জীবন বীমা মূলত একটি চুক্তি, যেটি বীমা প্রতিষ্ঠান এবং বীমা গ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির প্রধান দিক হচ্ছে—
বীমা প্রতিষ্ঠান এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা গ্রহীতার উত্তরাধিকারীকে প্রদান করবে। অর্থাৎ বীমা করা হয় মূলত নির্ভরশীলদের জন্য, উত্তরাধীকারদের জন্য। তবে চুক্তির শর্তানুসারে কখনো কখনো মারাত্মক অসুস্থ হলেও বীমা গ্রহীতা অর্থ পেয়ে থাকে।
বীমার হিসেবটি একটু কঠিন মনে হতে পারে কারো কারো কাছে, ফলে অনেকে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝে, আবার অনেক বীমা কোম্পানি আছে যাদের নিয়মের মধ্যে অনেক ফাঁক থাকে।
বিভ্রান্তি দূর করতে জীবন বীমার বিভিন্ন দিক নিয়ে মেটলাইফের ইউনিট ম্যানেজার নিখিল কুমার দাসের সাথে কথা বলেছেন ফলোআপনিউজ।
ফলোআপনিউজ: কেন কেউ বীমা করবে –এক কথায় যদি বলতেন।
নিখিল কুমার দাস: বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকে এবং অসংখ্য বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বীমা কোম্পানিগুলো মূলধন বৃদ্ধি করে। যেমন, মেটলাইফ শুধু ব্যক্তির বীমা করিয়ে থাকে, যেটি আবার তিন ধরনের–
১। জীবন বীমা; ২। শিশুদের শিক্ষা বীমা; ৩। পেনশন বীমা।
মূলত আর্থিক নিরাপত্তার জন্য মানুষ বীমা করবে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কোনো কারণে অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনায় পতিত হলে, এমনকি মারা যেতে পারে, তখন তার পরিবারে সমস্যা দেখা দেয়। বীমা করা থাকলে বীমা কোম্পানি শর্তানুযায়ী পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়। এমনকি দুই বছর পার হলে (প্রিমিয়ামের বয়স) আত্মহত্যাজনিত ক্ষতিপূরণও গ্রাহক পেয়ে থাকেন মেটলাইফে।
ফলোআপনিউজ: কতটুকু নিরাপত্তা দেয় কোম্পানি?
নিখিল কুমার দাস: ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ১ কোটি টাকার বীমা করা যায় মেটলাইফে। যিনি যতটুকু বীমা নিতে সমর্থ তিনি ততটুকু সহায়তা পাবেন। কেউ ১০ লক্ষ টাকার বীমা করলে মেয়াদের মধ্যে মারা গেলে ১০ লক্ষ টাকা পাবেন। অসুস্থতার জন্য নিয়মানুযায়ী সহায়তা পাবেন।
ফলোআপনিউজ: কারো সামার্থ বেশি থাকলে সে বীমা করবে কেন?
নিখিল কুমার দাস: আমরা মানুষের আয় দেখে সামার্থ বিবেচনা করি। আসলে যার আয় বেশি সে ব্যয়ও করে বেশি। ফলে বেশি আয় যে করে তারও নীরাপত্তাহীনতা আছে, তারও বীমা করার দরকার আছে।
ফলোআপনিউজ: মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেলে কী সুবিধা পায় বীমা গ্রহীতা?
নিখিল কুমার দাস: এক্ষেত্রে সে পুরো টাকাটা পায়। ইন্টারেস্টও যুক্ত হয়। বীমা করা হয় আসলে মেয়াদকালীন সমস্যার কথা চিন্তা করে। মেয়াদটাও তাই লম্বা হয় সাধারণত।
ফলোআপনিউজ: কম উপার্জনের মানুষের বীমা সুবিধা কীভাবে পাবে?
নিখিল কুমার দাস: ছোট অংকের মাসিক কিস্তিতে বীমা করতে পারে। এতে শুধু তার পারিবারীক নিরাপত্তা যে নিশ্চিত হয় তা শুধু নয়, ব্যাংকের মত টাকাও জমে। যেহেতু এই টাকাটা সহজে কেউ ভাঙতে চায় না, তাই পরিবারের জন্য জমা থাকে, মেয়াদ পুরে গেলে নির্ধারিত সুদসহ টাকাটা পায়। অবশ্য এটা সুদ নয়, কোম্পানির লাভের অংশ যার নাম বোনাস, মেয়াদ শেষে মুল টাকা ও বোনাস গ্রাহক পেয়ে থাকেন।
ফলোআপনিউজ: বীমা করে কারো লস হয় না?
নিখিল কুমার দাস: বীমা মূলত নিজের জন্য না। পরিবারের নির্ভরশীলদের জন্য এটা করা হয়। সন্তানরা উপকৃত হয়। চিকিৎসা বীমার মাধ্যমে ব্যক্তি উপকৃত হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিবছর চুক্তিঅনুযায়ী সামান্য টাকা (অফেরতযোগ্য) তাকে প্রদান করতে হয়। লস বলতে কারো হয়ত চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন হল না, কিন্তু কেউ না কেউ তো সহায়তা পাচ্ছে। তাই বীমা করে লস হয় না, কারণ, অসুস্থ মাঝে মাঝে সবাইই হয়।
ফলোআপনিউজ: আপনি কীভাবে মানুষকে বীমা করতে উৎসাহিত করেন?
নিখিল কুমার দাস: জীবনটা ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তা লাঘব করার জন্য বীমা করা হয়। কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকা যায়। তাছাড়া জীবিতকালীনও কোনো শারীরিক সমস্যা তৈরি হলে উপার্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে বীমা করা থাকলে সুবিধা হয়। বীমা কোম্পানি সহযোগিতা করতে পারে।
ফলোআপনিউজ: কোন শ্রেণির মানুষ বেশি বীমা করে আপনার অভিজ্ঞতায়?
নিখিল কুমার দাস: সাধারত বেসরকারি চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ীরা বেশি আগ্রহ দেখায়।
ফলোআপনিউজ: আপনারা কী পরিমাণ সুবিধা দিচ্ছেন প্রতি মাসে?
নিখিল কুমার দাস: গড়ে প্রতি মাসে ৩০০০ ক্লেইম ফয়সালা হচ্ছে মেটলাইফে।
ফলোআপনিউজ: ধন্যবাদ আপনাকে।
নিখিল কুমার দাস: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আসলে আর্থিক লাভ শুধু নয়, এক্ষেত্রে বীমা গ্রহীতার মানসিক প্রশান্তি একটি বড় বিষয়। বীমা করে তিনি “মানসিক প্রশান্তি” লাভ করেন; কারণ তিনি জানেন যে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা অর্থ সমস্যায় পতিত হবে না।