নগরকান্দার সরকারিভাবে অস্বীকৃত ছয় বীরাঙ্গনা জানালেন তাদের দু:খকষ্টের কথা

নগরকান্দা

১. ছিয়ারন বেগম

স্বামী: সোহরাব মোল্লা

ঠিকানা: ধমরদী, চরযশোরদী, নগরকান্দা, ফরিদপুর।

পাটের কাল— বর্ষা কেবল শুরু হইছে। আমার আব্বা তখন ফফু বাড়ি ছোট পাইককান্দি ছিলেন। নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। নামাজরত অবস্থায় তাকে মেরে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনী। আমি গিয়েছিলাম আমার আব্বাকে খুঁজতে। ঘোড়ামারা বিলের কাছাকাছি একটা জায়গায় আমার ওপর নির্যাতন করে। আমার ওপর নির্যাতন করেছিল রাজাকারেরা। চারজন রাজাকার আমার ওপর নির্যাতন করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। কোড়াপাড়ায় এক গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। আমি তখন বিবাহীত। আমার স্বামী খুব ভালো মানুষ, তিনি কখনও কিছু বলেননি। আব্দুল হাই এবং ফজলুল হক— দু’জন মুক্তিযোদ্ধা আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন। 

২. নূরজাহান বেগম

স্বামী: শেখ আমিরুদ্দিন

ঠিকানা: ছোট পাইকান্দি, কোদালিয়া, নগরকান্দা

সময়টা— আপনারা বলেন মে মাস আমরা কই জৈষ্টি মাস। ছোট পাইককান্দি যুদ্ধের পরের ঘটনা এটা। আমার বয়স তখন প্রায় চল্লিশ হবে। পাঁচ ছেলেমেয়ে আমার। আমাগো বাড়িঘরে আগুন লাগায়ে দেয়। এরপর আমরা পাট ক্ষেতের ভেতর দিয়ে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করি। আমার মা লালমতি বেগমকে মেরে ফেলে। এরপর পাটক্ষেতের মধ্যেই আমার ওপর নির্যাতন করে। রাজাকার না পাকিস্তানি আর্মি— “সে কথা আমি এহন আর কবার পারবো না।”

৩. লালমতি বেগম

স্বামী: মমিন মাতব্বর

ঠিকানা: গজারিয়া, চরযশোরদি, নগরকান্দা

আমি বাড়িতে একা ছিলাম। আমার স্বামী আগেই মারা যায়। আমার তখন তিন বাচ্চা। ঐ সময় দেশে তেমন কোনো মানুষ ছিল না। বেশিরভাগ মানুষ পালায়ে যায়।

৪. মিনি বেগম

স্বামী : ছিদ্দিক মাতব্বর

ঠিকানা: বাগাট, কোড়াপাড়া, নগরকান্দা

শনিবার ছোট পাইককান্দি যুদ্ধ হয়। এর পরের দিন পাকিস্তান বাহিনী এসে জ্বালাও পোড়াও করে। তার একদিন পরে, সোমবার এসে পাকিস্তানি আমাদের বাড়িতে এসে চারজনকে মারে— আমার আব্বা, ভাই, দাদী, নানী এবং আমার এক দাদাকে মারে। মৃতদেহের পাশেই আমাকে নির্যাতন করে। আমার বয়স তখন ১৪ বছর হবে বড়জোর। আমাকে যখন নির্যাতন করে তখনও হয়ত সবাই মারা যায়নি। আমার আব্বা মারা গিয়েছিল অনেক পরে। আমি তো সরকারি স্বীকৃতি পাইইনি। আমাদের বাড়িতে কবরটাও কেউ সংরক্ষণ করেনি। নগরকান্দা

৫. মনোয়ারা বেগম

স্বামী: রুস্তম সর্দার

ঠিকানা: গ্রাম: চর বল্লবদী, ইউনিয়ন: বল্লবদী, উপজেলা: সালতা।

তেরো বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। তখন মাত্র কিছুদিন হইছে আমার বিয়ে হইছে। বাচ্চা হয় নাই। প্রথমে সেনাবাহিনী এবং রাজাকার এসে আমার স্বামীকে মারে। বেয়নেট দিয়ে ওনার একটা পা কেটে ফেলে। আমি দৌঁড়ায়ে গেলে ওরা আমার হাতটাও পিটিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এরপর আমার ওপর নির্যাতন করে। মনে পড়ে আমার স্বামীকে বারুইপাড়ায় (গ্রামটি বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলায় পড়েছে) কানাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম।

৬. ফুলমতি বেগম

স্বামী: শহীদ হালিম শেখ

ঠিকানা: আলগাদিয়া, চরযশোরদি, নগরকান্দা