ছোট গল্প: কুঁজো দুদু // দিব্যেন্দু দ্বীপ

follow-upnews
0 0

চোর হিসেবে তাকে সবাই চেনে। পিঠে একটা কুঁজ, ভাজ হয়ে হাঁটতে হয়। লোকে তাকে কুঁজো দুদু বলে ডাকে।

দুদু একটা কেমন নাম! পৃথিবীতে একমাত্র শিশুরা দুদু খায়। দুধ থেকে দুদু। দুধের আদুরে নাম দুদু। যৌবনে নারী যা ঢেকে রাখে তা দুদু নয়, সোমথ্থ পুরুষ যা দেখে লালায়িত হয় তাও দুদু নয়, ওগুলো দুধ।কুঁজো দুদু ছোটবেলায় যখন মায়ের কোলে ঘুরত তখন থেকেই এই নাম। হঠাৎ হঠাৎ সে দুদু খাওয়ার বায়না ধরত। পাঁচ বছর পর্যন্ত সে দুদু খেয়েছে, ছেলেরা তাকে দুদু বলে খ্যাপাত। সেই থেকেই তার নাম হয়েছে দুদু।

দুদু স্কুলে যায়নি।দরিদ্র পিতা-মাতা তাকে স্কুলের পাঠানোর কথা ভাবেওনি। বনে জঙ্গেলে ঘুরে, গুলটি মেরে, বঁশি বেয়ে শৈশব কেটেছে। ছোট বেলায় সে ঘুঘু ধরতে পারত, ডাহুক পাখি ধরত। ডাহুক পাখির মাংসের স্বাদ বড় হয়েও তাঁর মুখে লেগে আছে। এখন পাওয়া যায় না, সেই ঝোপঝাড় আর নেই, সব ছাপসুতরো করে জমিন বানানো হয়েছে, কোথাও ফসল ফলে, কোথাও আবার নতুন বাড়ি উঠেছে।

কুঁজো দুদু জন্ম থেকে কুঁজো নয়। একটু বড় হওয়ার পর সে একটা পেশা বেঁছে নেয়। খুলনা অঞ্চলে তালগাছ ছিল প্রচুর। এখনো আছে, তবে সংখ্যায় অত বেশি নয়, তখন হাজার হাজার ছিল। দুদুদেরও পঞ্চাশটা তালগাছ ছিল। পৈতৃক সূ্ত্রে সে তালগাছ কাটার ভার পায়। সতের বছর বয়স থেকে সে তালগাছ কাটে।অভিনবভাবে তালগাছে উঠতে হয়। একটা আইক্কালা বাঁশ তালগাছের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়, ঐইটা বেয়ে বেয়ে মাথায় উঠতে হয়। পা ফসকে পড়ে গেলে শেষ, কিন্তু এ পর্যন্ত কোন ফসকানোর খবর কেউ শোনেনি।
দুদু একজন ভাল গাছুড়ে। পঞ্চাশটা গাছ খুব অল্প সময়ে কেটে আসে সে। গাছকাটা মানে উপরে উঠে মোচার মাথা কেটে দিয়ে ঠিলে পাতা। পাতলা করে কেটে দিতে হয়, ওখান দিয়ে চুয়ে চুয়ে রস বের হয়ে বেঁধে দেওয়া ঠিলেই জমা হয়। মেয়ে গাছের মোচা এক রকম ছেলে গাছের মোচা আরেক রকম। ছেলে গাছের মোচাকে জট বলে, মেয়ে গাছের মোচায় তাল হয়। গাছ কাটলে তাল হয় না। তালের চেয়ে রস গুরুত্বপূর্ণ, সে সময় তালের কোন দাম ছিল না, ও কেউ দাম দিয়ে কিনত না। রসের দাম ছিল, রস জ্বাল দিয়ে গুড় হত। গুড় হাটে বিক্রি হত, শহরে যেত। বাগেরহাট-খুলনা অঞ্চলের অনেক মানুষের জীবিকার অবলম্বন ছিল এই তালগাছ। দুদু দশবছর ধরে সফলভাবে গাছ কাটার কাজ করেছে। পিতার পরিবারে রসদ জুগিয়েছে। হঠাৎ সবকিছু উলোটপালোট হয়ে যায়।

ছোট গাছ বলে সেদিন সে খুব বেশি সতর্ক ছিল না। দুদু একটা পিছলা ডেগায় পা রেখে ঠিলে পাল্টাচ্ছিল এমন সময় জোরে বাতাস আসে, ডেগাটা ছোট্ট একটা দোল দিয়ে তাঁর পায়ের নিচ থেকে সরে যায়। সে নিচে পড়ে ঝায়। পিঠ দিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। ওভাবেই পড়েছিল অনেকক্ষণ। মাঠের ধারে ভর দুপুরে লোকজন তেমন ছিল না, আরেকজন গাছি তাকে দেখতে পায়। বাড়ির লোকজন এলে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। দুদু বেঁচে যায়, তবে পিঠটা আর সোজা হল না। বয়স ত্রিশ বছর না হতেই সে বাঁকা হয়ে গেল। ধীরে ধীরে তাঁর নাম হয়ে গেল কুঁজো দুদু।

কুঁজো দুদুর বিয়ে হয়েছে। যেমন বউ হওয়ার কথা তেমন বউ-ই হয়েছে। দুই তিন বছর পর পর একে একে পাঁচটি ছেলে মেয়ে হয়েছে। চারটি ছেলে একটি মেয়ে। কাঁদা মাটি খেয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে বড় হচ্ছে সেগুলো। দুদু এখন আর তাল গাছ কাটতে পারে না। ছেলে মেয়েগুলো বাঁচিয়ে রাখতে একে একে পঞ্চাশটি তালগাছ বিক্রী করতে হয়েছে। অন্যগাছ গাছালি যা ছিল তাও বিগত দশ বারো বছরে বিক্রী হয়েছে। এখন ভিটে মাটি ছাড়া আর কিছু নেই। খেটে খাওয়ার ইচ্ছে থাকলও সুযোগ নেই। পিঠের উপর বিশাল এক কুঁজ, এরকম মানুষকে কাজে ডাকবে কে?

অনেক চেষ্টায় কুঁজো দুদু একটি কাজ পেয়েছে। পানের বরজ বান্ধার কাজ। বেতন অন্যদের তুলনায় অর্ধেক।নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে কাজ সে অন্যদের চেয়ে বেশি কাজ করে কিন্তু মহাজনের সেদিকে নজর নেই, দুদুর পিছনের কুঁজটা মহাজনের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কুঁজোকে সে কাজ দিয়েছে বলে সবার কাছে ভাল মানুষ সাজতে পারে আবার বেতনও কম দিয়ে পারে। কুঁজো এসব বিশ্লেষণে যায় না, দিনশেষে ঐ সামান্য টাকাটা তার প্রয়োজন। ছেলেগুলো এখনো কাজ করার মত বড় হয়নি, মেয়েটা বিয়ের যোগ্য হল বলে, মেয়েটা সবার বড়। বড় দুই ছেলে কিছুদিন স্কুলে গিয়ে আর যায় না। ছোট দুটো এখনো ছোট।

বেশকিছুদিন ধরে কুঁজো অসুস্থ, কাজে যেতে পারছে না। নিজের বদলে বউকে পাঠিয়েছে কাজে। মেয়েটা রান্নাবান্না এবং তাকে দেখাশুনার কাজ করে। ছোট ছেলেদুটো আলেডালে ঘুরে বেড়ায়। বড় দুটো নিজেদের ইচ্ছেমত কিছু কাজ করে। কখনো ডোবা নালা থেকে টাকি মাছ ধরে আনে, কখনো কারো ক্ষেত থেকে একটা বাঁধা কপি তুলে আনে। কুঁজো কিছু বলে না। বলে কী হবে? বরং জ্যান্ত টাকি মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার সময় ছেলেদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয় সে। ছেলেরা যে শুধুমাত্র এটা ওটা নিয়ে বাড়ি ফেরে তা নয়, কখনো মার খেয়ে চোখমুখ ফুলিয়ে আসে, কখনো মার দিয়ে আসে। এভাবেই চলছে।

ধীরে ধীরে কুঁজো সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফেরে। এখন দুজনেই বরজ বান্ধার কাজ করে। দুজনে মিলে একজনের বেতন পায়। ছেলেগুলো সব বড় হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকের খোরাক বেড়েছে। পাঁচ কেজি চাল আনলে এক দিনেই শেষ হয়ে যায়। কুঁজোর বউ সবাইকে ভাগ করে ভাত খেতে দেয়। শুকনো মরিচ পোড়াও কেউ আস্ত একটা পায় না। সকালে অর্ধেক শুকনো মরিচ আর একটা কাচা টমেটো ভাতে, এই হল বরাদ্দ। বাড়তি হিসেবে কখনো কখনো আলু ভর্ত মেলে। দুপুরে খেসাড়ির ডাল, সাথে কুড়িয়ে আনা শাকপাতা কিছু একটা থাকেই। ছেলেগুলোর কল্যাণ্যে কোন না কোন মাছও ইদানিং জুটে যাচ্ছে। ঝামেলা বাঁধে মাছ রান্না করা নিয়ে। মাছ রান্না করতে তো কিছু তেল মসলা লাগে। কুঁজোর বউ ছোট ছেলেটাকে পাঠায় তেল কিনতে, এক মাইল হেঁটে গিয়ে দুই টাকার তেল কিনে নিয়ে আসে উমেষ। ছোট ছোট পায়ে হেঁটে গিয়ে ফিরতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। ছেলে দেরি করে ফিরলে কুঁজোর বউ অস্থির হয় না। মরে বেঁচে যাদের জীবন হারানোর ভয়ে তারা ভীত নয়। ছেলেটা পথে পথে দেরি করে। দাঁড়িয়ে থাকে, দেখে, সামনে লাথি মারার কিছু পেলে লাথি মারতে থাকে। গড়িয়ে নিচে পড়লে খুটে এনে আবার লাথি মারে। একদিন তো তেলের শিশিটাই হাত দিয়ে ছিটকে গিয়েছিল। গাছের সাথে বাড়ি লেগে কাঁচের শিশি ভেঙে সবে তেল পড়ে গিয়েছিল সেদিন। সেদিন সারাদিন আর বাড়ি ফেরেনি উমেষ। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গিয়েছিল গেয়াতি ভিটের বাঁশ ঝাড়ে।

কুঁজো ছেলে মেয়েদের নাম মিলিয়ে রেখেছে- রমেশ, দিনেশ, হৃশিকেষ, উমেষ। মেয়েটির নাম রেখেছিল জাহ্নবী। সবাই এখন জানু বলে ডাকে। গরীবের ছেলে মেয়ের পুরো নাম ধরে কেউ ডাকে না। বিকৃত করার মধ্যে মানুষের আনন্দ আছে।গরীবের বেলায় সুযোগটা কেউ ছাড়তে চায় না।

জাহ্নবীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলের ধানের ক্ষেতে বিষ ছিটানোর মেশিন আছে। মটরের মেশিনআলা ছেলে মেয়ে পছন্দ করেছে, কুঁজো খুব আহলাদিত, আনন্দিত হয়, সবাইকে বলে বেড়ায়।নগদ দশ হাজার টাকা যৌতুক দিতে হবে। গয়নাও দিতে হবে কিছু। আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশী ডেকে একেবারে না খাওয়ালেও তো হয় না। দশ কাঠা জমি বিক্রীর সিদ্ধান্ত নেয় সে। গ্রামে জমি কেনার লোক আছে। পান ব্যবসায়ী সোমনাথ কুঁজোর জমিটা কিনে নেয়। পঁচিশ হাজার টাকায় জমি বিক্রী হয়েছে। স্টাম্পে চুক্তি করে নেওয়া হয়েছে। বিয়ের ঝামেলা শেষ হলে কুঁজো জমি রেজেস্ট্রি করে দেবে।

বিয়েটা শেষ হয়েছে। বর গাড়ি নিয়ে বিয়ে করতে এসেছিল -কুঁজো সুযোগ পেলেই তা বলে। “বেঁচে গেলাম, সুপাত্রে কণ্যাদান করেছি।” মাঝে মাঝে ছেলে ছোকড়াদের ডেকে বলে, “গাড়িটা কয় সিটের ছিল তোদের কি মনে আছে।” ওরা তাচ্ছিল্ল করে। কুঁজো হাল ছাড়ে না, বলে, বায়ান্নো সিটের গাড়ি খুব একটা কেউ নিয়ে আসে না।

মেয়েটা মাঝে মাঝে আসে, কিছু না কিছু নিয়ে আসে। মা-বাবা এবং ভাইয়েরা সবাই খুশি হয়। ও এসে বলে, তোমার জামাই পাঠিয়েছে, যদিও গাছের একটি পেয়ারা নিয়ে আসলেও শাশুড়ীকে হিসেব দিতে হয়। একবার মাকে পূজোয় নিজের কিছুদিন পরা একটা শাড়ী দিয়ে আবার ফেরৎ নিতে হয়েছিল। মাকে সেবার বলেছিল, তোমার জামাই পুরোন শাড়ী দেওয়াতে রাগ করেছে। এটা ফেরৎ নিয়ে যেতে বলেছে। ও নতুন শাড়ী কিনে দেবে। ছয় মাস কেটে গিয়েছে। মাকে নতুন শাড়ী কিনে দিতে পারেনি। মা সামনে আসলে ওর এখন লজ্জা করে।

কুঁজো এখন মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়। দেখাশুনোরও কেউ নেই। মেয়েটার বিয়ের পর থেকে সে অনেক অসহায় বোধ করে। মেয়েটা তার অনেক যত্ন নিত। বউয়ের দোষ দেয় না। বউ করবে কী? তাকেও তো ঘরে বাইরে খেটে মরতে হয়। ছোট ছেলেটাও আর ছোট নেই। পড়াশুনা কেউ-ই করেনি। প্রাইমারি স্কুলের বেশি কেউ শেষ করেত পারেনি। বড় ছেলেটা বড় হয়েছে। কুঁজো তাকে বরজ বান্ধার কাজ শিখতে বলেছিল। সে সেদিকে যায়নি। পনেরো কাঠার একটি ভিটে আছে। ছড়ানো ছিটানো কয়েকটি গাছ রয়েছে সেখানে, ও দিয়ে কোন আয় অাসে না, শুধু শুধু পনেরো কাঠা জমি পড়ে আছে। রমেশ জায়গাটি ঠিক করার উদ্যোগ নেয়। কুঁজো কিছু বলে না। সেও মনে মনে ছেলের উপর নির্ভর করতে চাইছে।

রমেশ শক্ত সমর্থ এবং কর্মপটু হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে সে সমস্ত ঝোপ ঝাড় গাছপালা কেটে জায়গাটি ঠিক করে ফেলেছে। প্রচুর জ্বালানী কাঠ হয়েছে। কুঁজোর বউ ওগুলো টেনে টেনে বাড়ি আনে। সারাজীবন সে কাঠের কষ্ট করেছে, জায়গার ভবিষ্যত হিসেব করার চেয়ে এই জ্বালানী কাঠগুলোই বরং তাকে এ মুহূর্তে অনেক বেশি স্বস্তি দিচ্ছে। রমেশ আখের চাষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ধারকর্জ করে কিছু টাকা জোগাড় করে চাষাবাদের কাজ করে, চারা কেনে। আখ খেতে বেড়া দিতে হয়, খেয়াল রাখতে হয় অনেক বেশি। ছোট ভাইদের নিয়ে, ধমকিয়ে, মেরে আখ ক্ষেতের পরিচর্যার কাজে সাথে নেয়। বাড়ির কাজই তার ধ্যান জ্ঞান, দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সে এখন যুবক। তাঁর চলাফেরা দেখে মনে হয় পৃথিবীতে নারী জাতি নামক কোন প্রাণি বসবাস করে তা সে জানেই না।

প্রথম বছর আখ ক্ষেতে খুব বেশি লাভ না হলেও লস হয়নি। কুঁজোও আবার সুস্থ হয়ে উঠেছে। ছেলেরা সবাই কর্মক্ষম হওয়ায় তার কিছু অবসর মিলেছে। পরপর তিন বছর আখ ক্ষেত করছে রমেশ। দ্বীতিয় বছর ভাল লাভ হয়েছে। তৃতীয় বছর রোগ লেগে সব লাল হয়ে যায়। কোনভাবেই ঠেকানো গেল না। পুরো ক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে যায়। পরিবারটির মাথায় বাড়ি পড়ে। আখ বেঁচে দশ পনেরো হাজার টাকা হবে আশা করেছিল। এখন কী হবে?

ছোটরা অতটা মালুম করে না। খেয়ে না খেয়ে খেলেধুলে বেড়ায়। কখনো বাধ্য হলে কিছু কাজ করে। দিনেশ কারেন্টের কাজ শিখছে, বাড়ি আসে না খুব একটা। কুঁজোও খুব একটা গা করে না । ছেলের উপর ভার দিয়ে সে নিশ্চিন্ত থাকতে চায়। দুপুরে বাপ-ছেলে আখ ক্ষেতে ঘোরাঘুরি করছিল। হিসেব করছিল ক্ষেতে কম খরচে নতুন করে কিছু করা যায় কিনা? অদূরে একটি চিংড়ি মাছের ঘের রয়েছে। ঘেরের পাড়ে পেঁপে গাছ, দূর থেকে লাল একটি পেঁপে দেখতে পেয়ে রমেশ এগিয়ে যায়, কুঁজো পিছে পিছে যায়। মাঠে বসেই দাও দিয়ে খণ্ড খণ্ড করে কেটে পেঁপেটি খেয়ে নেয় বাপ-ছেলেয়। হঠাৎ ঘেরের মাছের দিকে রমেশের চোখ পড়ে। বাপ-ছেলেয় চোখাচুখি করে। কেউ কিছু বলে না, তবে উভয়ের উদ্দেশ্য বিনা বাক্যব্যয়ে একত্রিত হয়।

রমেশ ও কুঁজো মিলে মাছ চুরি করতে যায়। পয়ান ছেড়ে দিয়ে সেখানে একটি চাঁই পেতে দেয়। কিছুক্ষণ পর পর চাঁই থেকে বালতিতে মাছ সরিয়ে নেয়। ঘেরের মালিকের বাড়ি কাছেই হওয়ায় স্থায়ীভাবে সে ঘেরে পাহারা বসায়নি। মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়। রাসকীর্তন চলছিল সেদিন। কুঁজো খোঁজ নিয়ে জেনেছে, ঘেরের মালিক গান শুনতে গিয়েছে, তাই নিশ্চিন্তে বালতিতে মাছ ভরতে থাকে বাপ-ছেলেয়।

গান শুনতে গেলে কী আর গানে মন বসে, সলীল তিন ব্যাটারীর টর্চ লাইট মারতে মারতে মাঝ রাতে ঘেরে আসে। টানা লাইট মারে। টর্চ লাইটের মাথায় পড়ে যায় বাপ-ছেলে। লাইটের আলোয় দুদুর পিঠের কুঁজটা চকচক করে ওঠে। হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় ওরা। লজ্জিয় ওদের মাথা হ্যাট হয়, খুব নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় গেরস্থও লজ্জিত হয়|

পরের দিন সালিশ বসে। সালিশে ক্ষমা চাইতে হয় তাঁদের, কুঁজো শুধু ক্ষমা চেয়ে পার পায়। রমেশের উপর কয়েক ঘা পড়ে। পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সলীল এটাই চেয়েছিল । পাকা বৈষয়িক সে, মার দিয়ে তাঁর কোন লাভ নেই। মাছ সে হাতে নাতেই ধরেছে, বালতির সব মাছ ঘেরে তৎক্ষণাত ঢেলে দিয়েছল। সে কথা সালিশে বলে নাই। বলেছে, মাছ ধরে ধরে বাড়ি পাঠিছে ওরা, ঘেরের অর্ধেক মাছ ধরে নিয়ে গেছে।

পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হওয়ায় সে উষ্মা প্রকাশ করে, মনে মনে খুশি হয়। সালিশে প্রথমে মাছ উদ্ধারের কথা বলা হয়েছিল। সলীল অস্বীকৃতি জানায়। বলে, ঐ মাছ নিয়ে আমি কী করব। তাছাড়া সে প্রমাণ করে ছেড়েছে যে, মাছগুলো ওরা নিয়ে নিজেদের নালায় ফেলেছে। বিশ-পঁচিশটা মাছ নিজেই সে এক ফাঁকে ওদের নালায় ফেলে এসেছিল। জাল খ্যাপ দিলে ওগুলোই উঠে আসে। পরিমাণ বিচার করার প্রয়োজন পড়ে না। সত্যতা মিলেছে বলে রায় অনেক সহজ হয়ে যায়।

হাতেনাতে ধরা পড়েছে, কিছুই করার থাকে না ওদের। তীব্র অপমানে মাথা নিচু করে কুঁজো বাড়ি ফেরে। রমেশ কোথায় জানো চলে যায়। তিন দিনের মধ্যে টাকা শোধ করতে হবে। রমেশ অপমানিত হওয়ার সময় পায় না। তাকেই টাকা ম্যানেজ করতে হবে। পরিবারটি টিকিয়ে রাখার ভার যে এখন তার উপর একথা সে অবচেতনে বুঝে নিয়েছে। পরিবাররের দায়িত্ব অর্পণ করতে হয় না, এমনি এমনিই ঘাড়ের উপর এসে পড়ে। রমেশ বোনের বাড়িতে যায়, বোনকে সবকিছু খুলে বলে না, বোনের একটি সোনার চেন ছিল, ওটি নিয়ে আসে। মায়ের এপেন্ডিক্সের অপারেশনের কথা বলায় জাহ্নবী পরিণতি না ভেবে চেনটি ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। রমেশ চেনটি নিয়ে সোজা জেলা সদরের স্বর্ণকার পট্টিতে চলে যায়। সাড়ে চার হাজার টাকায় চেনটি বিক্রী হয়। বিয়ের সময় মায়ের গয়না ভেঙে চেনটি বানিয়ে জাহ্নবিকে দেওয়া হয়েছিল। চেনটি বেঁচতে ওর খুব কষ্ট হয়েছে। কষ্ট বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নির্যাতিতরা পুরনো কষ্ট ভোলে নতুন কষ্ট হাজির হওয়ায়। আরো পাঁচশো টাকা জোগাড় করতে হবে। ছোট ভাইয়ের কাছে হাত পাতে। বিষয়টি দিনেশের কাছে গোপন নেই। সে কটাক্ষ করে, “চুরি করতে গিয়ে ধরা খাইছিস! টাকা না হয় দিলি, মুখ রক্ষা হবে কী করে? তোর জন্য আমরা সবাই ডুবলাম” পরিবারের কোন দায়িত্ব সে নেয় না, কিন্তু সুযোগ পেলে কথা শুনিয়ে দেয়। চরম তাচ্ছিল্লে রমেশকে পাঁচশো টাকা দেয়। টাকাটা চেয়ারম্যানের কাছে বুঝে দিয়ে রমেশ হাফ ছেড়ে বাঁচে। চেয়ারম্যান দুই হাজার টাকা নিজে রাখে, দুই হাজার টাকা সলীলকে দেয়, এক হাজার টাকা মেম্বারকে দেয় সালিশের দিনের খরচ বাবদ। খরচ বড়জোর দুইশো টাকা হয়েছিল। এভাবেই গরীবের ‘রক্ত বেঁচা’ টাকা দিয়ে ওদের বাড়িতে মাঝে মহোৎসব হয়।

রমেশ ক্ষেতে এবার ওলকপি লাগিয়েছে। খুব ভাল ফলন হয়েছে। এবার দামও আছে। ওদিকে দিনেশ ইলেকট্রিকের কাজ করে ভালই উপার্জন করে। বাড়ি কিছু দেয় না।

আজকে হঠাৎ একটা স্যালো মেশিন কিনে হাজির করেছে। মেশিনটি দেখে কুঁজো হাসি চেপে রাখতে পারে না। বাড়িতে মটরের কোন মেশিন সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না। তাঁর দুঃস্বপ্ন সত্যি হয়েছে। গর্বে দিনেশের বুক উঁচু হয়। প্রথম দিনেই নালাটা সেচে মাছ ধারার উদ্যোগ নেয়ওরা। ভালই মাছ মেলে- কৈ, সোল, টেংরা-পুঁটি নানান জাতের দেশি মাছ পাওয়া যায়। কুঁজোর বউ ওগুলো বাড়ি এনে মাটির ঠিলে-কলশিতে জিইয়ে রাখে।

স্যালো মেশিনটায় অনেক কাজ হয়। অন্যের জমিতে সেচ দিয়ে আয় হয়। নিজেদের ক্ষেতে পানি দেয়। প্রতিবেশীর সাথে ওদের একটা সম্মানের যোগাযোগও তৈরি হয়েছে। এখন কুঁজোও কাউকে ‘না’ বলতে পারছে। “মেশিন ভাল নেই, দেওয়া যাবে না। যাও যাও, এই ভাড়ায় হবে না। আগে কিছু টাকা লাগবে, না হলে হবে না।” ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ‘না’ বলার সুযোগ পেয়ে কুঁজো সম্মানিত বোধ করে। এতদিন সে-ই শুধু প্রত্যাখ্যাত হয়ে এসেছে। প্রত্যাখ্যান ছোট্ট কোন সুযোগ পেলেও এখন সে তা ছাড়বে কেন। মানুষ মাত্রেই প্রতিশোধপরায়ণ, কেউ অন্যকে ছোট করে প্রতিশোধ নেয়, কিউ নিজে বড় হয়ে প্রতিশোধ নেয়, যাদের ছোট করার বা বড় হওয়ার সুযোগ নেই তারা কুঁজোর মত এমন ছোট কোন উপলক্ষ্যের অপেক্ষায় থাকে আজীবন।

এবার ওরা ধানে কীটনাশক দেওয়ার একটি মেশিন কেনে। রমেশে ওটি পিঠে নিয়ে ভোঁ ভোঁ করে অন্যের ক্ষেতে ওষুধ ছিটিয়ে দেয়। ট্যাংকি প্রতি দশ টাকা করে পায়। শুধু মেশিন ভাড়া দিলে ট্যাংকি প্রতি আট টাকা, নিজে দিয়ে দিলে দশ টাকা। রমেশ সাধারণত শুধু মেশিন ছাড়তে চায় না, সাথে যখন যেতেই হয় তখন ছিটিয়ে দেওয়ায় ভাল। সময়টা কাজে লাগে দুইটাকা আয় বেশি হয়। সমস্যা হচ্ছে, টাকা বাকি পড়ে যায়, দশ টাকা বিশ টাকা করে করে অনেক টাকা বাকী পড়ে আছে।

মেশিনে তেল লাগে, মাঝে মাঝে নষ্ট হয়। হঠাৎই পরিবারে আবার একটা মন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। আগের তুলনায় অনেক ভাল চলছে, তবে গত বছর দুই যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিল তা আর এ বছর হচ্ছে না।

হৃশিকেষ এবং উমেষও বড় হয়েছে। তবে তারা সহজে কাজে হাত দেয় না। উল্টোপাল্টা খেলাধুলা করেই তাদের সময় কাটে। মাথার উপর দুই ভাই আছে বলে কোনকিছুতে খুব একটা মাথা ঘামাতে হয় না ওদের।

কুঁজোর বউ খুব কড়া মানুষ। এভাবে সে চলতে দিতে চায় না। কাজ না করলে ছোট ছেলেদুটির ভাত বন্ধ করে দেয়। ছেলে দুটি মাকে গালাগাল করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। একটা গালি প্রায়ই ওরা ওদের মাকে দিত- “তোর মায়রে …”

প্রায়ই ওরা দুমড়ো নারকেল চিবোতো। কারো গাছ থেকে পেড়ে এনে ঐ সারাদিন খেত।
এরকম চলতে চলতে ছোট ভাই দুটোও একসময় কাজে মন দেয়। চার ভাই কাজ করায় সংসারে স্বচ্ছলতা আসে। কুঁজো এখন আর কোন কাজ করে না। কোন মাতব্বরীর সুযোগ তার নেই। একেতো কুঁজো তার উপর এখনো লোকে তারে আড়ালে চোর বলে।

কুঁজো এখন সাদা ধুতি পরে মেয়ে বাড়ি যায়। ভ্যানে করে মেয়ে বাড়ি থেকে আসে। মেয়ে বাড়ি থেকে আসার সময় এর আগে কোনদিন সে ভ্যানে ওঠেনি। তিন মাইল পথ টুক টুক করে হেঁটে আসত।

পরের ঘেরে মাছ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল, একথা রমেশ ভুলতে পারে না। তখনই সে একটা মাছের ঘের করবে বলে ভেবেছিল। ভাইদের সাথে আলোচনা করে। সবাই একমত হয়। নিজেদের দুই বিঘা জমির সাথে আরো এক বিঘা জমি কিনে নেয়। তিন বিঘা জমিতে ঘের কাটে। নিজেরা কাজ করে, ফলে ঘের বানাতে খরচ অনেক কম হয়। ঘেরের পাড়ে দুই সারি নারকেল গাছ লাগিয়ে দেয়।

ঘের থেকে এখন ভাল আয় আসে। মেশিনগুলো এখন আর নেই। দিনেশও ভাল আয় করে। বাড়িতেও আয় বেড়েছে। মেশিনের ব্যবসাটা এখন দেখাদেখি অন্য প্রতিবেশিরা করে। সেই ভিটেটাতে রমেশ সুপারী বাগান করে রেখেছে। গাছগুলো বড়ও হয়েছে। আর দু’এক বছর পরে ফল ধরবে। সুপারীর ভাল দাম আছে। পরিবারে স্বচ্ছলতা আসায় ওরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় যেতে পেরেছে। গাছগুলো বড় হলে বাগানটি থেকে এমনি এমনিই বিশ পঁচিশ হাজার টাকা আয় হবে। কিছু করতে হবে না।

ঘের করাটাই এখন ওদের প্রধান কাজ। তিন ভাই বাড়িতে থাকে। ছোট দুই ভাইয়ের এখনো খেলার নেশা আছে। ওদের সবসময় কাজে পাওয়া যায়। রমেশ সারাক্ষণ কাজ করে। একাই সামলে রেখেছে মাছের ঘেরটি। মাছ চুরি যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ঘেরেই থাকে সে।

বয়স ওর পয়ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের প্রস্তাব না আসা পর্যন্ত বাপ-মা ওর বিয়ের কথা ভাবেনি। প্রথম প্রস্তাবেই বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও রমেশ একই প্রকার থাকে। কাজের ধরনও কিছু বদলায় না। এখনো ঘেরে থাকে। ওকে দেখে সবাই অবাক হয়। বাড়িতে সবসময় ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। পরিবারে স্বচ্ছলতা বেড়েছে, একইসাথে ঝগড়াঝাটির উপলক্ষও বেড়েছে। ঘেরের প্রথম বছরের আয় পুরোটাই দিনেশ নিয়েছে। মেশিন কেনার বিনিময়ে সে নিয়েছে।

এ বছর অবশ্য দিনেশ কিছু নেবে না। প্রথম বছরের অতিরিক্ত খাঁটুনিতে রমেশ নাজেহাল, এ বছর কাজে এঁটে উঠতে পারছে না। জায়গা জমি পুকুর, এসব এমনি এমনি কিছু দেয় না, খেটেখুটে আয় বের করতে হয়। ছোট দুই ভাইকে টেলিভিশন কেনার লোভ দেখায়, এতে কাজ হয়, ওরে রমেশের সাথে উদয়-অস্ত ঘেরে কাজ করে। ঘেরের মাঝখানের জমিতে ইরি ধানের চাষ হয়। নারকেল গাছের ফাঁকে ফাঁকে লাউ গাছ লাগিয়ে ঘেরের উপর মাচা করে দেওয়া হয়েছে। অভাব ওদের শিখিয়েছে কীভাবে জমিনের পুরোটা কাজে লাগাতে হয়।

ভাল আয় হয়। ব্যাংকে টাকা রাখার কোন বিষয় নেই। আয়ব্যয়ই ওদের জীবন। টেলিভিশন কিনেছে। ভাল ভাল বাজার করে ওরা এখন, জীবনে একটু আড়ম্বর এসেছে।
রমেশের একটি মেয়ে হয়েছে। মনে মনে আনন্দিত হলেও কাউকে সে কিছু বলে না। কিছু বলতে সে জানেও না। মেয়েকে ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু মেয়ের সাথে কথা বলে না। প্রয়োজন ছাড়া রমেশে কথা বলে না, কারো সাথে না, বউয়ের সাথেও না।

তৃতীয় বছর থেকে ঘেরের কড়াক্রান্তি হিসেব। আয় মোট পাঁচভাগ হবে। কুঁজো এবং ওদের মা পাবে এক ভাগ, চার ভাইয়ের চার ভাগ। সবকিছুই এখন এভাবে ভাগ হয়। ছোট দুটোর বিয়ে না হওয়ায় ওরা ভাগ বাটোয়ারায় যায় না। মাঝে মাঝে কিছু হাত খরচের টাকা পেলেই খুশি। দিনেশ শুধু ভাগ নিতে আসে। ইতিমধ্যে সে বিয়েও করেছে। খাটাখাটনি রমেশেই সব করে, সে হিসেব ভাইয়েরা করে না, সেও কিছু বলে না।

তিন বছরে ঘেরটা বুজে এসেছে। কিছু মাটি তুলতে হবে। দিনেশ তার ভাগের মাটি লোক রেখে তুলবে। রমেশ লোক রাখতে যায় না। সে ছোট ভাইদের নিয়ে কাজ করে। বেলা পড়তেই হৃশিকেষ এবং উমেশ হাত ব্যাথা করছে পা ব্যাথ্যা করছে বলে চলে যায়। রমেশ রাত দশট পর্যন্ত কাজ করে চলে।

আজকে শরীরটা ভাল লাগছে না। মাঝে মাঝে বুকে ব্যাথ্যা করছে। তবু কাজ করতে থাক। একসময় আর পেরে ওঠে না, কোদালে ঠেস দিয়ে বুক চেপে বসে থাকে। হাত-পা ধুয়ে কোনমতে বাড়ি পর্যন্ত ফিরতে পারে। এসে খাটের উপর পড়ে যায়। খানিক দূরে একটা ওষুধের দোকান আছে, দোকানদারই ডাক্তার। বউ দৌঁড়ে গিয়ে তাকে ডেকে আনে। দোকানদার বাজে কম্পানির কয়েকটা গ্যাসের ওষুধ খাইয়ে দেয়, আরো কয়েকটা ওষুধ খেতে দেয়। এর মধ্যে রমেশ একবার জল খেতে চেয়েছে। জোরে জোরে দুইবার বুক ওঠানাম করেছে। দিনেশ এসেছে। উমেষ একটু পড়াশুনা বেশি জানে, ফাইভ পর্যন্ত পড়লেও তার সাধারণ ধারণাগুলো আছে। হাত টিপে ধরে কেঁদে ওঠে। তাঁর কান্না দেখে কেঁদে ওঠে ওরা সবাই। রমেশের মৃত্যু ঘোষিত হয়, যদিও তখনও সে মারা যায়নি। ঘণ্টাখানেক অচেতন দেহের উপর পড়ে পড়ে সবাই কাঁদতে থাকে। দোকানদার ওষুধের খোশাগুলো নীরাপদে সরিয়ে ফেলে। টাকাটা চেয়ে নিতেও সে ভোলে না।

হঠাৎ ও পাড়া থেকে শিক্ষিত ধীমান ঘোষ এসে রমেষকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে। সবাই একমত হয়। হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে ততক্ষণে রমেশ মারা গিয়েছে। মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। দ্রুত সৎকার হয়ে যায়।

কুঁজো লোকের সামনে কাঁদে না, সবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। রোজ ভোরবেলায় পাশের রাস্তা থেকে ভেসে আসে কান্নার আওয়াজ-
“রমেশ, আমার রমেশ, তুই চলে গেলি।” প্রতিটি দিনের হিসেব করে কুঁজো। কান্নার ফাঁকে ফাঁকে দিন গণনা করে। “আজকে দুই বছর চার মাস পাঁচিশ দিন হল তুই চলে গেলি।”


দিব্যেন্দু দ্বীপ

Next Post

বই কেনে কতজন? বই পড়ে কতজন?

চলছে অমর একুশে বইমেলা। যতই দিন বাড়ছে, ততই মানুষের ঢল বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হচ্ছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন— কতজন বই কিনছে? উত্তরটি পাওয়া খুব কঠিন নয়। একটু চোখ রাখলেই দেখা যাবে— গড়ে ৯০ভাগ মানুষই বই কিনছে না। তাহলে বাকিরা কী করছে? ঘোরাফেরা করছে, চটপটি-ফুচকা খাচ্ছে, সেলফি তুলছে। […]
লামিয়া