একজন কিশোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলল সবাই মিলে: দানবত্বের দেশের লোভ, নিষ্ঠুরতা এবং দাসত্বের কথা

কতটা ঘৃণ্য ক্ষুধা হলে এমন হয় মানুষ!

কতটা অন্ধ অসভ্য হলে এমন হয় মানুষ!

ওরা গিলে খায় শিশুর দেহ,

যন্ত্রণায় কাতর মায়ের কঙ্কাল।

ওরা গিলে খায় সভ্যতা দেশ কাল । 

এরা মানুষের বেশে

অজানা এক জন্তু জানোয়ারের পাল।

মানুষ! তবু

বলতে হবে শ্রেষ্ঠ!

 

এই এক দেশ–

এদেশে রাজনীতি আছে,

এখানে রাষ্ট্র আছে, সরকার আছে, ধর্ম আছে;

এখানে রাশি রাশি মন্দির মসজিদ আছে!

ভণিতা আছে, ভগবান আছে।

এখানে মানুষ নেই, কোনো মানুষ নেই।

 

সামর্থের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে কিবা করতে পারি আমি

শুধু দুঃখভারে ক্লান্ত এবং কাতর হওয়া ছাড়া?

 

পাঠক শুরুতে এই খবরগুলোতে একটু চোখ বুলান:

১. চুরির অপরাধে দরিদ্র পরিবারের সন্তান নবম শ্রেনীর এই ছাত্রটিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে!

এ যেন কাত হয়ে পড়ে আছে একটা দেশ। আবহমান বাঙালী সভ্যতা।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় চোর সন্দেহে রিয়াদ (১৭) নামের এই কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে এদেশ, বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার উথুরি এলাকার টাওয়ার বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিয়াদের বাড়ি উপজেলার উথুরি গ্রামে। সে ঘাগড়া উথুরি পিছান উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার নাম সাইদুর রহমান ওরফে শাহীন। তিনি সৌদি আরবপ্রবাসী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মারধর করার সময় রিয়াদ বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইছিল। তবু আশরাফুল ও তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরা তাকে মারধর করেই যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে রিয়াদের মৃত্যু হয়।

উথুরা ঘাগড়া টাওয়ার মোড় বাজারের আশরাফুলের মনোহারী দোকানের তালা ভেঙে চুরির চেষ্টার অপবাদ দিয়ে প্রথমে রিয়াদকে আটক করা হয়৷ তারপর বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফুল, কামরুল, রশিদ ও তার সহযোগীরা তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেদম মারধর করে৷ ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়৷ এ সময় অনেকে সেখানে থাকলেও কেউ তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেননি৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার মৃত্যু নিশ্চিত করেই দুর্বৃত্তরা সেখান থেকে চলে যায়৷ সকাল ৬ টায় তাকে আটক করা হয়, ৮টা পর্যন্ত চলে মারধর। এরপর রিয়াদ মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে।

২. এই ময়মনসিংহেই গত বছর একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। শিরোণামটা খুঁজে দেখুন—

চুরির অভিযোগে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা।

চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা

এই ছবিটিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। কী লাভ হয়েছে তাতে? এরকম ঘটনা পিছনে অনেক, সামনেও ঘটবে। এটাই আমাদের পরিচয়- “ওরা দাস, আমরা বর্বর”

৩. সিলেটের রাজনের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই।

সেটি ছিল আরও বেশি আলোচিত, এরপর খুলনায়, ঢাকায়। কত ঘটনা যে এরকম ঘটে চলেছে রোজ! তবু নাকি উন্নয়ন হচ্ছে বেশ!

সিলেটে খুঁটির সাথে বেঁধে পেটানো হয় শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে

তখনও আমি লিখেছিলাম, অনেকেই লিখেছিল—

তাতে কি একটুও বদলেছে এই দেশ? বদলায়নি। যে ভুল দর্শন মানুষ লালন করছে পরম যত্নে সেটি জিইয়ে রাখলে কিছুই বদলাবে না কোনোদিন।

এর বাইরে আর যে খবরগুলো সাম্প্রতিক আপনাদের চোখে পড়ার কথা—
হানিফ পরিবহনের একটি বাসের হেলপার ড্রাইভার মুখ থেতলে হত্যা করেছিল বাসের এক যাত্রীকে। এই সপ্তাহেই চাকার নিচে পিষ্ঠ করেছে আরেকজনকে। গত পরশু কুষ্টিয়ার বাসটি মেরে ফেলল শিশু আকিফাকে।

নদীতে ফেলার আগে থেঁতলে দেওয়া হয় পায়েলের মুখ

চট্টগ্রামে যুবককে বাস থেকে ফেলে চাপা দিয়ে হত্যা

কুষ্টিয়ায় বাসের ধাক্কাঃ শিশু আকিফা মারা গেছে

আকিফা


লক্ষ্য করুন, কিছু লোকে মারছে কিছু লোকে দেখছে, বাধা দিতে আসছে না দল ধরে, তার মানে বিচ্ছিন্নভাবে দুএকজন ভালো মানুষ থাকলেও তাঁরা প্রবল নয়, অন্যরা নিষ্ঠুর, বাকীরা নির্লিপ্ত । নইলে রনিকে যখন বাসের মধ্যে হেলপার এবং কন্ড্রাক্টর মিলে মারছিল তখন অন্যরা রুখে দাঁড়ালো না কেন? যখন রিয়াদকে ব্যবসায়ীরা পিটিয়ে মারছিল তখন কেউ না কেউ পাগলের মতো রুখে দাঁড়াল না কেন?

এটাই ভয়ঙ্কর! মানুষ কতটা অসভ্য বর্বর স্বার্থপর হলে এমন হতে পারে একটা দেশে ভাবতে পারেন?

এর মধ্যে যে কোনো একটি ঘটনাই যে কোনো একদি দেশে সকল মানুষের চোখ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। কেন এ তল্লাটে মানুষ এমন দানব হয়? নিশ্চয়ই সমাজ দর্শন, পরিবার এবং ব্যক্তিজীবনে বড় ধরনের গলদ তৈরি হয়। কোন দর্শন দ্বারা মানুষ পরিচালিত হচ্ছে সেটি খুঁজে দেখতে হবে। ঘটনা ধরে ধরে বিচার করতে হবে, কিন্তু শুধু বিচার করে কোনো লাভ হবে না, দার্শনিক জায়গায় হাত না দিলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে।  

বর্বরতা আড়াল করে ওরা রোজ
তবু নাকি ধর্ম বাঁচে!
ওরা ধর্ম বেঁচে,
আমি দিব্য চোখে দেখতে পাই
মানুষ নেই এখানে।  

এখানে কোনো দেশ নেই,
এখানে কোনো রাষ্ট্র নেই,
এখানে কোনো সভ্যতা নেই।


শেকস্ রাসেল
লন্ডন, যুক্তরাজ্য।