মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদীতে ভেসে যাওয়া তরুণী গৃহবধূর পরিচয় মিলেছে। তার নাম রেবা বেগম। পারিবারিক বিরোধের কারণে শাশুড়ি আর নন্দাই (ননদের স্বামী) মিলে তার গলায় ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। রেবা মারা গেছে ভেবে তার মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে তাকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু, অলৌকিকভাবে কচুরিপানার ওপর ভেসে থাকায় তাকে উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরেই রেবার শাশুড়ি জুলেখা বেগম ও তার নন্দাই সরোয়ার হোসেন বেপারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাদারীপুরের কালকিনি থানার দক্ষিণ বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের পরিপত্তর গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। আহত রেবার শ্বশুরবাড়ি একই ইউনিয়নের উড়ারচর গ্রামে। তার স্বামীর নাম আক্তার হাওলাদার। তিনি মুন্সীগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তাদের সাত বছর বয়সী এক মেয়ে ও পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, গুরুতর আহত রেবাকে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। তার কণ্ঠনালী কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ওই গৃহবধূর পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার বিকেলে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ির পাশের দক্ষিণ বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের পরিপত্তর গ্রামের জামাই সরোয়ার হোসেন বেপারীর বাড়িতে রেবাকে নিয়ে যান তার শাশুড়ি জুলেখা বেগম। সেখানে রেবাকে হত্যার চক্রান্ত করেন জুলেখা। এজন্য তিনি তার জামাই সরোয়ার হোসেন বেপারীর সহায়তা নেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরোয়ার জুলেখাসহ আরও কয়েকজন মিলে রেবাকে বাড়ির পাশের আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে নিয়ে যান। সেখানে হঠাৎ করে সবাই মিলে রেবাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার গলায় ছুরি চালানো হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মৃত ভেবে দ্রুত নদীতে ফেলে দেয় জুলেখা সরোয়ারসহ অন্যরা। এ অবস্থায় রেবা কিছু কচুরি পানার ওপরে গিয়ে পড়েন। অপুষ্টিজনিত কারণে শরীর দুর্বল ও ওজন কম হওয়ায় অলৌকিকভাবে কচুরিপানার ওপরে ভেসে থাকেন তিনি। এ অবস্থায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ বাঁশগাড়ি লঞ্চঘাটের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ও স্থানীয়রা। তখন তাকে হাত-পা নাড়তে দেখে পুলিশ দ্রুত তাকে মাদরীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই নিজের পরিচয় ও গ্রামের ঠিকানা কোনও রকমে বলেন তিনি।
এদিকে, সরেজমিন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মাদারীপুর থেকে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রেবা বেগমকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হয়েছে। এ সময় রেবা বেগম গো গো করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন পুলিশ, ডাক্তার ও আশপাশের লোকজনকে। কিন্তু তার গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছিল না। পরে চিকিৎসকরা তার মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে দেন।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাহমুদ হোসাইন জানান, ওই তরুণীর শ্বাসনালীর অর্ধেক অংশ কাটা এবং অবস্থা গুরুতর বিধায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেবার পরিবার খুবই দরিদ্র। তার বাবা আবদুর হামিদ মাতবর খুবই অসুস্থ। গত ছয় মাস ধরে তিনি ঘরে শয্যাশায়ী। স্বামী বাড়িতে না থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রেবার সঙ্গে তার শাশুড়ির বিরোধ চলে আসছিল।
রেবার মা লালমতি বেগম জানান, বুধবার আছরের আগে তার মেয়েকে রেবাকে জুলেখা বেগম ছোট মেয়ের জামাই বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যায়। জামাই সরোয়ারের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কয়েকজন মিলে তার মেয়েকে জবাই করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তবে ঘাড়ের দুই পাশের রগ না কাটায় সে প্রাণে বেঁচে যায়।
রেবার মেয়ে ঝুমা জানায়, বুধবার লঞ্চে উঠে আমার মা আর দাদি বেড়াতে গেছে। সকাল বেলা পুলিশের কাছ থেকে আমরা খবর পাই।
কালকিনি থানার ওসি কৃপা সিন্দু বালা ও বাঁশগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আব্দুর রশিদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেবার শাশুড়ি বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের উড়ারচর গ্রামের মাজেদ হাওলাদারের স্ত্রী জুলেখা বেগম ও পাশের গ্রামের তার মেয়ে জামাই দক্ষিণ বাঁশগাড়ির পরিপত্তর গ্রামের সরোয়ার হোসেন বেপারীকে আটক করেছে পুলিশ। মূলত পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের নাম বলেছে রেবার শাশুড়ি জুলেখা বেগম।
খবর: বাংলাট্রিবিউন