রতন চন্দ্র পাল (আর সি পাল), দিকদর্শন প্রকাশনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচিত পরিচালক ছিলেন, এবারো তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি। পুস্তক ব্যবসায় সুস্থধারা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। ‘গ্রন্থ কুটির’ থেকে মূল বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে উক্ত প্রকাশনী থেকে অনেকগুলো গুরত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হয়েছে। নিরহঙ্কার এই প্রকাশকের সাথে ‘follow-upnews.com’ এর কথা হয়েছে প্রকাশনা শিল্পের সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে।
জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরনো রতন চন্দ্র পাল মহোদয় প্রথমেই তার জীবন কথা দিয়ে আলোচনা শুরু করেন। পড়াশুনা করেছেন তৎকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে, পরবর্তীতে ঐ একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। শিক্ষাজীবনেই তিনি ব্যবসায় আসেন। ব্যবসা করবেন বলে আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি। সেইমত ১৯৯৩ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ গেটে ছোট ছোট পুস্তিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে জগন্নাথ কলেজের গেটে “জগন্নাথ বুক সেন্টার” নামে বইয়ের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালে ব্যবসা বাংলাবাজারে স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে বহুধাপ অতিক্রম করে আজ তিনি একজন সফল প্রকাশক।
• পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে প্রকাশনা শিল্পের সমস্যা এবং সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আপনার মতামত বলুন।
# প্রকাশনা শিল্পে সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। ১৯৮০ সালে প্রণীত নোট-গাইড সংক্রান্ত একটি কালো আইনের কারণে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ছোট বড় সকল বিক্রেতা বর্তমানে নিঃস্ব ও রিক্ত। সম্মানজনক ব্যবসায় থেকেও অনেক পুস্তক ব্যবসায়ী এখন প্রশাসন দ্বারা হেনস্থার শিকার হচ্ছে। বিশ্বে পুস্তক ব্যবসার ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। মাস্তান এবং চাঁদাবাজেরা প্রায়ই ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে থাকে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বার বার সিলেবাস পরিবর্তনের কারণে প্রকাশকরা মানসম্মত বই প্রকাশ করতে পারছে না। তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই শিল্পের মাধ্যমে কমপক্ষে পঁচিশ লক্ষ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। দুঃখের বিষয় সরকার প্রকাশনা শিল্পের প্রতি সুদৃষ্টি দেয় না। প্রকাশনা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হল কাগজ। বিভিন্ন সময়ে কাগজের মূল্য আকস্মিক বৃদ্ধি পায়, এমনকি মাঝে মাঝে কাগজ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়।
প্রকাশনা শিল্পের সম্ভাবনার কথা বলে শেষ করা যাবে না। বই হচ্ছে সর্বপ্রধান শিক্ষা উপকরণ। একজন প্রকাশক লেখক সন্নিবেশ করেন, কখনো লেখক তৈরি করে বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে থাকে। বই ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা অচল, তাই প্রকাশনা শিল্পকে সম্ভাবনাময় করতে হলে প্রকাশকদের কথা শুনতে হবে, সরকারের সাথে প্রকাশকদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে হবে।
• অভিযোগ রয়েছে একাডেমিক বইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশনীগুলো নিজস্বতা বজায় রাখতে পারছে না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
# দ্রুত সিলেবাস পরিবর্তন এবং মেধাসম্পন্ন লেখকের অভাবে একাডেমিক বইয়ের নিজস্বতা থাকছে না। এছাড়া নিম্নমানের প্রকাশনীগুলো বইয়ের নিজস্বতা বজায় রাখতে পারে না।
• দেশের প্রকাশনা শিল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আপনার প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
# প্রত্যক্ষভাবে তিনশোজন কর্মজীবী আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। পরোক্ষভাবে সংখ্যাটা আরও বেশী হবে। ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স –এর মূল বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সহায়ক গ্রন্থ প্রকাশ করে ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান যে পড়াশুনার ধারা তাতে পরীক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা সহায়ক গ্রন্থের ওপর খুব বেশী নির্ভর করে থাকে। সার্বিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে।
• প্রকাশক লেখক সৃষ্টি করে, প্রকাশক লেখকেকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়ে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করে, এক্ষেত্রে আপনারা কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন?
# প্রকাশকরা দায়িত্বশীল। আমরা লেখকেদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রাখি। লেখক হিসেবে কারো আত্মপ্রকাশের ইচ্ছা থাকলে আমার প্রতিষ্ঠানে তার জন্য সুযোগ রয়েছে। তবে লেখককেও অনেক বেশী দায়িত্বশীল হতে হয়। প্রকাশকের আর্থিক ঝুঁকি এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঝামেলার বিষয়টি লেখকদের বুঝতে হবে। উভয়পক্ষ পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা করলে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।