১৯৭১ সালে যে কয়জন নারী জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী এবং রাজাকার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম

follow-upnews
0 0

‘‘শুধু জীবনটা ছাড়া আর সবই হারিয়েছি। মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন এমনি এমনি হয় নাই। এর পিছনে অনেক ইতিহাস, অনেক বেদনা লুকানো আছে। আমরা কী পেয়িছি, যা হারিয়েছি তার তুলনায় কিছুই না, কিন্তু অন্তত স্বীকৃতিটা দিতে সরকার কেন কার্পণ্য করে!” এভাবেই নিজের কষ্টের কথা জানান মুক্তিযোদ্ধা হালিমা খাতুন৷


নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে জীবীত এই কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিতে সম্প্রতি যশোরে গিয়েছিলেন দিব্যেন্দু দ্বীপ। দিব্যেন্দু দ্বীপ এবং ফৌজিয়া ফিওনার কাছে এ বীরঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন তার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও খাবার সরবরাহ, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষা করা, সন্মুখ যদ্ধে অংশগ্রহণ করা -সবই তিনি করেছেন। অবশেষে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বন্দী হন। শত্রুসেনারা বন্দি অবস্থায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় তার উপর৷
এতো কিছুর বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে, তারপরও স্বাধীন দেশে আমাদের ধুকে ধুকে মরতে হয়। এখনো রাজাকারেরা, দালালেরা সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। সরকার কি পারে না এসব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন, খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে? স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৭ বছর পেরিয়ে গেছে, ইতোমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ মাত্র কিছুদিন পরেই হয়তো ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কেউই আর বেঁচে থাকব না৷ তখন প্রকৃত ইতিহাস চাইলেও আর খুঁজে বের করা সম্ভব হবে না।
ফলোআপ নিউজের সাথে কথাগুলো বলছিলেন নারী মুক্তিযোদ্ধা হালিমা খাতুন৷
যশোরের বাঘারপাড়ায় ১৯৫৬ সালের ৩ এপ্রিল জন্ম হালিমার৷ পিতা ইসরাইল বিশ্বাস এবং মা আমেনা খাতুন৷ ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন গ্রামের এক দুরন্ত মেয়ে হালিমা৷ নবম শ্রেণীতে পড়তেন৷ গাছে ওঠা থেকে শুরু করে সকল ধরনের দুরন্তপনায় হালিমা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিলে গ্রামের তরুণ, ছাত্র, জনতা মুক্তিযুদ্ধের জন্য স্থানীয় সংগঠন গড়ে তোলেন৷
সেই সংগঠনে শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে কাজ করতে শুরু করেন হালিমা৷ তার মামার বাড়িতেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি৷ ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন তিনি৷ পুরুষ যোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন৷ বাঘারপাড়া থানা থেকে লুট করে আনেন রাইফেল৷ পাক সেনা ও রাজাকারদের অনুপ্রবেশ ও যাতায়াত ঠেকাতে রাতের অন্ধকারে ধ্বংস করেছেন বাঘারপাড়া-নারিকেলবাড়িয়া সড়কের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু৷ ফলোআপ নিউজের সাথে আলাপচারিতায় জানালেন যুদ্ধের সময় তার নানা বীরত্বপূর্ণ ঘটনার কথা৷
এক পর্যায়ে আগস্ট মাসে এক সম্মুখ যুদ্ধের সময় আহত হন হালিমা৷ তিনি জানান, তার হাতে থাকা গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন৷ গ্রেনেডটি খুব কাছে বাস্ট হওয়ায় তার গায়েও কিছু স্পিলন্টার এসে লাগে, এরপরই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি৷ ধরা পড়ে যান পাক সেনা ও রাজাকারদের হাতে৷ প্রথমে বেয়নেটের আঘাতে জর্জরিত করে হালিমাকে সেনা শিবিরে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানী বাহিনী৷
দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে পাকিস্তানী সেনাদের হাতে আটক ছিলেন তিনি৷ এসময় তার ওপর চালানো হয় নির্মম শারীরিক ও যৌন নির্যাতন৷ ৭ ডিসেম্বর যশোর শত্রুমুক্ত হলে তিনিও অন্যদের সাথে বন্দি দশা থেকে মুক্তি পান৷

https://youtu.be/jhenbNbMSm0?t=2692

Next Post

দুটি শিশু এবং অসহায় মা: ছিন্নমূল এ পরিবারটিকে পূর্নবাসন করতে চায় ছাত্রলীগ কর্মী মতিন আহমেদ এবং শুভ দত্ত, সহযোগিতা করুন ...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রোকেয়া হলের উল্টোপাশে মিলন চত্বর ঘেষে মা এবং দুটি শিশুকে অসহায় অবস্থায় দেখতে পায় এ প্রতিবেদক। অনেকক্ষণ অবস্থান করলেও কোনো মানুষকে সহযোগিতায় করতে বা খোঁজ খবর নিতে এগিয়ে আসতে দেখেনি সে। অবশেষে অসহায় মায়ের হাতে ৫০টাকা দিয়ে ফলোআপনিউজের সংশ্লিষ্ট এ প্রতিবেদক চলে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর […]
two babies