে চীন এবং জাপান। প্রথম দশটি দেশের তালিকায় এরপর ক্রমান্বয়ে আছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং কোরিয়া। ২০৩৫ সাল নাগাদ এই প্রথম দশটি দেশের তালিকা থেকে ঝরে যাবে ইতালি, কানাডা এবং কোরিয়া। তাদের স্থলে প্রথম দশটি দেশের তালিকায় ঢুকবে ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল এবং রাশিয়া। ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায় যুক্ত হবে তিনটি নতুন দেশ: ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভিয়েতনামের অবস্থান হবে ১৯, ফিলিপাইনের ২২ এবং বাংলাদেশের ২৫। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৪১। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩৪। এর পাঁচ বছর পর ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩৫ সালে ঢুকবে প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায়। যেসব অর্থনীতিকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে তার মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান এবং তাইওয়ান। বর্তমান বিশ্ব সূচকে এই দেশগুলো বাংলাদেশের উপরে, কারণ তাদের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে বড়। তবে মনে রাখতে হবে, এই সূচক তৈরি করা হয় কেবলমাত্র কোন দেশের অর্থনীতির জিডিপির আকার দিয়ে। মানুষের মাথাপিছু আয় বা জীবনমান এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। আর বাংলাদেশ যেহেতু খুবই জনবহুল একটি দেশ এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যা আরও বাড়বে, তাই পেছন ফেলে যাওয়া দেশগুলোর তুলনায় অনেক দিক থেকেই বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানে তখনো অনেক পার্থক্য থাকবে। প্রশ্ন হচ্ছে, অর্থ পাচার এবং লাগামহীন দুর্নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ কীভাবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ? ম্যাজিকটা ঠিক কোথায়?

২০১৮ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ৫৯০ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের আয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে (২০০৮ – ২০০৯ অর্থবছরে) রেমিটেন্স আসে ৯৩৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক হাজার কোটি ডলারের কম। ২০০৯ – ২০১০ এবং ২০১০ – ২০১১ অর্থবছরে এক হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি। ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স গড়ে এসেছে ১৩৬৩.০৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। কোভিড প্যানডেমিক সত্ত্বেও ২০২০ সালে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স থেকে আয় করেছে ২১.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে মোট অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের অবদান ছিল ৬.৬% (কেএনওএমএডি)।

অপরদিকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে যে, গত ৬ বছরে দেশের চার লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। জিএফআইর তথ্য মতে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গত ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রতি ডলার ৮৮ টাকা ধরে স্থানীয় মুদ্রায় যা চার লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২টি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে আছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)।

এটা তো পাচার, এর সাথে যদি বৈধভাবে পাঠানো অর্থ যোগ করা হয় তাহলে অংক নিশ্চয়ই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্সকে ছাড়িয়ে যাবে। সাথে যদি বাংলাদেশ থেকে বিদেশীদের উপার্জন করে নিয়ে যাওয়া অর্থের পরিমাণটা যোগ হয়, তাহলে আমাদের রেমিটেন্স আর হালে পানি পায় না! সবকিছু বাদ দিলেও প্রবাসীরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে যে পরিমাণ টাকা দেশে পাঠাচ্ছে প্রায় সম পরিমাণ টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

পোশাক শিল্প থেকে আসলে দেশের প্রকৃত আয় কত?

পোশাকশিল্প মালিক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার আড়ালে অর্থ পাচার করছেন। এভাবেই জনগণের দেওয়া করের ৩৬ শতাংশ পরিমাণ টাকাই পাচার হয়। বর্তমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশ থেকে অর্থ পাচার ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি-জিএফআই।

ফলে বিশাল অংকের শ্রমিকদের বঞ্চিত করে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা গার্মেন্টস শিল্প থেকে আয় হয় বলে মনে করা হয় সেখানে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। একসেসরিস আমদানি এবং পাচার হওয়া টাকা বাদ দিলে গার্মেন্টস্ শিল্প থেকে দেশ হিসেবে আমরা খুব বেশি লাভবান হচ্ছি, সেকথা বলা যায় না। তবে এ বিষয়ে পরিপূর্ণ কোনো গবেষণা না থাকায় মন্তব্য করা কঠিন।

২০২০ – ২০২১ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩১.৪৫ বিলিয়ন ডলার, আয় করেছে না বলে বলা উচিৎ এই টাকার পোশাক বিদেশে বিক্রি করতে পেরেছে। এখান থেকে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ কত লাভ করতে পেরেছে, এবং বিপরীতে কত টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে সে হিসেবগুলো করতে পারলেই কেবল প্রকৃত উপার্জন বোঝা যেত।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র দাবী মতে এ শিল্পে কাজ করছে ৪০ লক্ষ থেকে ৪২ লক্ষ শ্রমিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কাছেও এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। সে জন্য সরকারও বিজিএমইএর এই তথ্যকে ভিত্তি করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশ্ন থাকে- প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিক লগ্নি করে তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের জন্য ঠিক কতটুকু ব্যবসা বয়ে নিয়ে আসতে পারছে? প্রশ্ন করা যায়- তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকপ্রতি উপার্জন আসলে কত?  এ বিষয়টি পরিষ্কার হলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরীর বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেত। প্রশ্ন তোলা যেত আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাকের দাম নিয়ে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের তেমন কোনো গবেষণা না থাকলেও ‘ক্লিন ক্লাথস্ ক্যাম্পেইন’এর একটি তথ্যচিত্র থেকে দেখা যায়- বাংলাদেশের তৈরি একটি টি–শার্ট যদি অস্ট্রেলিয়ায় ৩০ ডলারে বিক্রি হয়, তাহলে সে দেশের খুচরা বিক্রেতা লাভ করে ৫৯%, ব্রান্ড লাভ করে ১২%, কারখানার মালিক পায় ৪%, সেখানে শ্রমিক মুজুরী হিসেবে পায় ৩০ ডলারের মাত্র ০.৬% বা ১৮ সেন্ট।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক শামস্‌ রহমান এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক আশুইনি ইয়াদলিপালি একটি গবেষণা থেকে এক্ষেত্রে উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে,

আমাদের গবেষণার (https://www-emerald-com.ezproxy.lib.rmit.edu.au/insight/content/doi/10.1108/IJPDLM-03-2018-0154/full/html)  অংশ হিসেবে আমরা ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের এবং অস্ট্রেলিয়ার রিটেইল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিশদ সাক্ষাৎকার নেই। বিশ্লেষণে মুনাফা-জবাবদিহিতা-দায়িত্বের মাঝের সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা স্পষ্ট হয়ে উঠে।   

রিটেইলাররা দাবি করে যে তারা তাদের বাধ্যবাধকতা মেনেই বাংলাদেশের কেবল ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি’ সার্টিফিকেটধারী প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে ক্রয় করে।  তবে প্রস্তুতকারকদের মতে, বিষয়টা তেমন স্বচ্ছ বা সবসময় সঠিকও নয়। যেমন একজন প্রস্তুতকার বলেন: 

“যদিও আমরা ব্রান্ড ও রিটেইলার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিধি মেনে চলছি, শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যয় ভার বহন করছি, তথাপি, ব্রান্ড ও রিটেইলার থেকে অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও শুধু পোশাকের দাম এবং মান গুরুত্ব পায়।” 

প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাত যদি একটা ম্যাজিক হয়, তাহলে সেটি কি আসলে ম্যাজিক, নাকি প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিকের স্বস্তা শ্রম বিক্রির পয়শা?

রেমিট্যান্স একেবারেই পরিচ্ছন্ন উপার্জন

প্রবাসে কর্মরত নাগরিকদের স্বদেশের প্রেরিত অর্থকে রেমিটেন্স বলে। তাদের অর্জিত আয়ের একটা অংশ তারা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠায়। এই অর্থ পারিবার বিভিন্ন কাজে ব্যয় করে, পরিবারের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি এই অর্থের একটা অংশ বিনিয়োগ হয় বিভিন্ন খাতে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ শুধু যে পরিবার ব্যয় করে তা নয়, তারা বিভিন্ন ব্যাংকে এই অর্থ সঞ্চয় করে, ব্যাংক উৎপাদনমুখী খাতে এই অর্থ লোন হিসেবে বিনিয়োগ করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশী। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ঘুরছে দেশের অর্থনীতির চাকা। বৈধ চ্যানেলের পাশাপাশি অবৈধ তথা হুণ্ডির মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠায় প্রবাসীরা। তবে হুণ্ডির মাধ্যমে যাতে প্রবাসীরা আর অর্থ না পাঠান সেজন্য ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে বাজেট উপস্থাপন করা হয়, সেখানে এ প্রস্তাব আসে। বিশ্ব মন্দা এবং স্থানীয় এবং বৈশ্বিক নানা সমস্যা সত্তে¡ও অর্থনীতির যে খাত নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, নিশ্চিন্ত থাকতে পারি তা হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। মূলত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স প্রবাহ সচল থাকার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্ব মন্দার প্রভাব তেমন একটা অনুভূত হয়নি।

লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের পরেও ব্যাংকে আমানতের ঘাটতি নেই যে কারণে

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সেপ্টেম্বর (২০২১) প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য মতে- ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ আবারো এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ১৬৮ কোটি টাকায় উঠেছে। যা গত বছর (২০২০) একই সময়ে ছিল ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। করোনার শুরুর বছর ২০২০-এর ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসাবে ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর এখন তা ১ লাখ ১৬৮ কোটি টাকা। ফলে মাত্র ১২ বছরেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। খেলাপি ঋণের এ হিসেবের মধ্যে অবশ্য ফাঁকি আছে। অনেকে কোনো কারণ ছাড়া বছরের পর বছর লোন রিশিডিউল করে যাচ্ছে, ফলে প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণ কত, সে হিসেবটি করা মুশকিল। আইএসএফ মন্তব্য করেছে, ‘বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার তুলনায় অনেক বেশি।’ যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণের হার মাত্র ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু আইএমএফ মনে করে, এর সঙ্গে যুক্ত করা উচিত আরও কয়েকটি বিষয়। যেমন আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে মোট ঋণের ৪ দশমিক ১ শতাংশকে খেলাপি ঋণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, যা অবশ্যই করা উচিত। আবার বিশেষ নির্দেশিত হিসাব বা স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট—এই নামেও রাখা আছে মোট ঋণের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থ। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে অনাপত্তি সার্টিফিকেট (এনওসি) দিয়ে রেখেছে। এ ধরনের ঋণের হার মোট ঋণের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সুতরাং প্রকৃত চিত্র বুঝতে এই তিন ধরনের খেলাপি ঋণ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’ সকল দিক আমলে নিয়ে হিসেব করলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয়ত ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে বলছে বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা যাতে জোরজবরদস্তি করে নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারেন সে জন্য নিজ ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ সীমিত করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু এতেও পরিচালকরা নিবৃত্ত হননি। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালক ধরে সেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। আবার নিজের ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের পরিচালককেও ঋণ পাইয়ে দিচ্ছেন। এভাবে পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিলেও এর বিপরীতে তেমন কোনো জামানত রাখতে হচ্ছে না। তুলনামূলক কম সুদে ঋণ নিয়েও পরে ওই টাকা পরিশোধ না করায় ওই ঋণ আদায় করতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জামানতবিহীন ঋণ আদায় করাও সম্ভব হচ্ছে না। এখানেই শেষ নয়, প্রভাবশালীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করে মিলেমিশে পুনর্গঠনও করেছেন। যে কারণে ঋণখেলাপির তালিকায় তাদের নাম কখনও আসে না। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ব্যাংক পরিচালকদের পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে আমানতকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। কেউ কেউ আমানত নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। ক্ষুব্ধ আমানতকারীরা পরিচালকদের নামে-বেনামে থাকা পুরো ঋণের তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিপরীতে ৯ ফেব্রুয়ারি (২০১৭) সমকাল পত্রিকার একটি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকসংখ্যা আট কোটিরও বেশি। তাদের জমা করা অর্থের পরিমাণ আট লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে যেমন বৃহৎ অঙ্কের অর্থ জমাকারী রয়েছেন, তেমনি আছেন ক্ষুদ্র আমানতকারী। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সংখ্যায়ই বেশি। তাদের জমা অর্থ থাকে সাধারণত সঞ্চয়ী হিসাবে। অন্যদিকে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্তরা সাধারণত অর্থ জমা রাখেন চলতি হিসাবে। তারা ঋণের জন্য সুদ প্রদান করেন ব্যাংককে; কিন্তু আমানতের জন্য কিছুই পান না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির স্বীকার করেছেন, আমানতের সুদহার দেশের মূল্যস্ফীতির হারের তুলনায় কম, ফলে আমানতকারীরা মূলত নিজের অজান্তেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মূলত সঞ্চয়প্রবণ। তাদের ছোট ছোট আমানতই মূলত ব্যাংকের মূল পুঁজি। সেই পুঁজি লুটাপাট করে নিয়ে রাখছে, বা নিয়ে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালরা। 

নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমানতই কি সরকারের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি?

ব্যাংকের উপজেলা এবং গ্রাম পর্যায়ের শাখাগুলোতে ছোট ছোট সঞ্চয় বেশি। ছোট ছোট আমনতকারীদের এসব সঞ্চয় মিলেই পূঁজি গঠিত হয়। শাখাগুলো থেকে পূঁজি চলে যায় হেডঅফিশে। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সোনালী ব্যাংকের বাগেহাট জেলার চিতলমারী শাখায় সঞ্চয়ী একাউন্ড আছে বাইশ হাজারের ওপরে (বিভিন্ন ধরনের ভাতা একাউন্টগুলো বাদ দিয়ে)। এর মধ্যে মাত্র শ খানেক সঞ্চয়ী একাউন্টে দশ লাখের বেশি টাকা আছে। অর্থাত বেশিরভাগ একাউন্টই নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট ছোট আমানত। ব্যাংকের এ শাখার ২০২১ সালের ক্লোজিং থেকে দেখা যায়- এখানে সঞ্চয় রয়েছে ৬৫ কোটি টাকা, বিপরীতে লোন দেওয়া হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। অন্য ব্যাংকগুলোর চিত্রও একই, হতে পারে অনেক ব্যাংকে সঞ্চয় এবং ঋণের এ পার্থক্য আরও বেশি। বাড়তি এ সঞ্চয় যদি ঋণ হিসেবে রাঘব শহুরে বোয়ালদের পকেটে চলে যায় এবং একটি অংশ খেলাপী হয় তাহলে স্পষ্টতই গ্রামের ক্ষুদ্র আমানতকারীরা বঞ্চিত হয়। বিষয়টিকে গ্রাম থেকে শহরে টাকা পাচার হিসেবেও অবিহীত করা যায়।

দুর্নীতির প্রকৃত চিত্রটি থেকে যায় অগোচরে

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর তথ্য অনুসারে, দুর্নীতি উপলব্ধি সূচক (সিপিআই) ২০২১-এ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৩তম। সিপিআই ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলকে তাদের শূন্য (অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত) থেকে ১০০ (খুব পরিচ্ছন্ন) স্কেলে পাবলিক সেক্টরের দুর্নীতির অনুভূত মাত্রা অনুসারে স্থান দেয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির তালিকায় ১৪৭ তম স্থানে রয়েছে, ১০০ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র ২৬ স্কোর করেছে। ২০২১-এর স্কোর ২০২০, ২০১৯ এবং ২০১৮-এর মতোই। শীর্ষ থেকে গণনা করলে, বাংলাদেশ ১৪৭তম স্থানে রয়েছে, ২০২০-এর তুলনায় এক অবস্থান কম এবং নীচে থেকে এটি ১৩ তম স্থানে রয়েছে, ২০২০-এর চেয়ে এক অবস্থান বেশি। র‌্যাঙ্কিং অনুসারে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ, যেখানে আফগানিস্তান (১৬ স্কোর সহ) সবচেয়ে খারাপ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেন। তবে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিয়োজিত সকল ইউনিট— রাজনীতিবিদ, আমলাতন্ত্র, সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবার সদিচ্ছা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা না থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হয় না। তারপরেও পূর্বের তুলনায় বাংলাদেশ দুর্নীতির সূচকে কিছু উন্নতি করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে ২০০১-০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বের প্রথম স্থানে ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রথম স্থানে না থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক অবস্থায় পৌঁছায়নি।

পুঁজি গঠিত হলে উন্নয়ন ত্বরান্নিত হয়। আইনের শাসনের অভাব, লুঠতরাজতন্ত্র পুঁজি গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে গত পঞ্চাশ বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন ছিল, অন্যদিকে ছিল বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার সংগ্রাম। সংগ্রামী এই জনগণের পাশে দরকার ছিল রাষ্ট্রীয় কিছু প্রতিশ্রুতি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামোগত ব্যাপক সংস্কার, শিক্ষার গণ বিস্তার এবং ডিজিটালাইজেশন নি:সন্দেহে এই সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিশ্রুতপূর্ণ কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়িত অংশ। একইসাথে নতুন নতুন ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গড়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয়, সঙ্ঘবদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পূঁজি। পূঁজি বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে বিনিয়োগের অংশীদারিত্ব। ফলে পুঞ্জিভূত পূঁজি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ত্বরান্নিত করছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, একইসাথে দেশে এখন লক্ষ কোটি টাকা পূজির অনেকগুলো কোম্পানি রয়েছে। গ্রামে এবং শহরে ব্যক্তিগত পূঁজিতেও হচ্ছে উন্নয়ন। অর্থাৎ, বাংলাদেশ একটা সময় পর্যন্ত পূঁজি গঠনকালের মধ্যে ছিল, পূঁজি গঠনকাল শেষ হয়েছে এখন বাংলাদেশে উন্নয়নকাল চলছে। উন্নয়ন হওয়ার পর পর তাগিদ তৈরি হবে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হওয়ার। দেশ উন্নত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের মাঝে আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের বিষয়টি আরও বেশি করে অগ্রাধিকার পায়। এখন দেশের মানুষের মধ্যে সে আকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে একথা নি:সন্দেহে বলা যায় যে, আইনের শাসন এবং মানাবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে, রাষ্ট্র আরও বেশি কল্যাণমূলক হলে বাংলাদেশ অচিরেই শুধু মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে নয়, সামাজিকভাবেও একটি স্থিতিশীল এবং উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। প্রকৃতপক্ষে কি তা হবে?

প্রশ্ন হচ্ছে এত এত দুর্নীতি, টাকা পাচার এবং অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও উন্নয়ন তাহলে কীভাবে হচ্ছে। এখানেই একটি হাইপোথিসিস তৈরি হচ্ছে। তাহলে বাড়তি জনসংখ্যার এদেশে অনেক মানুষ কি শুধু জিডিপি’র মেশিন? এভাবে বলা যায়— উচ্চ জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির বিপরীতে প্রতিনিয়তই কি কিছু মানুষের রক্তঘাম কোনো এক কৃষ্ণ গহ্বরে জমা হচ্ছে? লক্ষ লক্ষ মানুষের শ্রমিক হয়ে জমা পড়া কৃষ্ণ গহ্বরই কি আমাদের উন্নয়নের মূল ত্বরিকা, নাকি সত্যিই সচেতন কোনো প্রক্রিয়া এখানে আছে? সচেতন কোনো প্রক্রিয়া না থাকার অর্থ ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং বাংলাদেশের মতো অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশগুলো যে উন্নয়ন করছে সেটি মূলত বৈষম্য এবং দুর্নীতির নিচে চাপা পড়া কয়েক কোটি মানুষের রক্ত-ঘামের কৃষ্ণ গহ্বরের সোনালী প্রতিফলন। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ মানুষ ভালো নেই এ প্রক্রিয়ার মধ্যে। ভালো থাকবে কি অদূর ভবিষ্যতে?

Next Post

ছোটগল্প: সহযাত্রী // দিব্যেন্দু দ্বীপ

ঢাকা থেকে আমি সাধারণত রাতের বাসে উঠি না। রাতের ভ্রমণে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে রাতে জার্নি করাই লাগে। সায়েদাবাদ থেকে রাত বারোটায় মোংলার একটি বাসে উঠেছি। বাস ছেড়েছে আরও পনেরো মিনিট পরে। এত রাতে বাসে একা নারী যাত্রী থাকার কথা নয়, কিন্তু আমার পাশে বসেছে বিশ […]
দিব্যেন্দু দ্বীপ