পথকাব্য: “এই যে সবকিছু বুঝতে পারি এটাই আমার সুখ”

বাগেরহাট

অনেকদিন ধরে একজন সাধু উসখুস করতেছেন আমাকে কিছু বুদ্ধি পরামর্শ দেবেন বলে। কিন্তু আমার কিছুতেই সময় হয় না। আসলেই তো সময় হয় না। কিছু সময় হলে সেটি তো ঈশপের জন্য বরাদ্দ থাকে।

যাইহোক, শেষপর্যন্ত গতকালকে তার সাথে বসলাম। কিছু অগোছালো খোস গল্পের পরে উনি আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন।

আমি প্রশ্নের উত্তর দেওয়াতে খুব মন্দ নই, বিব্রতও নই। তাই খুশিই হলাম।

জানতে চাইলেন—
তোমার দুঃখ কীসে?

বললাম,
এই যে সবকিছু বুঝতে পারি —এটাই আমার দুঃখ।

জানতে চাইলেন—
তোমার সুখ কীসে?

বললাম,
এই যে সবকিছু বুঝতে পারি —এটাই আমার সুখ।

বললেন,
উত্তর তো একই হলো!

বললাম,
নাহ! উত্তর একই হয়নি।

এরপর শুরু হলো ওনার জ্ঞান দেয়ার পালা—
বুঝতে পারলাম, এই লাইনে উনি খুব একটা সফল হতে পারেননি। ওনাকে আমাদের এলাকার পাগলা সাধু নামে এক বাটাপাড়ের কথা বললাম, উনি চিনতে পারলেন, মেনেও নিলেন যে, সে (পাগলা সাধু) সরাসরি ডাকাত-ধর্ষক-অসভ্য-বর্বর লোক না হলেও সাধু না হয়ে সেরকম কিছু হওয়ার সব সামার্থই তার ছিল।

যৌবনে এক নারীর হাত পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। তবে দূরে এই ডাকাতের কদর আছে। মুরিদ আছে তার। পায়ও বেশ। বাড়িতে মহোৎসব করেন, উদ্বৃত্ত যা থাকে বিক্রী করেন। একজন অস্থির ব্যবসায়ী থাইল্যান্ড গিয়ে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে যার জন্য, তা সে ম্যানেজ করে ঈশ্বরের দূত সেজে বিনামূল্যে, বরং উল্টে মূল্য পায়।

জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি পারবেন এমন? আমি ওনাকে বললাম, আপনি আসলে একজন ভালো প্রকৃতির মানুষ, ভালো মানুষকে এই যুগে সাধু হতে নেই, অতটা ছদ্মবেশী আপনি হতে পারবেন না, অতটা পাগল বা বিভ্রান্তও আপনাকে মনে হয় না।

আসেন, এসবের চেয়ে মানবিক প্রাকৃতির কিছু করি। মানুষই থাকি। মানুষ হয়ে জন্মে মানুষ থাকতে পারাটা একটা বিশার ব্যাপার।


দিব্যেন্দু দ্বীপ