ড. তাপস চন্দ্র পাল
অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্ষুদ্র চাকরিজীবির মাসিক আয়ের একটি ব্যবস্থা না থাকলে তার জন্য সংসার চালানো কঠিন। বাজারে গেলে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্যের দাম স্থিতিশীল থাকছে না, ফলে আমনতে সুদের হার এত কম হলে তা বাজারে মূল্য হারাচ্ছে।
শৈশব, কৈশোর, কর্মজীবন ও বার্ধক্য যেন একই সূত্রে গাঁথা। জীবনের প্রতিটি ধাপে সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ থাকে। এক সময় সকলকেই অবসরে যেতে হয়। কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় সারা জীবনের সঞ্চয়টুকুই (পেনশন) থাকে তার একমাত্র ভরসা। নিরাপদ বিনিয়োগ তার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিনিয়োগের একটি সহজ দিক হচ্ছে ব্যাংকে টাকা জমা রাখা। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকে সুদের হার এতটাই কম যে তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। বর্তমানে সঞ্চয়ী হিসেবে সুদের হার ২.৫% থেকে ৩%, স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) ৪% থেকে ৫%, মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পে মেয়াদভেদে ৭% থেকে ৮%। আমানতকারীদের জন্য সবচেয়ে ভালো সঞ্চয় প্রকল্প ছিল দিগুণ বৃদ্ধি আমানত, ২০১৩ সাল পর্যন্ত যা ৫ থেকে ৬ বছরে দিগুণ হয়েছে। বর্তমানে টাকা দিগুণ হতে দশ বছর লাগে। উল্লেখ্য যে, সঞ্চয় পত্রের সুদের হার এখনো ভালো তবে এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য স্থিতি রাখতে হয়। অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্ষুদ্র চাকরিজীবির মাসিক আয়ের একটি ব্যবস্থা না থাকলে তার জন্য সংসার চালানো কঠিন। বাজারে গেলে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্যের দাম স্থিতিশীল থাকছে না, ফলে আমনতে সুদের হার এত কম হলে তা বাজারে মূল্য হারাচ্ছে। বিদ্যমান মুদ্রাস্ফিতির সাথে তুলনা করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে গড় মূল্যস্ফিতি ৬ এর আশেপাশে থাকছে। সেক্ষেত্রে আমানতের সুদের হার ৫ বা তার কম হলে আমানতকারীর অর্জিত অর্থ মূল্য হারায়, এবং সে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। মূল্যস্ফিতি এবং আমানতের সুদের হারে একটি ভারসাম্য স্থাপিত না হলে, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবিরা নিরব বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
লেখক: Head of Finance, Mercantile Bank Limited