প্রশ্নফাঁসকারী ড্রাইভার আবেদ আলী কি পিএসসি-এর ১৩ তম চেয়ারম্যানের ড্রাইভার ছিলেন?

সুনামগঞ্জ-৪

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা বিপিএসসি-এর আলোচিত প্রশ্নফাঁসকারী ড্রাইভার আবেদ আলী কি বিপিএসসি-এর ড্রাইভার ছিলেন ড. মো: সাদিকের সময়ে?  ড. মো: সাদিক বিপিএসসি-এর ১৩ তম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০১৬ সালের ২ মে তারিখে। এর আগে ৩ নভেম্বর ২০১৪ হতে তিনি কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিপিএসসি-এর চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০১৭ সালে কবিতায় তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এরপর ২৬ নভেম্বর ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ড. মো: সাদিক বিসিএস ’৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, যিনি দেশে বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শিক্ষা সচিব এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদ ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। আমলাতন্ত্র, পিএসসি, সংস্কৃতি, রাজনীতি, কবিতা —কোথায় তার অবদান নেই?! প্রশ্ন উঠেছে চাকরিজনিত রুটিন ওয়ার্কের বাইরে আসলে তিনি কী করেছেন? প্রশ্ন উঠেছে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ স্তরে কাজ করে এসে আবার তিনি এমপি ইলেকশন করতে গেলেন কেন? প্রশ্ন উঠেছে আসলেই কি তিনি এলাকার মানুষকে সময় দিচ্ছেন? প্রশ্ন উঠেছে ২০১৭ সালে তার কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে। ফলে আলোচিত প্রশ্ন ফাঁসকারী ড্রাইভার আবেদ আলীর ড্রাইভার তিনি ছিলেন কিনা, সে প্রশ্নের চেয়ে জাতির কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ড. মো: সাদিকের জীবন, কর্ম এবং সম্পদের হিসেব সম্পর্কে জানা।

২০২৩ সালে রাজনীতিতে পদার্পণ প্রসঙ্গে এক নির্বাচনী জনসভায় ড. সাদিক বলেন, আমি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছি, আমি কামলা হতে এসেছি, জনসেবা করতে এসেছি। যদিও তার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এলাকার মানুষ তাকে পায় না আসলে। এলাকার সমস্যার সমাধানে তিনি তৎপর নন।

আবেদ আলী প্রসঙ্গে দৈনিক সমকালকে জনাব সাদিক বলেছেন,

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়ি চালক আবেদ আলী পিএসসিতে অনেক প্রভাবশালী ছিলো। তার প্রভাব এতোটাই ছিলো তাকে বরখাস্ত করার পর চাকরিচ্যুত করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে পিএসসির তৎকালীন দায়িত্বশীলদের।

ড. সাদিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি-সাহিত্যিকদের সংগঠন ‘সংহতি সাহিত্য পরিষদ’র আমন্ত্রণে গত পাঁচ জুলাই যুক্তরাজ্যে গেছেন। তিনি মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্যেই থাকবেন। সেখান থেকে মঙ্গলবার বিকেলে সমকালকে বলেন, ‘পিএসসিতে ২০১৪ সালের তিন নভেম্বর যখন যোগদান করি, তখনই গিয়ে ‘আবেদ আলী-আবেদ আলী’ নাম শুনেছি, কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়নি কখনো। এবার গণমাধ্যমে তার ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখেছি।’

যতদূর জানা যাচ্ছে এই আবেদ আলী বিপিএসসি-এর অষ্টম চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের ড্রাইভার ছিলেন। জিনাতুন নেসা তাহমিদা বিএনপি-এর সময়ের সেই বিতর্কিত চেয়ারম্যান। তিনি সঙ্গীত শিল্পী তাহসানের মা। জিনাতুন নেসার সময়ে ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষা দুইবার অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

২০১৩ সাল পর্যন্ত আবেদ আলী পিএসসিতে চাকরি করেন। ২০১৩ সালে পিএসসি-এর চেয়ারম্যান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইকরাম আহমেদ। ইকরাম আহমেদ আবেদ আলীর সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

অতএব, এটা নিশ্চিত যে, প্রশ্নফাঁসকারী ড্রাইভার আবেদ আলী সাদিক সাহেবের ড্রাইভার ছিলেন না। তবে অভিযুক্ত অনেকেই বহাল তবিয়তে পিএসসিতে চাকরি করেছেন। ফলে আবেদ আলীর ড্রাইভার থাকা না থাকাটা আসলে মূখ্য বিষয় নয় বলে মনে করছেন অনেকে। এতে বরং ঘটনার অনেক কিছু আড়াল হচ্ছে। এ বিষয়ে ফলোআপ নিউজ দু’জন শিক্ষাবিদের সাথে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষাবিদ বলেছেন, কোনো-না-কোনোভাবে পিএসসি উপর মহল এ অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো, না হলে বিচ্ছিন্নভাবে এমন ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটে চলতে পারে না।