আরো সুন্দর, নিষ্পাপ-নিষ্কলুষিত হয়ে রূপান্তর।
নাকি জন্ম-মৃত্যু শুধু চক্রাকার? অবশ্যম্ভাবী প্রাণান্তকর।
বরফ গলে পানি হয়, পানি বাষ্পে অদৃশ্য হয়
আবার ঠিকই পানি হয়, বরফ হয়।
ভয়ানক এক মানসিক ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি গত এক বছর ধরে। বানপ্রস্থে পেয়ে বসেছে হয়ত, তবু জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাস্তব জীবনে থেকে সবকিছু করতে, করছিও, কিন্তু মন ছুটে যায় দূরে কোথাও। এ এক ভয়ানক বৈপরিত্য।
প্রয়োজন অপ্রয়োজনে অনেককে ফোন করা দরকার, কিন্তু হয় না, মানুষ সম্পর্কে অজানা ভীতি তৈরি হয়েছে বোধহয়। খেতে হয় খাই, ঘুমোতে হয় ঘুমোই, রোবটের মত মা’র কথার জবাব দিই শুধু দায়িত্ব জ্ঞানে, অন্যক্ষেত্রেও তাই, যেখানে যেখানে ভালোবাসার মাসুল দিতে হয় দিয়ে যাই। যতটুকু যা স্বতস্ফুর্ততা, তা শুধু আমার ছোট্ট সন্তানটির সাথে।
জগৎজীবনের প্রতি আমার এই অনীহা বহুদিনের, সেটি শুধু প্রবল হয়েছে দিনে দিনে। জানি না, হয়ত এরকম অবস্থা থেকেই মানুষ একসময় সন্ন্যাস গ্রহণ করে, অথবা আত্মহত্যা করে। আমার ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই শুধু অতটা মহত্মা নিজের মধ্যে খুঁজে পাই না বলে।
ক্ষুদ্র মানুষ ছেড়ে যেতে পারে না কিছুই, আমিও পারি না, সবার পাওনা মেটাতে চাওয়াটাও বোধহয় এক ধরনের ক্ষুদ্রতা। দিন শেষে দেখি অজস্র ঋণ, দায়বদ্ধতা, এ এক ক্লান্তিকর অনুভূতি, নিজেকে দায়ী করার ভয়ানক অভ্যাস।
শিশুসন্তানের পেট নষ্ট, আমি দায়ী, অতটা বাদাম না খাওয়ালে পারতাম! মায়ের ঘুম নষ্ট, আমি দায়ী, ওষুধটা খেতে বলা হয়নি! বাড়িতে দিদিমা অসুস্থ, আমি দায়ী, দেড় বছর হল তাকে দেখতে যাই না! ছোট বোনের রেজাল্ট খারাপ, আমি দায়ী, দেখাশুনা করছি না ঠিকমত! ছোটভাই গোলমেলে, আমি দায়ী, আরো কিছু করতে হত বোধহয়! আত্মীয়দের চিকনগুনিয়া, আমি দায়ী, সাবধান করতে পারতাম সময়মত! প্রতিবেশীর মৃত্যু, আমি দায়ী, কিছু করণীয় ছিল সেখানে! নিজের জন্য তো প্রতি মুহূর্তে দায়ী।
এ জীবন, প্রাণবৈচিত্র, মহাকাল-মহাকাশ, মাঝে মাঝে যেন মাথার ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে …
যদি জন্ম হয় আবার ভুলগুলো শুধরে নেব,
যদি জন্ম হয় আবার
এই জীবনটাকেও সঙ্গে নেব।
যদি জন্ম হয় আবার পুরুষ হব না,
যদি জন্ম হয় আবার নারী হব না,
যদি জন্ম হয় আবার মানুষ হব না!
নাহ! আমি আর জন্মই নেব না।
মাটি হয়ে মিলিয়ে যাব …
লেখক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হওয়ায় এই লেখাটির লেখকের নাম প্রকাশ করা হল না।