একজন শিক্ষিকাকে নাজেহাল করা অতি উৎসাহী চেয়ারম্যানকে কিছু বলতে চাই

follow-upnews
0 0
চেয়ারম্যান
স্কুলের ক্লাস পরিদর্শনরত অবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ।

খবরটি হচ্ছে- সিলেটের জকিগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মডেল টেস্টের দায়িত্ব পালনের সময় স্কুলশিক্ষিকা দীপ্তি বিশ্বাসের ঘুমিয়ে পড়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গেলে তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা ওই ছবি তোলেন।

প্রথম কথা হচ্ছে, তিনি (চেয়ারম্যান সাহেব) অনুমতি না নিয়ে ক্লাসে ঢুকলেন কেন? তিনি এটি করে আইন এবং নীতি দুটিই লঙ্ঘন করেছেন কিনা? তার উচিৎ ছিল বিষয়টি দেখে চলে আসা এবং প্রয়োজনে অফিস থেকে অন্য শিক্ষক পাঠানো। তিনি তো ক্লাসে হট্টগোল করে ঐদিনের পরীক্ষার ডিস্টার্ব করেছেন, তাই না?

সবচে বড় কথা হচ্ছে, স্কুল পরিদর্শন তার একতিয়ারবহির্ভূত বিষয়। যে কাজগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে তার করার কথা, সেগুলো তিনি ঠিকমত করেন কিনা, সেটির জবাব দেওয়ার জন্য তার মরিয়া থাকা উচিৎ। জানি না, বিষয়গুলো কী অবস্থায় কী হচ্ছে তার উপজেলায়।

ক্লাসে গিয়ে ঘুমানো শিক্ষকের জন্য ভালো বিষয় নয়, কিন্তু বিবিধ কারণে কখনো সেটি হওয়া একেবারে অস্বাভাবিকও না। ক্লান্তি অনেক বেশি হয়ে গেলে, ঘুম ঠিকমত না হলে অনেক সময় শরীরের ওপর মানুষের কন্ট্রোল থাকে না। আমি যখন স্কুলে পড়তাম, অধিকাংশ শিক্ষক দুএকবার ক্লাসে এসে ঘুমাননি, এমনটি বিরল। আমার দিদিমা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, তিনি ক্লাসে এসে মুহূর্তের জন্য ঘুমিয়ে পড়তেন প্রায়শই, আবার তিনি পড়াতেনও খুব আন্তরিকভাবে। স্কুলের শিক্ষকদের, বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের ক্লাসে এসে ঘুমানোর বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করতে হবে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপট থেকে।

চাকুরে হিসেবে আমাদের নারীদের অবস্থা আসলে কেমন, বিশেষ করে গ্রামের নারীদের? তারা বাড়িতে সবকিছু করে, আবার চাকরিটাও করে। মাস শেষে বেতনটা তুলে দেয় স্বামী বা শশুরের কাছে। এই দৃশ্য কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে হয়ত তারপরেও গ্রামের বাস্তবতা এখনো অনেক নারীদের জন্য বেশ প্রতিকূল।

বাড়িতে যে আয়োজনে গ্রামের মানুষের থাকে, তাতে ঘর সামলানো এমনিতেই কষ্টের, রান্না করতে হয় লাকড়ি দিয়ে, বাথরুম থাকে কিছুটা দূরে, পানি আনতে হয়, এখনো অনেক বাড়িতে যৌথ পরিবারের বাস্তবতা রয়েছে। একজনে চাকরি করলেও অন্য অনেকের উপার্জন থাকে না, ফলে উপার্জনের টাকাটা হয়ে যায় সবার।

সারাজীবন আমার দিদিমাকে দেখেছি, বাড়িতে রান্না করে সবাইকে সকালে খাইয়ে তারপর স্কুলে দৌঁড়াতে, আবার বাড়িতে ফিরে এসে একই বাস্তবতা। রান্না করে তারপর খেতে হবে। মাস শেষে টাকাটা তুলে এনে দাদুর কাছে দিয়ে দিতেন। স্বাভাবিক কারণেই ক্লাসে গিয়ে তিনি অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়তেন।

তদুপরি একথা অবশ্যই বলতে হবে যে শিক্ষকদের আরো অনেক পরিপাটি হতে হবে। ক্লাসে গিয়ে ঘুমানোর সুযোগ নেই। তবে চাকরিজীবী মায়েদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হবে, তাদের দায়িত্ব এবং কষ্টটা উপলব্ধি করতে হবে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি সবার খবরদারি করার অধিকার থাকলে চলবে না, শিক্ষক হিসেবে তাদের পরিপূর্ণ মর্যাদা থাকতে হবে। তাদের যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করতে হবে।

এটা সত্য যে এখন যে বেতন সরকার দিচ্ছে তা দিয়ে প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক গ্রামে ভালোভাবে চলতে পারার কথা। সংসারটাকে একটু সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়ে সহজে চাকরি করার উপায় বের করে নেওয়ার দায়িত্ব তাদের রয়েছে।

তাছাড়া শিক্ষকতা মানে তো শুধু ক্লাসে যাওয়া আসা নয়। শিক্ষার্থীদের উপযুক্তভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য, তাদের মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদেরও যুগোপযোগী হতে হবে, তাদেরও প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে, গবেষণা করতে হবে। এই দিকটা একেবারেই অগ্রাহ্য হয় আমাদের দেশে। শিক্ষক হওয়া মানে শুধু ক্লাসে যাওয়া, পড়া দেওয়া আর পড়া নেওয়া। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসা জরুরী।

গ্রামে গিয়ে দেখেছি, স্কুলের শিক্ষকরা পাড়ার মোড়ে লাগাতার আড্ডা দেয়, কিন্তু তাদের আলোচনায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় থাকে না, তারা নিজেরা পড়াশুনা করে বলেও মনে হয় না। তাহলে ক্লাসে গিয়ে তারা কতটুকু কী পড়ান? নতুন নতুন বিষয় শিক্ষার্থীদের জানাতে হলে তো শিক্ষককে নিজে আগে জানতে হবে। তাই ঘুমের ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার চেয়ে জরুরী হচ্ছে শিক্ষকদের পড়ানোর ব্যবস্থা করা। এবং প্রতি তিনমাসে অন্তত একটি আপডেট নেওয়া যে তারা কী পড়ে কতুটুকু তৈরি হতে পারলেন।

শিক্ষকরা নিয়মিত পড়াশুনার চর্চার মধ্যে আছেন কিনা এই বিষয়টির দেখভাল করা উপজেলা এবং জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে হতে পারে। জেলা প্রশাসনের আজ্ঞাবহ একটি টিম থাকতে পারে স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের পড়াশুনার দিকটি মনিটরিং করার জন্য এবং বিষয়টিকে কতৃত্বমূলকভাবে না করে সহযোগিতামূলকভাবে করলে তাতে অবশ্যই কাজ হবে।

উক্ত টিমে জীবনবোধসম্পন্ন (সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ইতিহাস সচেতন মানবিক মানুষ) ভালো ইংরেজি এবং অংক জানা দুজন কলেজ শিক্ষক এবং যেকোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকতে পারে, এমনকি সে পুলিশ অফিসারও হতে পারে, ব্যাংকার হতে পারে, সাংবাদিক বা সাহিত্যিক হতে পারে। কে থাকল তাতে কোনো সমস্যা নেই, বিদগ্ধ লোক হতে হবে। শনিবার শনিবার এটি করা যেতে পারে। এ ধরনের একটি টিম বছরে দুইবার কোনো স্কুলে গেলে তা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গীতে অনেক বেশি পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে বলে মনে হয়।


সম্পাদকের কলাম

Next Post

Bank Job Exclusive Maths

  ♣ The ratio of three numbers is 3:4:5 and the sum of their squares is 1250. The sum of the numbers is: [তিনটি সংখ্যার অনুপাত ৩:৪:৫। তাদের বর্গের যোগফল ১২৫০ হলে সংখ্যাগুলোর যোগফল কত?] a. 30                 b.  50               c. 60                  d. 90 সমাধান: ধরি, সংখ্যাগুলো 3x, 4x এবং […]
Job Math 10/Dibbendu Dwip